ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

শিক্ষকরাই কি কেবল টার্গেট
প্রকাশ: রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১:৫৬ এএম  (ভিজিট : ৬৯৬)
বাংলাদেশ মুক্ত। চারদিকে আজ প্রশান্তি স্বস্তি এবং কথা বলার অধিকার ফিরে পেয়ে উচ্ছ্বসিত এবং পুলকিত। ছাত্র-জনতার অকাতরে বিলানো রক্তের সাগরে দাঁড়িয়ে জাতি নতুন করে স্বাধীনতার অনুভূতি উপলব্ধি করছে। এক জনমে এ যেন এক বিরাট পাওয়া।

জাতির বুক থেকে জগদ্দল পাথরের পলায়ন নতুন করে বাঁচতে শেখাচ্ছে। এমন বাংলাই তো আমরা চেয়েছিলাম। যেখানটায় শোষণ, বঞ্চনা, বৈষম্য, নিপীড়ন, চাটুকার, দালাল, বকধার্মিক এবং দরবেশ বাবা মুক্ত বাংলাদেশের অবয়ব দেখতে পাব। সে লক্ষ্যেই এগোচ্ছে দেশ। কিন্তু কোথায় যেন ছন্দপতন? হবেই না কেন? এসবই পুঞ্জীভূত ঘৃণা আর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। 

প্রতিনিয়ত শিক্ষক্ষ অপদস্থ এবং পদত্যাগের নাটক কীসের ইঙ্গিত দিচ্ছে? বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চূড়ান্ত চাওয়া কি এই ছিল? দায়িত্বশীলদের কথাবার্তা এবং মনোভাব এসবকে সমর্থন করে বলে মনে হয় না। তা হলে কেন কেবল শিক্ষকরাই সংস্কারের টার্গেট? ভাবতে হবে কেন এবং কারা এমন করছে?

শিক্ষকরা জাতি গড়ার কারিগর। জাতি এ সম্প্রদায়ের কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করে। শিক্ষকরা হওয়ার কথা ছিল সবার জন্য অনুকরণীয় চরিত্র। তা থেকে শিক্ষকরা যোজন যোজন দূরে। কেন? আত্মসমালোচনার সময় এসেছে। শিক্ষকদের কাছ থেকে সমাজ যা প্রত্যাশা করে তা পূরণে কি ন্যূনতম অবদান রাখতে পারছে? প্রশ্নটা এখানটায়। শিক্ষকরা সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাকে মিথ্যা বলার কথা। কিন্তু নিকট অতীতে বেমালুম ভুলে গিয়ে এর ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। বৈষম্য, অনিয়ম, অনৈতিকতা, পাপাচার, শোষণ-জুলুম এসবের বিরুদ্ধে শির উঁচু করে দাঁড়ানোর বদলে পা-চাটা পদলেহন, দলকানা প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে। ফলে আজ এ ভগ্নদশা। যেখানটায় কোটি টাকা বিনিয়োগেও শিক্ষকরা পিছপা হয় না। এ কেমন আচরণ! সমাজবিজ্ঞানী হার্ভার্ড স্পেনসারের তাত্ত্বিক অনুভূতি যদি অনুধাবন করি তা হলে সত্যটা বেরিয়ে আসবে। কেন শিক্ষকের একাংশ অন্যায়-অনিয়মের সঙ্গে আপস করে অভিযোজিত হওয়ার চেষ্টা করেছেন? এ তত্ত্বে তিনি সমাজকে জীব দেহের সঙ্গে তুলনা করেছেন। দেহের সব অংশের কার্যকারিতা এবং স্বাভাবিক আচরণের মাঝেই সুস্থতা। সমাজও সামনে আগায় তার নিয়মনীতি এবং প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার ওপর এবং প্রতিটি প্রতিষ্ঠান পরস্পর নির্ভরশীল। 

অংশগুলোর যৌক্তিক ভূমিকার ওপরই সমাজ টিকে থাকে। যেখানটায় বিগত দিনে ভোটের অধিকার, কথা বলার অধিকার, এমনকি চলাফেরার অধিকারও সংকুচিত ছিল। সেই জমানায় অন্যায় ফুঁসে উঠবে এটাই স্বাভাবিক। কারা রাতের বেলা ভোটের আয়োজন করেছে এ জাতি কি তাদের চেনে না? আর শিক্ষকরা তো ক্ষমতাহীন একটা অংশ? রাষ্ট্রযন্ত্র কি গত আমলে শিক্ষক সমাজকে যৌক্তিক সম্মান দিয়েছে? শিক্ষা ক্যাডারে বৈষম্য এ আর নতুন কি।

গণেশ উল্টে যাওয়ার যুগে সর্বত্র সংস্কারের হাওয়া লেগেছে। যা চমকপ্রদ। আমরা বৈষম্য এবং শোষণহীন সমাজ চাই। যেমনটা এ প্রজন্ম দারুণভাবে ধারণ করেছে। এ প্রজন্মকে নিয়ে বাজি ধরা যাবে এবং ভরসা রাখা যাবে। তাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাবে এ দেশ। 

পালাবদলের সন্ধিক্ষণে দুর্নীতিবাজ আমলা, ভোট চোর, কাস্টমস কর্মকর্তা, পুলিশ, সাব-রেজিস্টারসহ সমাজের যে বা যারাই বেগমপাড়ার নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন আজও শুনেনি তাদের পদ থেকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। তা হলে বুঝতে কি বাকি আছে ডাল মে কুচ কালা হ্যাঁয়? কেবল শিক্ষকদের বন্দি করে পদত্যাগ গ্রহণেই কি সংস্কারের সার্থকতা? 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যিনি নিয়োগ পেয়েছেন এসব দেখে আমরা আশাবাদী। অন্তত দখলবাজ, চাটুকার, লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির ক্রীড়নকরা যেভাবে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল তাদের হৃদয়ে চির ধরেছে। এদের কারণেই শিক্ষক সমাজ আজ কলঙ্কিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য নিয়োগকৃত ভিসি তো সিভি জমা দেননি। রাষ্ট্রযন্ত্র যোগ্য হিসেবেই তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। ধিক ওইসব দখলদার, চাটুকার শিক্ষককে যারা বগলদাবা করে জীবনবৃত্তান্ত ফেরি করছেন স্থানীয় সমন্বয়ক থেকে শুরু করে ওপর মহল পর্যন্ত। এদের কারণেই সাধারণ শিক্ষকরা লেভেলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। আরে বাবা পদের জন্য তদবির করতে হবে কেন? এসব কি শিক্ষকদের মানায়? আর কত নিচু হলে ক্ষ্যামা দেবেন?

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট মানুষজনের নানা অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতিসহ অসংখ্য অভিযোগ থাকতে পারে। বলপ্রয়োগ এবং সোনামণিদের আবেগকে পুঁজি করে গদিচ্যুত করার এ দৃশ্য আর নিতে পারছি না। 

স্বস্তির বিষয় ২৭ আগস্ট ২০২৪ শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ শিক্ষার সার্বিক সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।  শিক্ষা উপদেষ্টা বলেছেন কারও বিরুদ্ধে ন্যায়সঙ্গত অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং বলপ্রয়োগ করে নয়। উপদেষ্টা পরিষদকে সময় দিতে হবে এবং নিয়মতান্ত্রিকতা অনুসরণ করা লাগবে।

শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রাণ। তাদের চাহনিতেই আমরা আগামীর বাংলাদেশ দেখি। তাদের অর্জনকে আমরা শ্রদ্ধা করি। আমরা ছাত্রদের সহযোগী এবং তাদের স্বপ্নের সঙ্গে আমাদের মিল আছে। আর সংস্কার অনেক বড় বিষয় যার শুরু পরিবার থেকে করতে হবে। পরিবারের যারাই অন্যায়-অনিয়ম, ঘুষ-দুর্নীতির সঙ্গে মিশে আছে তাদের আমরা প্রথমত না বলি এবং বয়কট করি। 

ধীরে ধীরে সমাজ, সংস্কৃতি, অস্থিমজ্জা থেকে এসব অনিয়ম-অসঙ্গতি কমে আসবে। সুন্দর আগামীর জন্য সুন্দর মন প্রয়োজন। এক্ষুণি দেশ গড়ার কাজে মনোযোগী হতে হবে এবং যেসব সম্মানিত মহোদয়রা দেশ গড়ার ডাকে সাড়া দিয়েছেন সেসব মানুষজনকে নির্বিঘ্নে কাজ করার পরিবেশ দিতে হবে। খেলা বন্ধ করতে হবে। কেননা এসবের পেছনে সুযোগসন্ধানী এবং ধান্ধাবাজরা জড়িত। অপেক্ষা এবং ধৈর্য ধারণ করতে হবে। সম্মানিত মানুষজনের মেধা এবং মননের বিনিয়োগের মাধ্যমে এ দেশ একদিন সবার জন্য বসবাস উপযোগী হবে।

লেখক : অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close