ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

গাজী টায়ার ফ্যাক্টরির আগুন নিয়ন্ত্রণে
লুটপাট করতে গিয়ে নিখোঁজ ১৭৬
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৪, ১২:৪৩ এএম আপডেট: ২৭.০৮.২০২৪ ১২:৫০ এএম  (ভিজিট : ১৯২)
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসী এলাকায় অবস্থিত সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর মালিকানাধীন গাজী টায়ার ফ্যাক্টরিতে দ্বিতীয়বারের মতো আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ৬তলা বিশিষ্ট ভবনে আগুন লাগার পর সোমবার রাত ৭টার দিকে  তা নিয়ন্ত্রণে  আসে।  আগুন নেভানোর জন্য কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট। একদল দুর্বৃত্ত ফ্যাক্টরিতে লুটপাট চালায়। লুটপাট করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত ১৭৬ জন নিখোঁজ বলে দাবি করেছেন তাদের স্বজনরা। ইতিমধ্যে স্বজনরা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের কাছে নিখোঁজদের নাম-ঠিকানা দিয়েছেন।

সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কারখানা ভবনের সামনে সাংবাদিকদের উদ্দেশে দেওয়া এক ব্রিফিংয়ে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও পুরোপুরি নেভানো যায়নি। পুরোপুরি না নেভা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম চলবে। 

এ সময় নিখোঁজদের তালিকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি  সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভিকটিম লিস্ট তৈরির দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের। আগুন নির্বাপণ করাই আমাদের প্রথম দায়িত্ব। ভিকটিম লিস্টের দিকে আমাদের নজর নেই। আমরা সকাল পর্যন্ত ১৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছি। তাদের স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গোলাম দস্তগীরের মালিকানাধীন রূপসী এলাকায় গাজী টায়ার কারখানা ও কর্ণগোপ এলাকায় গাজী পাইপ এবং ট্যাংক কারখানা রয়েছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ শত শত লোক  রূপসী এলাকায় গাজী টায়ার কারখানা ও কর্ণগোপ এলাকায় গাজী পাইপ ও ট্যাংক কারখানায় লুটপাটের পর  আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে রূপগঞ্জের নবকিশোলয় হাইস্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রোমান মিয়া হত্যা মামলার আসামি গোলাম দস্তগীর গাজীকে ঢাকার শান্তিনগর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। 

এ খবরের পরই রোববার সন্ধ্যার দিকে কয়েকশ লোক লাঠিসোটা নিয়ে রূপসীর গাজী টায়ার কারখানার ভেতরে ঢুকে পড়ে। এরপর ভাঙচুর ও লুটপাট শুরু করে। স্থানীয় বিএনপির বেশকিছু নেতাকর্মী এসে ভাঙচুর ও লুটপাটে বাধা দিলেও লুটপাট চলতে থাকে। একপর্যায়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে কারখানার ভেতরের ৬তলা ভবনে প্রবেশ করে কয়েকশ লোক। ওই ভবনে কেমিক্যাল ও টায়ার তৈরির কাঁচামাল ছিল। ভবনের ভেতরে লুটপাট নিয়ে দুটি পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারপিটের ঘটনা ঘটে। এ সময় একটি পক্ষ ভবন ত্যাগ করলে ভবনের প্রবেশ গেট বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে পুরো ভবনে আগুন লেগে যায়। এ সময় আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের লেলিহান শিখা ৬০ থেকে ৮০ ফুট উঁচুতে উঠে পড়ে। ভবনের ভেতরে আটকা পড়া অনেকেই স্বজনদের ফোন করে বাঁচানোর জন্য আকুতি জানায় বলে বেশ কয়েকজন স্বজন দাবি করেন। 

এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের কাছে ১৭৬ নিখোঁজ ব্যক্তির তালিকা দিয়েছেন স্বজনরা। বেশিরভাগ নিখোঁজের বাড়ি উপজেলার মিকুলী, রূপসী কাজিপাড়া, ছাতিয়ান, মুগরাকুল, কাহিনা, বরপা, মাসাবো, তারাবো, বরাবো, মুড়াপাড়াসহ আশপাশ এলাকায়। 

বরপা এলাকার ইকবাল হোসেন বলেন, আমার বন্ধু আলী আসাদ, আবু সাঈদ, স্বপন খান, শাহিনসহ ৫ জন নিখোঁজ রয়েছে। তারা কারখানার ওই ভবনে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢুকে আর বের হয়নি। মোবাইল ফোনে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কথা হয়েছে। তখন বলেছে তারা ভবনে আটকা পড়েছে। আমাদের বাঁচান। এরপর আর ফোনে পাওয়া যায়নি।  

কোনাপাড়া এলাকার রাবেয়া খাতুন বলেন, তার মেয়ের জামাই হযরত আলী গাজী টায়ার কারখানায় যাওয়ার পর থেকে তার খোঁজ পাচ্ছি না। শুনছি আগুন লাগছে যেই ভবনে সেখানে আটকা পড়েছে।

মাসাবো এলাকার আসাদ মিয়া বলেন, তার ছোট ভাই বাবু মিয়া কসাইয়ের কাজ করে। বন্ধুদের সঙ্গে গাজীর কারখানা থেকে মাল নিতে আসে। রাত ১০টা পর্যন্ত কথা হয়েছে, এরপর থেকে আর কথা হয়নি।

বরপা এলাকার সুরাইয়া বেগম বলেন, রাত সাড়ে ৯টার দিকে আমার নাতি নীরব ও তার বন্ধু মিল্লাত মিলে টায়ার কারখানায় প্রবেশ করে। পরে যেই ভবনে আগুন লেগেছে, ওই ভবনে আটকা পড়ে। এখন আর খোঁজ পাচ্ছি না।
ভয়াবহ এই আগুনে কারখানার আশপাশের মার্কেট, হাটবাজার, শিল্প কলকারখানা এবং এলাকাবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপজেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিএনপি নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (প্রশিক্ষক) রেজাউল করিম বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ করে।  নিখোঁজদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আগুন নেভানোর পর নিখোঁজদের ব্যাপারে বলা যাবে। বেলা পাঁচটা পর্যন্ত স্বজনরা আমাদের কাছে ১৭৬ জন নিখোঁজের তালিকা দিয়েছেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান মনির বলেন, দলীয় নাম ভাঙিয়ে কেউ অপরাধ করলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গাজী সাহেব অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচার করা হবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের রুটি রোজগারের জায়গা এই কারখানা। কারখানা ধ্বংস করলে এখানে কর্মরত ২০ থেকে ২৫ হাজার শ্রমিক কর্মচারী কোথায় যাবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন, কেউ কোনো ধরনের অরাজকতা, লুটপাট করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

গাজী টায়ার ফ্যাক্টরির অ্যাডমিন ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বলেন, ভাঙচুর লুটপাট অগ্নিসংযোগে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি। সরকারের সহযোগিতা পেলে ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাটি পুনরায় চালু করা হবে।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close