ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ক্ষতির মুখে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় নথি
চার বছরেও শেষ হয়নি ডাকঘরের নির্মাণকাজ
প্রকাশ: বুধবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৪, ৪:৫২ এএম  (ভিজিট : ২০২)
জরাজীর্ণ ভবনে কোনোরকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চুয়াডাঙ্গা প্রধান ডাকঘরের কার্যক্রম। পুরোনো ভবনে ফাটল ধরেছে। খসে পড়ছে ছাদের পলেস্তারা। যেকোনো সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন ডাকঘরের স্টাফ ও সাধারণ গ্রাহকরা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে দীর্ঘ চার বছরেও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ। 

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা প্রধান ডাকঘরের পোস্টমাস্টার রিয়াজুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য জেলায় পোস্ট অফিসের নির্মাণকাজ শেষ হলেও এখানে এখনও শেষ হয়নি। ১৯৭০ সালে নির্মিত ভবনে এখন কোনোরকমে কার্যক্রম চলছে। ভবনের ছাদ যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে। নতুন ভবন নির্মাণের কাজ খুবই ধীরগতিতে চলছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন ভবনে যাওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রীয় এবং অফিসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র রয়েছে এখানে। সেগুলো যদি কোনো কারণে তছরূপ হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগে নষ্ট হয় কিংবা ভিজে যায় তাহলে সমূহ বিপদের সম্মুখীন হতে হবে। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ক্ষতি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।

এ বিষয়ে জানার জন্য স্থানীয় ঠিকাদার খুস্তার জামিলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নাম্বারে একাধিকবার কল করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। এছাড়া ঝালকাঠি জেলার নলছটি উপজেলার মাহফুজ খান লিমিটেড ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মাহফুজ খানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নাম্বারে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় ঠিকাদার ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি খুস্তার জামিল মূল ঠিকাদার মাহফুজ খানের কাছ থেকে কাজটি কিনে নেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে কাজটি নির্দিষ্ট সময়ে শেষ না করায় জনদুর্ভোগ লাঘব করা সম্ভব হয়নি। বারবার কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও কৌশলে দফায় দফায় বাড়ানো হয় সময়। তারপরও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারেননি ঠিকাদার খুস্তার জামিল। ইতিমধ্যে সর্বশেষ বর্ধিত সময়ের মেয়াদ পেরিয়ে আরও দুই মাস বেশি অতিবাহিত হয়ে গেছে। তারপরও শেষ হয়নি কাজ। কবে শেষ হবে বলতে পারছে না কেউ। এর মধ্যেই গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর নানা অপকর্মের হোতা খুস্তার জামিল গা-ঢাকা দিয়েছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, পুরোনো জরাজীর্ণ ভবনে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন নথি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ডাকঘরে থাকা গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলো যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে। জঙ্গলে পরিণত হয়েছে ডাকঘর চত্বর। মাদকসেবীদের জন্য মাদক সেবনের নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে। ডাকঘরের ভেতরে বসার ও দাঁড়ানোর মতো কোনো জায়গা নেই। টয়লেটসহ অপ্রতুল প্রয়োজনীয় সুবিধা। ডাকঘরে আসা সাধারণ গ্রাহকদের দুর্ভোগ যেন নিত্যদিনের সঙ্গী এখানে।   
স্থানীয়রা জানান, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত দেশের সর্বপ্রথম ডাকঘর এটি। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বড়বাজার পাড়ায় ডাকঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬০ সালে। পাতলা ইট আর চুন-সুড়কির গাঁথুনিতে ডাকঘরটি তৈরি হয় ১৬৩ বছর আগে। পরবর্তী সময়ে ১৯৭০ সালে নির্মিত আরেকটি ভবনে ডাকঘরের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৮৪ সালে ছয় বিঘা জমির উপর পূর্ণাঙ্গরূপে চুয়াডাঙ্গা প্রধান ডাকঘরের কার্যক্রম চালু হয় ২৪ জন স্টাফ নিয়ে। চার বছর আগে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত জরাজীর্ণ পুরোনো ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। নতুন ডাকঘর নির্মাণের ব্যয় ধরা হয় ৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ঝালকাঠি জেলার নলছটি উপজেলার মাহফুজ খান লিমিটেড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে অংশ নিয়ে চুয়াডাঙ্গার প্রধান ডাকঘর নির্মাণের কাজটি পায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির নির্মাণ কাজ করার কথা থাকলেও চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় ঠিকাদার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি খুস্তার জামিল কাজটি কিনে নেন। ২০২০ সালের জুলাই মাসে চুয়াডাঙ্গা ডাকঘরের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২১ সালের জুন মাসে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। কয়েকবার কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলেও তাতেও সম্ভব হয়নি কাজ শেষ করা। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুন মাসে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনও শেষ হয়নি কাজ। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মাণকাজ চলমান থাকা অবস্থায় ঠিকাদার খুস্তার জামিল ব্যয় বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন। পরবর্তী সময়ে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ নির্মাণকাজের ব্যয় আরও ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে। এতে প্রকল্পের মোট নির্মাণব্যয় গিয়ে দাঁড়ায় ৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকায়। কিন্তু অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের পরও নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। দ্বিতল ভবনটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে অনেক বেশি। রহস্যজনক কারণে থমকে আছে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণ কাজের অগ্রগতি। একই প্রকল্পের আওতায় অন্যান্য জেলায় ডাকঘর নির্মাণকাজ শেষ হলেও, চুয়াডাঙ্গার ডাকঘর নির্মাণকাজ কোনোভাবেই শেষ হচ্ছে না। নতুন ভবন নির্মাণ না হওয়ায় নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ডাকবিভাগে কর্মরতদের। তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন কাজ করতে হচ্ছে পরিত্যক্ত জরাজীর্ণ ভবনে। সাধারণ গ্রাহকরাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। বিশেষ করে নারী গ্রাহকরা পড়ছেন বেশি ভোগান্তিতে। ভোগান্তি বাড়ছে সাধারণ সেবা প্রত্যাশীদেরও। সেবা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় গ্রাহক কমে যাচ্ছে। ডাকঘর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে সাধারণ মানুষ।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে বিভিন্ন কার্যক্রম। প্রধান ডাকঘরে চালু রয়েছে সঞ্চয়পত্র, সঞ্চয় ব্যাংক, চিঠি, পার্সেল, অফিসিয়াল চিঠি, মানি অর্ডার, দেশ-বিদেশে চিঠি আসা-যাওয়ার কাজ।

চুয়াডাঙ্গা ডাকঘরে আসা কয়েকজন গ্রাহক বলেন, পোস্ট অফিসে প্রয়োজনীয় কাজে আসি। কিন্তু ভবনটি অনেক পুরোনো। ভেতরে প্রবেশ করলেই ভয় লাগে। কখন যেন ভেঙে পড়ে মাথার উপর! ভেতরের পরিবেশ অনেক নোংরা। 

ঝোপঝাড়ে ছেয়ে গেছে পুরো পোস্ট অফিস চত্বর যেখানে বসবাস সাপ আর পোকা-মাকড়ের। সন্ধ্যার পর থেকে বখাটে ও মাদকাসক্তদের আনাগোনা শুরু হয় এখানে।


সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close