ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

নবীনগরে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ৫
প্রকাশ: সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৬:০০ পিএম  (ভিজিট : ৪৫৪)
ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর উপজেলার মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে গোলাগুলির ঘটনায় পাঁচ জন গুলিবিদ্ধসহ একাধিক লোক আহত হয়েছে। রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের সোনাবালুয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 

গুলিবিদ্ধরা হলেন- উপজেলার ধরাভাঙ্গা গ্রামের পাশা মিয়ার ছেলে আলকাছ (৩৫), বাছেদ মিয়ার ছেলে খলিল (৪০), আওয়াল মিয়ার ছেলে কবির (৪৫), আব্দুল মালেক মিয়ার ছেলে শফিক মিয়া (৪২), কালন মিয়ার ছেলে ফারুক মিয়া (৪৫)। 

স্থানীয়রা উদ্ধার করে গুলিবিদ্ধ পাঁচজনের মধ্যে ১ জনকে সলিমগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ও ৪ জনকে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। এ সময় ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. রাসমিত করিম বলেন, ‘প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চারজনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। অন্যান্য আহতরা স্থানীয় হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’

স্থানীয় ও বিশেষ সূত্রে জানা যায়, বড়িকান্দি ইউনিয়নের জাফরাবাদ মৌজায় মেঘনা নদী থেকে সম্প্রতি প্রায় ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ বছরের জন্য বালু উত্তোলনের ইজারা পায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন শোভনের মালিকানাধীন মুন্সি এন্টারপ্রাইজ। ইজারাদারের শ্রমিকরা মেঘনা নদীর জাফরাবাদ মৌজায় বালুমহাল থেকে বালু উত্তোলন শুরু করে। 

বালু মহালের কর্মচারী অদু মিয়া জানান, বালু উত্তোলন শুরুর পর থেকেই পার্শ্ববর্তী নরসিংদী রায়পুরা উপজেলার চরমধুয়া ইউনিয়নের কিছু লোকজন মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে আসছিল। পরে গতকাল (রোববার) সন্ধ্যায় সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা নৌকা ও স্পিডবোট যোগে বালু মহালে অতর্কিত হামলা চালায়। এ ঘটনায় পাঁচ জন গুলিবিদ্ধসহ একাধিক লোক আহত হয়েছে। 

ইজারার শেয়ার মালিক দৈনিক যুগান্তরের প্রতিনিধি উজ্জ্বলের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি সময়ের আলোর প্রতিনিধিকে বলেন, ‘আপনি কি আমার সাথে সাংবাদিকতা দেখাতে আসছেন বলে কল কেটে দেন। পরবর্তীতে কল করেও তাকে আর পাওয়া যাইনি।’ 

এদিকে মুন্সি এন্টারপ্রাইজের মালিক শাহাদাৎ হোসেন শোভন ৫ আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে থাকায় তার সাথে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে পার্শ্ববর্তী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরমধুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আহসান শিকদার সময়ের আলোকে বলেন, ‘এই বালু মহালে গতবছর ৩ শতাংশ শেয়ার সূত্রে আমিও মালিক ছিলাম। এবছর আমি আর এই বালু মহালের সাথে কোনভাবেই জড়িত না। আর গতকাল থেকেই আমি ভৈরব অবস্থান করছি। আমাদের উপজেলার কিছু লোকজন জাফরাবাদ বালু মহালের সামনে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ঘটনায় কিছুদিন ধরে নবীনগর উপজেলার লোকজনের সঙ্গে ঝামেলা চলছিল। রোববার সন্ধ্যায় রায়পুরা উপজেলার নিলক্ষা, বাঁশগাড়ি, মির্জারচর, চরমধুয়াসহ কয়েকটি ইউনিয়নের লোকজন ও নবীনগর উপজেলার জাফরাবাদ বালু মহালের লোকজনের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আমার নাম আসায় আমি হতাশ হয়েছি।’

এদিকে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে মেঘনা পাড়ের কয়েকটি গ্রাম বিলুপ্তির শঙ্কায় স্থানীয়রা বালুমহাল বন্ধের দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ড ঢাকা বরাবর, জাফরাবাদ ও নতুনচর বালুমহাল ইজারা বাতিল, বালুমহাল বিলুপ্তকরণ এবং বালুমহাল সংলগ্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গন রোধ ও বসতভিটা সংরক্ষণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে আবেদন করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না স্থানীয় এলাকাবাসী। এই বালু মহালে পূর্বেও গোলাগুলির ঘটনায় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছিল একাধিক মানুষ। হঠাৎ করে এমন গোলাগুলির কারণে আতংকে মধ্যে দিনযাপন করছে নদীর পাড়ের মানুষজন। স্থানীয়দের দাবি এই বালু মহাল বন্ধ না করা হলে নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে কয়েকটি গ্রাম। 

একাধিক ভুক্তভোগী জানান, আমাদের ৫ থেকে ৬ বার বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সরকার বেড়িবাঁধ দিয়ে দিছে, আবার সরকারই বালু তোলার জন্য তাদেরকে অনুমতি দিয়েছে, তাহলে বেড়িবাঁধ দিয়ে লাভটা হলো কি। এ সময় কয়েকজন জানান তারা অনেকেই বাড়িঘর হারা এখন অন্যের বাড়িতে বসবাস করেন। 

এ বিষয়ে নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ আফজাল হুসাইন সময়ের আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমরা জেনেছি কেউ যদি অভিযোগ করে অবশ্যই আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

এ বিষয়ে নবীনগর ইউএনও তানভীর ফরহাদ শামীম সময়ের আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটি আমি শুনেছি। পার্শ্ববর্তী রায়পুরা উপজেলার কিছু দুর্বৃত্ত নবীনগর সীমানায় এসে এই হামলা চালিয়েছে।’ স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে অভিযোগ পাওয়ার পরে আমি নিজে নবীনগর থানার ওসিকে নিয়ে বালু মহালে গিয়েছিলাম সেখানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি। সীমানার বাহিরে যেয়ে বালু উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই। অতিরিক্ত ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তলন করলে ড্রেজার জব্দ, জরিমানা জেলসহ যেকোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’ 

সর্বোচ্চ কয়টি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করতে পারবেন জানতে চাইলে তিনি জানান, বালু মহালের ইজারা কার্যক্রম পুরোটাই জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকেই পরিচালিত হয়। আমরা শুধু দেখি নিয়ম মেনে ইজারাদাররা কাজ করছে কিনা। কতটি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করতে পারবে এই বিষয়ে আমার কাছে তথ্য নেই, তবে জেনে জানাতে পারবো। 

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  বালু উত্তোলন-বালুমহাল-সংঘর্ষ-গুলিবিদ্ধ   নবীনগর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close