ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

পুনর্বাসন নিয়ে উদ্বিগ্ন বন্যার্তরা
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২:২১ এএম  (ভিজিট : ১৫০)
কারও ঘর ভেঙে পড়ে আছে। কারও ঘর আবার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকের মাটির ঘরের নিচে চাপা পড়েছে আসবাবপত্রসহ সবকিছু। নিচু এলাকায় এখনও পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ। ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব এসব লোকজন কোথায় থাকবে বা কার কাছে গিয়ে উঠবেন তারা তার কিছুই জানেন না। স্ত্রী-সন্তানরা আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের বাড়িতে, কেউবা আবার পরিবার নিয়ে রয়েছেন মসজিদের ছাদে। কীভাবে আবার নতুন করে ঘরবাড়ি তৈরি হবে, কীভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে তা নিয়ে যেন চিন্তার অন্ত নেই বন্যায় সব হারানো এসব মানুষের। সোমবার ফেনীতে সরেজমিন ঘুরে বন্যাদুর্গতদের মাঝে এসব চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।

ফেনীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বন্যার পানি কমে যাওয়ার পর ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। টিনের বাড়ি ও মাটির অধিকাংশ ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। নদীপাড়ের কিছু বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে নদীর মাঝে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার ফুলগাজী উপজেলায়।

সোমবার সরেজমিন দেখা গেছে, ফেনীর বিভিন্ন উপজেলায় বন্যার পানি নেমে গেছে। জেলার ফুলগাজী উপজেলার ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি বেশি লক্ষ্য করা গেছে। ফুলগাজীর দক্ষিণবড়ইয়া, বটতলার নদীর নিকটবর্তী অধিকাংশ মাটির বাড়ি ভেঙে পড়ে আছে, নদী তীরবর্তী অনেকের ঘরবাড়িও বিলীন হয়ে গেছে নদীগর্ভে। পরশুরাম উপজেলার বাউরখুমা তালুকপাড়া, বাউরপাথরসহ জেলার অন্যান্য এলাকায়ও ক্ষয়ক্ষতি লক্ষ্য করা গেছে। দাগনভূইয়া উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ এখনও পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বন্যায় তাদের বাড়িঘর সব বিলীন হয়ে গেছে। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও এখন নেই। পরিবারের নারী সদস্যদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বেশি। আত্মীয়স্বজনের বাড়ি বা মসজিদের ছাদে আশ্রয় নিয়েছে তারা।

ফুলগাজী উপজেলার দক্ষিণবড়ইয়া গ্রামের ফয়েজ উদ্দীন সময়ের আলোকে জানান, রাতের বেলা ঘরে শুয়েছিলেন। রাত ৪টা নাগাদ হঠাৎ জানতে পারেন বন্যার প্লাবনের কথা, কোনোমতে ঘর থেকে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বের হতে পারলেও ঘরের ভেতরেই থেকে যায় সব আসবাবপত্র। কিছুই নিতে পারেননি। স্ত্রী ও প্রাপ্তবয়স্ক দুই মেয়ে আশ্রয় নিয়েছে অন্যের বাড়িতে। আক্ষেপ করে ফয়েজ উদ্দীন বলেন, এর চেয়ে ঘরের ভেতরে থেকে মরে যাওয়াই ভালো ছিল, অনাহার আর থাকার কষ্টে থাকতে হতো না। এই বাড়িঘর ঠিক করার মতো কোনো সামর্থ্য আমার নেই, এখন আমি আমার পরিবারকে নিয়ে কোথায় উঠব।

পরশুরাম পৌরসভার তালুকপাড়ার বাসিন্দা বজলের রহমান পরিবারের ১২ সদস্য নিয়ে বসবাস করতেন একই বাড়িতে। বন্যার পানিতে তার মাটির ঘর ভেঙে গেছে। স্ত্রী-সন্তান আর নাতি-নাতনিদের নিয়ে এখন কাপড় দিয়ে ঘিরে রেখে কোনোমতে রাত পার করছেন। বজলের পুত্রবধূ বিউটি বেগম জানান, আমার স্বামী রঙের কাজ করতেন। দিন এনে দিন খেতাম। এখন তো কাজ নেই। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়াই করতে পারছি না। ঘর ওঠাব কোথা থেকে জানি না। আল্লাহ কবে তৌফিক দান করবেন তাও জানি না। ততদিন এই কাপড়ের ছাউনির নিচেই থাকতে হবে।

ফুলগাজী বড়ইয়ার বিধবা নাসিমা আক্তার জানেন না তার ছোট মেয়েকে নিয়ে কোথায় গিয়ে উঠবেন। কারণ বন্যার সময় তার বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিভিন্ন দিন বিভিন্ন জায়গায় সন্তান নিয়ে রাতযাপন করছেন। তিনি বলেন, খেতে পারছি না, মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। যদি মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই থাকত তা হলে হয়তো মেয়ের জন্য একটু খাবারের ব্যবস্থা করতে পারতাম, আমাদের এদিকে ত্রাণও আসে না যে একটু খেয়ে বাঁচব।

বন্যা পরিস্থিতির কারণে ফেনীর অধিকাংশ রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে, যার ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে জেলা বা উপজেলা শহর থেকে। স্থানীয়রা বলছেন, এদিকে গাড়ি-ঘোড়া না আসায় ত্রাণও আসে না। অনেকেই ঢাকা থেকে আসেন ত্রাণ দিতে জেলার সম্মুখভাগে ত্রাণ দিয়ে তারা চলে যায়, আমাদের ত্রাণ নিতে গেলেও যেতে হয় ৫-৭ কিলোমিটার দূরে।

জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার সময়ের আলোকে জানান, পুনর্বাসনের জন্য সরকারিভাবে টিম প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে কাজ করছে। সেগুলো মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে তারপর যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করা হবে। এ ছাড়া বেসরকারিভাবেও পুনর্বাসনে অনেকে এগিয়ে আসবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ফেনীতে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে বন্যার ক্ষতি। সরকারি হিসাবে জেলায় এ পর্যন্ত ২৮ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে জেলা প্রশাসন। তবে এ সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে ধারণা স্থানীয়দের।

সময়ের আলো/জেডআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close