ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ছয় প্রকার মানুষের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ
প্রকাশ: বুধবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৪, ১:৪৮ এএম  (ভিজিট : ২৮০)
প্রতিটি মুমিনের হৃদয়ের স্বপ্ন-মৃত্যুপরবর্তী জীবন যেন জান্নাতে কাটে। তবে তার জন্য পার্থিব জীবনে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। প্রতিটি মানুষ তার দুনিয়াবী জীবনের কর্ম-গুণের ভিত্তিতেই জান্নাত কিংবা বা জাহান্নামে যাবে। তবে এমন কিছু কর্ম বা আমল আছে, যেগুলো সম্পাদনকারী ব্যক্তির জান্নাতের দায়িত্ব স্বয়ং রাসুলুল্লাহ গ্রহণ করেছেন।

এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত উবাদা ইবনুস সামিত (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা নিজেদের ব্যাপারে আমার জন্য ছয়টি বিষয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করো, আমি তোমাদের জান্নাতের দায়িত্ব গ্রহণ করব-১. যখন কথা বলবে সত্য বলবে। ২. প্রতিশ্রুতি দিলে পূর্ণ করবে। ৩. তোমাদের কাছে আমানত রাখা হলে তা আদায় করবে। ৪. তোমাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে। ৫. তোমাদের চোখ অবনত রাখবে। ৬. তোমাদের হাত অন্যকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত রাখবে।’ (মুসনাদে আহমাদ : ২২৭৫৭)

সত্য কথা বলা : মানুষের মধ্যে যেসব ভালো গুণ থাকা জরুরি, তার অন্যতম একটি সদা সত্য কথা বলা। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সত্য কথা পুণ্যের দিকে নিয়ে যায়, আর পুণ্য জান্নাতে পথ সুগম করে। আর মিথ্যা পাপাচারের দিকে নিয়ে যায়, আর পাপাচারের পরিণতিতে জাহান্নামে যেতে হয়’ (বুখারি : ৬০৯৪)। অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ঈমান এবং কুফর এক ব্যক্তির অন্তরে জমা হতে পারে না। সত্য ও মিথ্যা একত্রে জমা হতে পারে না। আমানত এবং খেয়ানত এক ব্যক্তির মধ্যে জমা হতে পারে না।’ (মুসনাদে আহমাদ : ৮৫৯৩)
অঙ্গীকার পূর্ণ করা : একজন সত্যিকারের বুদ্ধিমান ও খাঁটি মুমিনের অন্যতম একটি গুণ হলো, কৃত অঙ্গীকার রক্ষা করা। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘...(প্রকৃত মুমিন হচ্ছে) ওইসব ব্যক্তি, যারা আল্লাহকে প্রদত্ত অঙ্গীকার রক্ষা করে এবং চুক্তির বিপরীত কাজ করে না’ (সুরা রাদ : ২০)। এ ব্যাপারে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুনাফিকের আলামত তিনটি-১. কথা বললে মিথ্যা বলে। ২. অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে। ৩. আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে।’ (বুখারি : ৫৯)

আমানত রক্ষা করা : মানুষ সামাজিক জীব। সমাজজীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত রাখা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে পরস্পরের মধ্যকার আমানত রক্ষা করা। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুসলিমগণ! নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আদেশ করেছেন যে, তোমরা আমানতসমূহ তার হকদারকে আদায় করে দেবে এবং যখন মানুষের মধ্যে বিচার করবে, তখন ইনসাফের সঙ্গে বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদের যে বিষয়ে উপদেশ দেন, তা কতই না উৎকৃষ্ট। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু জানেন, সবকিছু দেখেন’ (সুরা নিসা : ৫৮)। হজরত আবু দারদা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে পাঁচটি কাজ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে-১. যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওজু ও রুকু-সেজদা করে নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করে। ২. রমজানের রোজা রাখে। ৩. পথ খরচের সামর্থ্য থাকলে হজ পালন করে। ৪. সন্তুষ্টচিত্তে জাকাত আদায় করে। ৫. আমানত রক্ষা করে।’ (আবু দাউদ : ২৯)

লজ্জাস্থানের হেফাজত করা : আল্লাহ তায়ালাপ্রাকৃতিকভাবেই প্রত্যেক মানুষকে প্রবৃত্তির চাহিদা দিয়েছেন। ইসলাম যেহেতু মানুষের স্বভাবজাত ধর্ম, তাই এই জৈবিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বৈধ পন্থা নির্ধারণ করে দিয়েছে। আর সে পন্থা হলো বিয়ের পথ। সঙ্গে সঙ্গে বিয়ের পথ ব্যতীত অন্য পন্থায় জৈবিক চাহিদা পূরণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। একজন সফল মুমিনের যেসব গুণাবলি থাকা আবশ্যক তার অন্যতম একটি লজ্জাস্থানের সংরক্ষণ করা। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘(সফল মুমিন ওইসব ব্যক্তি) যারা নিজেদের লজ্জাস্থান সংযত রাখে।’ (সুরা মুমিনুন : ৫)

দৃষ্টি অবনত রাখা : চোখ আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ নেয়ামত। আল্লাহ প্রদত্ত এই নেয়ামতের শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা হলো অবৈধ ও নিষিদ্ধ বস্তু দেখা থেকে সেটিকে বিরত রাখা। যারা আপন চোখ অবৈধ দৃষ্টি থেকে বিরত রাখে তাদের ব্যাপারে হাদিসে অনেক ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির চোখ জাহান্নামের আগুন দেখবে না-১. যে চোখ আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেয়। ২. যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কান্না করে। ৩. যে চোখ আল্লাহর 
নিষিদ্ধ বস্তু দেখা থেকে বিরত থাকে।’ (মাজমাউয যাওয়ায়েদ : ৫/৩৭৪)

অন্যকে কষ্ট না দেওয়া : মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তারা পরস্পরে একে অন্যের সঙ্গে ভালোবাসা, সম্মান, শ্রদ্ধা, স্নেহ ও ভ্রাতৃত্ববোধের আচরণ-উচ্চারণ করবে, এটিই স্বাভাবিক ও যুক্তিযুক্ত বিষয়। এর বিপরীতে যারা মুমিনদের কষ্ট দেবে তাদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা মুমিন নর-নারীদের বিনা অপরাধে কষ্টদান করে, তারা অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে’ (সুরা আহজাব : ৫৮)। এ ব্যাপারে হজরত আবু আমের (রা.) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রকৃত মুসলিম সে-ই, যার জিহ্বা ও হাত থেকে সব মুসলিম নিরাপদ থাকে এবং প্রকৃত মুহাজির সে-ই, যে আল্লাহ তায়ালার নিষিদ্ধ কাজ ত্যাগ করে’ (বুখারি : ১০)। মহান আল্লাহ সবাইকে বোঝার ও আমল করার তওফিক দান করুন।

মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলুম মাদরাসা
     মধুপুর, টাঙ্গাইল


সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close