‘আমি জীবনে অনেক কষ্ট পাইছি আমার আপন জনের কাছ থেকে। সব কষ্ট হাসি মুখে মেনে নিছিলাম। কিন্তু এবার এমন কষ্ট আমার বউ-শাশুড়ি দিছে তার জন্য আত্মহত্যা করলাম। কথায় আছে না যার বউ ভালো তার দুনিয়া ভালো। যার বউ খারাপ তার দুনিয়া খারাপ।’ চিরকুটে এমনি বিষাদ ছড়িয়ে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে শিপন মিয়া (২৫) নামে এক যুবক আত্মহত্যা করেছে।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) উপজেলার পাররামরামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ভাতখাওয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শিপন মিয়া ওই গ্রামের মো. জামাল উদ্দিনের ছেলে।
নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্র জানায়, এক বছর আগে বকশীগঞ্জ উপজেলার বগারচর ইউনিয়নের সাতভিটা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের মেয়েকে বিয়ে করে শিপন মিয়া। বিয়ের পর থেকে তাদের মধ্যে কলোহ দানা বাঁধতে শুরু করে। বিভিন্ন সময় তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ হয়। গত এক মাস আগে স্ত্রী মিনাকে বাড়িতে রেখে শিপন জামালপুরে যায় কাজ করতে। গত সপ্তাহে স্ত্রী মিনা বেগম তাকে না জানিয়ে বাবার বাড়ি চলে যায়।
শিপন জামালপুর থেকে বাড়িতে ফিরে স্ত্রীকে না পেয়ে মোবাইল ফোনে স্ত্রীর সাথে কথা বলে শ্বশুর বাড়িতে যায় স্ত্রীকে আনতে। সেখান থেকে বাড়িতে ফিরে রাতে নিজের শোবার ঘরের ধন্যার সাথে গলায় ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করে। আজ (মঙ্গলবার) সকালে দরজা বন্ধ থেকে শিপনের মা ডাকাডাকি করেন। পরে ঘরে প্রবেশ করে ধন্যার সাথে ফাঁসি দেওয়া অবস্থায় শিপনকে দেখে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহতের পরিবারের দাবি, গতকাল (সোমবার) শিপন জামালপুর থেকে বাড়িতে ফিরেছে। বাড়িতে এসে বউকে না পেয়ে শ্বশুর বাড়িতে যায় বাউকে আনতে। সেখান থেকে রাতেই ফিরে সে। মনে হয় শ্বশুর বাড়িতে তাকে মারধর করা হয়েছে। ফাঁসি দেওয়ার আগে শিপন একটা কাগজে চিরকুট লিখে যায়।
চিরকুটে লিখা ছিল, ‘আমি জীবনে অনেক কষ্ট পাইছি আমার আপন জনের কাছ থেকে। সব কষ্ট হাসি মুখে মেনে নিছিলাম। কিন্তু এবার এমন কষ্ট আমার বউ-শাশুড়ি দিছে তার জন্য আত্মহত্যা করলাম। কথায় আছে না যার বউ ভালো তার দুনিয়া ভালো। যার বউ খারাপ তার দুনিয়া খারাপ। এ রকম মৃত্যু যেন আর কারো না হয়। সুখের জন্য বিয়ে করলাম আর এই সুখ আমার মৃত্যু ঘটালো।’
চিরকুটে আরও লিখা ছিল, ‘মা এবং বোন তোমারা আমায় মাফ কইরা দিও। আমি দুনিয়াতে বাঁচতে চাইছিলাম কিন্তু আমার বউ মিনা, আমার শ্বশুর-শাশুড়ি আমায় বাঁচতে দিল না। মৃত্যুর সময় কেউ মিথ্যা কথা বলে না। আমার বউ-শাশুড়ির জন্য আমার বাবা-মাকে ছেড়ে দিলাম। তবুও তাদের মন পাই নাই। আমি গরিব ঘরের সন্তান আমার সাথে অনেক অন্যায় করেছে তারা। আমার মরার পর আর যেন কেউ এভাবে না মরে।’
এছাড়া তিনি তার স্ত্রীর উদ্দেশ্যে চিরকুটে লিখেন, ‘তোমার মত মেয়ে যেন প্রতি ঘরে জন্ম না নেই। তোমার মত বউ যেন আর কারও ঘরের বউ না হয়। আমি আমার মা-বাবা ভাই বোনদের সঙ্গে অনেক অন্যায় করেছি তবুও তোমার মন পাইলাম না। ভালো থাকিস বউ, তোকে অনেক ভালোবাসি। আমার এ জীবন ব্যর্থ তাই এ জীবন আমি ত্যাগ করলাম। পুরুষ মানুষের জীবন মৃত্যুর সময়ও বলতে পারছি না। না পারছি কিছু বলতে না পারছি সবকিছু সহ্য করতে।’
এদিকে দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানার ওসি বিপ্লব কুমার বিশ্বাস আত্মহত্যার বিষয়ে জানান, নিহতের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। লাশের পাশে একটা চিরকুট পাওয়া গেছে। নিহতের পক্ষ থেকে আত্মহত্যার প্ররোচণার মামলা করলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সময়ের আলো/আরআই