ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

অভূতপূর্ব খাদ্য সংকটের মুখোমুখি বিশ্ব
প্রকাশ: শনিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৪, ১:২৪ এএম আপডেট: ৩১.০৮.২০২৪ ৭:৪৫ এএম  (ভিজিট : ১৯১)
বর্তমানে বৈশ্বিক সমস্যাগুলোর শীর্ষে অবস্থান করছে খাদ্য সমস্যা। আসলে খাদ্য সমস্যা এখন আর সমস্যার পর্যায়ে নেই। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এটি সামনের দিনে সংকটে রূপ নেবে। সম্ভাব্য খাদ্য সংকটের জন্য যেসব কারণকে দায়ী করা হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন হ্রাস।

বিশেষ করে ‘ইউরোপের রুটির ঝুড়ি’ নামে খ্যাত ইউক্রেন রাশিয়ার আক্রমণে রণভূমিতে পরিণত হওয়ায় দেশটিতে খাদ্যশস্য উৎপাদনে ধস; এর ফলে বৈশ্বিক খাদ্যশস্যের মজুদ হ্রাস; রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে ইউক্রেনের খাদ্যপণ্য রফতানি ব্যাহত; বিশ্বব্যাপী পরিবহন ও জাহাজ ভাড়ার ঊর্ধ্বমুখিতা; মার্কিন ডলারের দাম অত্যধিক বৃদ্ধি পাওয়ায় খাদ্যপণ্য আমদানিকারক দেশগুলোর, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষে খাদ্যপণ্য আমদানি কষ্টকর হয়ে পড়া, মার্কিন ডলারের তেজে দেশে দেশে, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে খাদ্যপণ্যের উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে সেখানকার নিম্নআয়ের মানুষের পক্ষে খাদ্যপণ্য সংগ্রহ কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠা।

করোনা-উত্তর পৃথিবীতে মানুষের খাদ্যাভ্যাসে একধরনের পরিবর্তন তো এসেছেই, তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু করোনার কারণেই নয়- বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকটের কারণেও বদলে যাচ্ছে মানুষের খাদ্যাভ্যাস। ৪ মে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুদ্ধ-সংঘাতের কারণে ২০২১ সালে বিশ্বের ২৪ দেশের ১৩ কোটি ৯০ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটের মধ্যে পড়েছে। 

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বিশ্বের আট দেশের ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটের মুখে পড়েছে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক সংকটের কারণে খাদ্য সংকটের মধ্যে পড়েছে ২১ দেশের ৩ কোটি মানুষ। ফলে সংশয় দেখা দিয়েছে, এভাবে খাদ্য সংকট বাড়তে থাকলে পৃথিবীজুড়ে দেখা দেবে তীব্র দুর্ভিক্ষ। মারা যাবে কোটি কোটি মানুষ।

বর্তমান হিসাবে দেখা যাচ্ছে, আমরা ৯০ শতাংশ ক্যালরি পাই মাত্র ১৫টি ফসল থেকে। কোনো কারণে এসব ফসলের উৎপাদন ঘাটতি দেখা দিলে তার প্রভাব খাদ্য নিরাপত্তায় নিশ্চিতভাবেই পড়বে। তাই আসন্ন বিপদ এড়াতে নতুন নতুন খাদ্যের উৎস খুঁজে বের করা জরুরি। ইতিমধ্যে বিশ্বের অনেক মানুষ নতুন নতুন খাবারে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। যেমন ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম জানিয়েছে, ব্রিটিশরা ইদানীং ‘জেলিফিশ চিপস’ নিয়মিত খাচ্ছেন। জেলিফিশ আগে খাওয়া হলেও চিপস বানিয়ে খাওয়ার প্রচলন খুব একটা ছিল না। আগামী কয়েক দশকে জেলিফিশ চিপস ব্রিটিশদের খাবারের মেনুতে নিয়মিত হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্য সংকট মোকাবিলা করতে মানুষ তাদের খাদ্যতালিকায় এরকম নতুন নতুন খাবার যুক্ত করবে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে বলেছে, “ভবিষ্যতে আমরা হয়তো ‘ফলস বানানা’ দিয়ে সকালের নাশতা সারব। আর হালকা জলখাবার হিসেবে খাব ‘পান্ডানাস ফল’।” গত রোববার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বিবিসি বলেছে, ২০৫০ সাল নাগাদ মানুষের খাবারের মেনুতে থাকতে পারে- এমন স্বল্পপরিচিত উদ্ভিদের তালিকা তৈরি করছেন বিজ্ঞানীরা। 

লন্ডনের রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনসের গবেষক স্যাম পিরিনন বিবিসিকে বলেছেন, ‘সারা বিশ্বে হাজার হাজার ভোজ্য উদ্ভিদ রয়েছে। পৃথিবীর অনেক জনগোষ্ঠী এসব খায়। এখানেই আমরা ভবিষ্যতের খাদ্য সংকট মোকাবিলার সমাধান খুঁজে পেতে পারি।’ বিশ্বজুড়ে ৭ হাজারের বেশি ভোজ্য উদ্ভিদ জন্মায়। এর মধ্যে ৪১৭টি ব্যাপকভাবে জন্মায়। এই উদ্ভিদগুলো খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 

বিশ্ব এখন এক অভূতপূর্ব খাদ্য সংকটের মুখোমুখি। এই সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। সামনের মাসগুলোতে বৈশ্বিক খাদ্য পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে বলে জাতিসংঘ সতর্ক করেছে। এমনকি বিশ্ব দীর্ঘমেয়াদি দুর্ভিক্ষের মুখেও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।

ইতিমধ্যে ভয়াবহ খরার কারণে প্রচণ্ড খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশ নামিবিয়ায়। এর জেরে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ থেকে বনের পশুপাখিও। এই দ্বিমুখী সংকট থেকে পরিত্রাণ পেতে হাতিসহ শত শত প্রাণীর মাংস জনগণের মাঝে বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির সরকার। খবর রয়টার্স। 

সোমবার এক বিবৃতিতে নামিবিয়ার পরিবেশ মন্ত্রণালয় বলেছে, মানুষের পাশাপাশি বনের পশুপাখিদের মধ্যেও প্রচণ্ড খাদ্য সংখট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় ৮৩টি হাতিসহ প্রায় ৭২৩টি বন্য প্রাণী জবাই করে মানুষের মাঝে মাংস বিতরণ করা হবে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেশের যেসব পার্ক ও এলাকায় এই মুহূর্তে চারণভূমি ও পানি সরবরাহের তুলনায় প্রাণী বেশি, সেসব এলাকায় থাকা প্রাণীগুলোকে জবাই করে জনগণের মাঝে মাংস বিতরণ করা হবে। জানা গেছে, এই মুহূর্তে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরার মুখে পড়েছে আফ্রিকা মহাদেশের পুরো দক্ষিণাঞ্চল। এ অবস্থায় নামিবিয়ায় থাকা খাদ্য মজুদের ৮৪ শতাংশই গত মাস নাগাদ শেষ হয়ে গেছে। ফলে আগামী  মাসগুলোতে দেশটিতে বড় ধরনের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা দেখা দেবে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ।

বিষয়টি বিবেচনা করে নামিবিয়ার পরিবেশ মন্ত্রণালয় বলেছে, স্মরণকালের ভয়াবহ এই খরায় কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নিলে মানব-বন্য প্রাণী সংঘাত অনেক বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই সব দিক সামাল দিতে সম্ভাব্য সংঘাতপূর্ণ এলাকা থেকে ৮৩টি হাতি, ৩০টি জলহস্তী, ৬০টি মহিষ, ৫০টি হরিণ, ১০০টি নীল বন্য শূকর, ৩০০টি জেব্রা এবং ১০০টি ইল্যান্ড জবাইয়ের পরিকল্পনা করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এরই মধ্যে সরকারের চুক্তি অনুযায়ী পেশাদার পশু শিকারি ও কোম্পানির মাধ্যমে ১৫৭টি প্রাণী শিকার করা হয়েছে। এসব প্রাণী থেকে ৫৬ হাজার ৮০০ কেজির বেশি মাংস পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনা শুরু হলেও নামিবিয়ার পরিবেশ মন্ত্রণালয় বলছে, সরকার বাধ্য হয়ে এ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আর বিষয়টি আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার সঙ্গেও সংগতিপূর্ণ। কারণ নামিবিয়ার সংবিধানে নাগরিকদের সুবিধার জন্য দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের বিধান রয়েছে।

জানা গেছে, আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের পাঁচ দেশ- জিম্বাবুয়ে, জাম্বিয়া, বোতসোয়ানা, অ্যাঙ্গোলা ও নামিবিয়ার সংরক্ষিত এলাকায় ২ লক্ষাধিক হাতির বসবাস। এর ফলে এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক হাতির উপস্থিতি রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। 

বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। গত সেপ্টেম্বরে এফএও প্রকাশিত ‘ক্রপ প্রসপেক্টাস অ্যান্ড ফুড সিচুয়েশন’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৪৫টি দেশে ঘাটতিজনিত মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা এখন সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে ৩৩টি আফ্রিকা মহাদেশে, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানসহ ৯টি এশিয়া মহাদেশে, দুটি ক্যারিবীয় অঞ্চলে এবং একটি ইউরোপ মহাদেশে অবস্থিত।

সাংবাদিক 



সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close