ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

নিউইয়র্কে গোলাপের ৯ বাড়ি নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় দুদক
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১২:৪৯ এএম  (ভিজিট : ২৯৪)
মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি বাড়ি কেনাসহ অর্থ পাচারের অনুসন্ধান নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যুক্তরাষ্ট্রে আসলেই গোলাপের নামে বাড়ি রয়েছে কি না তা যাচাই-বাছাইয়ে ২০২৩ সালের ২০ জুন মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠায় দুদক। মাঝে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একাধিকবার তাগিদপত্র দিলেও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি। তবুও বিদেশ থেকে তথ্য আসার অপেক্ষায় আছে সংস্থাটি।

রাজধানীর আদাবর থানার গার্মেন্টসকর্মী রুবেল হত্যা মামলায় গত ২৫ আগস্ট রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়া থেকে গোলাপকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন গত ২৬ আগস্ট তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে সোমবার সকাল ৭টায় তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদাবর থানার পুলিশ পরিদর্শক মিন্টু চন্দ্র বণিক পুনরায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরও সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, গোলাপ প্রভাব বিস্তার করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ-সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। বিদেশেও গড়েছেন বিপুল সম্পদ। জিজ্ঞাসাবাদে দেশের অর্থ পাচারের সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট থাকার কথা স্বীকার করাসহ আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তিনি দিয়েছেন। তার দেওয়া তথ্য যাচাই করা হচ্ছে।  

অভিযোগ ছিল, গোলাপ নিউইয়র্কে মোট ৯টি প্রপার্টি বা সম্পত্তির (ফ্ল্যাট বা বাড়ি) মালিক। ওইসব সম্পত্তির মূল্য ৪০ লাখ ডলারের বেশি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৩ কোটি টাকা। অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করার পর দুদকের গঠিত বিশেষ টিম নথিপত্র তলবসহ কিছু নথিপত্র সংগ্রহ করলেও প্রকৃত তথ্য উদঘাটন করতে পারেনি। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচারের বিষয়টি প্রমাণ করা আপাতত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যদিও বিদেশে অর্থ পাচারের বাইরে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে তার বিরুদ্ধে নতুন করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আরও একটি অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।

আবদুস সোবহান গোলাপ ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মাদারীপুর-৩ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনি প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের পদ পান। অন্যের জমি দখল করে নিজ নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করার অভিযোগে গোলাপের বিরুদ্ধে চলতি বছরের জুনে পাঁচটি মামলা করেন পাঁচজন ভুক্তভোগী। তাদের অভিযোগ, সংসদ সদস্য থাকার সময় জোরজবরদস্তির প্রতিবাদ করলে হামলা ও মামলার ভয় দেখানো হয়। দেরিতে হলেও আদালতের কাছে ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা করছেন তারা। এ ছাড়াও কোটাবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশনা দেওয়ার মামলার আসামি তিনি।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচার ও বাড়ি থাকার বিষয়ে দুদকে দাখিল হওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আবদুস সোবহান গোলাপ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক এবং অন্য দেশে একাধিক বাড়ি কিনেছেন। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনি হলফনামায় এ তথ্য গোপন করেছেন। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। 

তথ্য অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বৈশক নেটওয়ার্ক ‘অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট’ বা ওসিসিআরপি তাদের ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ৪০ লাখ ডলার ব্যয়ে একাধিক বাড়ি কিনেছেন।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মো. আবদুস সোবহান মিয়া ২০১৪ সালে প্রথম নিউইয়র্কে অ্যাপার্টমেন্ট কেনা শুরু করেন। ওই বছর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস এলাকায় একটি সুউচ্চ ভবনে অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন তিনি। পরের পাঁচ বছরে তিনি নিউইয়র্কে একে একে মোট ৯টি প্রপার্টি বা সম্পত্তির  মালিক হন। এসব সম্পত্তির মূল্য ৪০ লাখ ডলারের বেশি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে মোহাম্মদ আবদুস সোবহান মিয়া জ্যাকসন হাইটসের একটি আলিশান ভবনে পাঁচটি কনডোমিনিয়াম কিনেছিলেন, ওই সময়ে যার দাম ছিল প্রায় ২ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ২৫ কোটি টাকা)। এর কাছাকাছি কয়েকটি ভবনে তিনি আরও তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন, যেগুলোর দাম ৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার (প্রায় ৭ কোটি টাকা)। আর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে জ্যাকসন হাইটসে আরও একটি সম্পত্তি কিনেছেন প্রায় ১ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলারে যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাড়ে ১২  কোটি। এসব সম্পত্তির সবই নগদ টাকায় কেনা হয়েছিল।

২০২৩ সালের ১৩ জানুয়ারি প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আশির দশকে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর মোহাম্মদ আবদুস  সোবহান মিয়া কম বেতনের কাজু পিৎজা তৈরি, ওষুধের দোকানে কাজ, লাইসেন্স ছাড়া ট্যাক্সি চালাতেন বলে জানিয়েছেন তার সহকর্মীরা। এসব কাজ থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে এভাবে অ্যাপার্টমেন্ট বা বাড়ি কেনা সম্ভব নয়। এসব সম্পত্তি কিনতে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাঠানো হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেননা, বাংলাদেশ থেকে সম্পত্তি কেনার জন্য বিদেশে অর্থ পাঠানোর সুযোগ নেই।

ওই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে এ বিষয়ে রিট দাখিল হলে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ আবদুস সোবহান মিয়ার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ৯টি বাড়ি কেনার বিষয়ে অনুসন্ধান করতে দুদককে নির্দেশ দেন।

দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, যেহেতু মূল অভিযোগ টাকা পাচার ও যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি কেনার। তাই ওই অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ে অবশ্যই বিদেশের তথ্য-উপাত্ত লাগবে। এ ছাড়া নিউইয়র্কে তার বাড়ির ঠিকানাসহ এমএলএআর পাঠানোর পর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। একাধিকবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে তাগিদপত্র দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে কী জবাব আসে তার জন্য অপেক্ষা করছে সংস্থাটি। 

গোলাপের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ নিয়েও নতুন করে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এখন দেশে তার কী কী সম্পদ পাওয়া যায়, সেটা অনুসন্ধান করা হবে।

দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াছমিন বলেন, আবদুস সোবহান গোলাপের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো হাতে পাওয়ার পর যাচাই-বাছাইসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাথমিক সত্যতা নিশ্চিত পেয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশে এবং দেশের বাইরে তার অবৈধ সম্পদের বিষয়ে বিষদ খোঁজ নিচ্ছে অনুসন্ধানী টিম।

সময়রে আলো/জেডআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close