প্রকাশ: সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৮:৫৩ পিএম আপডেট: ০২.০৯.২০২৪ ১০:৫২ পিএম (ভিজিট : ২৩১)
'বন্যায় সব হারিয়েছি। এখন কিভাবে জীবন যাপন করবো, জানি না। খেয়ে না খেয়ে পরিবারের লোকজন নিয়ে কোনমতে বেঁচে আছি। এই অনাহারে থাকার চেয়ে মৃত্যুও যেন ভালো ছিল।'
কান্নাজড়িত কণ্ঠে সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) বন্যায় বিলীন হওয়া নিজ বাড়ির সামনে কথাগুলো বলেন ফেনীর ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ বরইয়া গ্রামের দিনমজুর ফয়েজ আহমেদ। মানুষ কতটুকু কষ্টে থাকলে নিজের মৃত্যু কামনা করেন তা দিনমজুর ফয়েজ আহমেদকে না দেখলে বোঝা যেত না। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হলেও স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে জীবন যাপন করে নিজের মৃত্যু কামনা করছেন তিনি।
এদিন সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফয়েজের বসতবাড়ির পাশদিয়ে বয়ে গেছে মুহুরী নদী। বন্যাকবলিত রোধে নদীর বেড়িবাধ ভেঙে বন্যায় তলিয়ে গেছে ওই গ্রামের আশপাশের অনেক বাড়িঘর। জীবন রক্ষায় বন্যার্তদের অনেকেই অন্যত্র আশ্রয় নিলেও প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ায় কিছু শুকনা খাবার ছাড়া তাদের ভাগ্যে ভাত জুড়েনি। পানি কমে যাওয়ায় অনেকেই নিজ বাসস্থানে ফিরে আসলেও কর্মহীন হয়ে পড়ায় এখনো পর্যন্ত অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। কখন যে পূর্বের ন্যায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে স্বাভাবিকভাবে খাবার খেতে পারবেন তার কোন নিশ্চয়ইতা দেখতেছেনা।
বন্যায় আক্রান্ত হওয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে দিনমজুর ফয়েজ আবেগ আপ্লূত হয়ে সময়ের আলোকে জানান, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় গত ২২ আগস্ট বৃহস্পতিবার ভোর আনুমানিক ৪টার দিকে বন্যার পানি ঘরে ডুকে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে জীবন রক্ষায় সবাইকে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। ৩ দিন পর ফিরে এসে দেখেন যে, বসতবাড়ির সব কিছু তছনছ হয়ে যায়। এরপর প্রতিবেশীর ঘরে আশ্রয় নিয়ে থাকলেও কিছু শুকনো খাবার ছাড়া ভাত জোটেনি। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এসেছে মনে হচ্ছে ঘর থেকে বের না হয়ে বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেলে ভালো ছিল।
এদিকে ফেনীর পরশুরাম পৌরসভার বাউরখুমা তালুক পাড়া, বাউর পাথর ও ফুলগাজী উপজেলার দক্ষিণ বরইয়া, বটতলাসহ বিভিন্ন স্থানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ অনেক পরিবারের সাথে আলাপ করে জানা যায়, প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাস করায় তারা যথাযথ খাদ্য সহায়তা পাননি। ফলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনেকেই অনাহারে জীবন যাপন করছেন। অনেকেই খোলা আকাশের নিচে শুধুমাত্র পাতিলে আলু সিদ্ধ করছেন, আবার অনেকেই বাচ্ছাদের জন্য পানি গরম করছেন। এভাবেই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থরা মানবেতর জীবন যাপন করছে।
পরশুরামের বিধবা বিপুলা রানী জানিয়েছেন, প্রতিবন্ধী এক ছেলে নিয়ে সংসার। মানুষের ঘরে কাজ করে পরিবারের চাহিদা মেটাতেন তিনি। কিন্তু বন্যার কবলে পড়ে ঘর ভেঙে যাওয়ায় ছেলেকে নানার বাড়িতে পাঠিয়ে ভাংগা করে তিনি রাত্রীযাপন করছেন। কিন্ত কর্মহীন হয়ে পড়ায় কিছু শুকনো খাবার ছাড়া অনেকদিন অনাহারে অর্ধাহারে কাটাতে হয়েছে। ফলে ঘরের চুলায়ও অনেকদিন ভাত রান্না হয়নি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার জানান, জানা মতে ত্রাণ পায়নি এমন কেউ নেই, এরপরেও খোজখবর নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সময়ের আলো/জিকে