ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

কূটনৈতিক পাসপোর্ট বদলে পররাষ্ট্রে অনিয়ম
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৪, ১২:২৪ এএম  (ভিজিট : ১১৭২)
রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়াদের কূটনৈতিক পাসপোর্টগুলো সাধারণ পাসপোর্টে রূপান্তর করতে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন যে পররাষ্ট্র সচিবের নির্দেশনাতেই যথাযথ নিয়ম না মেনে এবং দ্রুতগতিতে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়াদের কূটনৈতিক পাসপোর্টগুলো বাতিল করে সাধারণ পাসপোর্ট দেওয়ার জন্য পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই বিষয়ে দৈনিক সময়ের আলোর এই প্রতিবেদক সংশ্লিষ্ট নথিপত্র জোগাড় করতে সমর্থ হয়েছেন।

একাধিক নথিপত্রের ভিত্তিতে দেখা গেছে, শিক্ষার্থী আন্দোলনের ফল হিসেবে গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে শপথ নেন নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওই দিনই কানাডার অটোয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সেলর অপর্ণা রানী পাল পররাষ্ট্র সচিব বরাবর চিঠিতে লেখেন, ‘আমি বাংলাদেশ সরকারের একজন চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা এবং বর্তমানে বাংলাদেশ হাইকমিশন, অটোয়া, কানাডায় কাউন্সেলর হিসেবে কর্মরত আছি। উল্লেখ্য, গত ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন ন : ০৫,০০,০০০০,১৪৬,০২,০০২, ১৭-২৯-এর মাধ্যমে যোগদানের তারিখ হতে ০২ (দুই) বছর মেয়াদে বাংলাদেশ হাইকমিশন, অটোয়া, কানাডাতে কাউন্সেলর পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা হয়, যার মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৮ জানুয়ারি ২০২৫। যেহেতু আমার বর্তমান চুত্তিটি শিগগিরই শেষ হয়ে যাবে তাই আমি আমার কূটনৈতিক পাসপোর্টটির পরিবর্তে সাধারণ পাসপোর্ট গ্রহণ করতে চাই। এমতাবস্থায় আমার বর্তমান কূটনৈতিক পাসপোর্টটির পরিবর্তে সাধারণ পাসপোর্ট করার অনুমতি প্রদান করার জন্য বিশেষ অনুরোধ করছি।’ 

একই সময়ে অটোয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের আরেকজন কাউন্সেলর মোবাশ্বিরা ফারজানা মিথিলা পররাষ্ট্র সচিবকে লেখেন (তিনিও চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা এবং চিঠিতে দিন-তারিখ উল্লেখ নেই) যে তিনি গত এপ্রিল থেকে অটোয়া মিশনে কাউন্সেলর পদে কাজ করছেন। তিনি কূটনৈতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন এবং তার এখন কূটনৈতিক পাসপোর্টের বদলে নিয়মিত সবুজ পাসপোর্ট প্রয়োজন। মন্ত্রণালয় থেকে পাসপোর্ট বদলের অনুমতি পেলে তিনি শিগগিরই সবুজ পাসপোর্টের আবেদন করবেন।

ঢাকা কানাডার অটোয়া থেকে ১০ ঘণ্টা এগিয়ে আছে। ৮ আগস্ট যখন অটোয়ার চুক্তিভিত্তিক দুই কর্মকর্তা পররাষ্ট্র সচিব বরাবর পাসপোর্ট বদলের আবেদন পাঠান তখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডিএম সালাহউদ্দিন মাহমুদ তাদের আবেদন দুটি অনুমোদনের জন্য পররাষ্ট্র সচিব বরাবর উপস্থাপন করেন। ওই দিনই পররাষ্ট্র সচিব অনুমোদন দেন। সচিবের অনুমোদনের পর মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের কন্স্যুলার ও কল্যাণ অনুবিভাগের মহাপরিবচালক বরাবর ফাইল পাঠান। ৮ আগস্ট ছিল বৃহস্পতিবার। এরপর দুদিন সরকারি ছুটি থাকায় ১১ আগস্ট মন্ত্রণালয়ের কন্স্যুলার ও কল্যাণ অনুবিভাগের একজন সিনিয়র অ্যাসিসট্যান্ট সচিবের সই করা পৃথক দুটি চিঠি পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালককে পাঠিয়ে বলা হয় যে দুজন কাউন্সেলর তাদের কূটনৈতিক পাসপোর্টের বদলে সাধারণ সবুজ পাসপোর্ট চান। এই বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিয়েছে। তাই তাদের যেন সবুজ পাসপোর্ট দেওয়া হয়। চিঠিতে আরও বলা হয় যে, বিষয়টিতে যেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রশ্ন তুলেছেন যে, ওই দুই কাউন্সেলরের পাসপোর্ট বদলের প্রক্রিয়া যে গতিতে এবং প্রক্রিয়ায় হয়েছে তা সন্দেহজনক। প্রথমত মিশনের কেউ পাসপোর্ট বদল করতে চাইলে নিয়ম অনুযায়ী তিনি সবার আগে মিশন প্রধানকে জানাবেন, সরাসরি সচিবকে নয়। দ্বিতীয়ত কী কারণে তারা পাসপোর্ট বদল করতে চান তা জানতে চাওয়া হয়নি। তৃতীয়ত মিশনের কারও পাসপোর্ট বদলের কাজ মিশনেই হয়ে থাকে। চতুর্থত পাসপোর্ট বদলের আবেদন মহাপরিচালক পররাষ্ট্র সচিব বরাবর উপস্থাপন করেন না, ডেস্ক অফিসার অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করার কথা। পঞ্চমত অবিশ্বাস্য গতিতে পাসপোর্ট বদলের ফাইল চলাচল করেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, ১৩ বছর ধরে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে কাজ করা অপর্ণা সেন এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া আরেকজন কাউন্সেলর মোবাশি^রা ফারজানা মিথিলার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বদলের ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র সচিব অনিয়ম করেছেন। যা গত জুলাইয়ে শিক্ষার্থী আন্দোলনের স্পিরিটের সঙ্গে যায় না। মিশনকে না জানিয়ে আরেকজন চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা শাবান মাহমুদ লাপাত্তা এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। একইভাবে আরও যেসব চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তারা ছিলেন তারা সবাই তাদের পাসপোর্ট বদল করছেন এবং কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চাচ্ছেন। মন্ত্রণালয়ও এই চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ দিচ্ছে।

এদিকে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন যে ২২, ২৩, ২৪, ২৮ ও ২৯ তারিখে বাংলাদেশ মিশনগুলোকে শিক্ষার্থী আন্দোলনকে ঘিরে দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে পররাষ্ট্র সচিব যেসব বার্তা পাঠান সেগুলো ছিল ভুয়া। এটা ঠিক যে সচিব ওই সময়ের সরকারের নির্দেশে এটা করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যে তিনি কি ওই মিথ্যা বিবৃতি এড়াতে পারতেন না? সচিবের পাঠানো বিবৃতিতে গুলি, হত্যা নিয়ে যেসব তথ্য ছিল তার সবই মিথ্যা। যা ছিল শিক্ষার্থী আন্দোলনের সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। এই বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অ্যাসোসিশেয়নের (বিএফএসএ) চ্যাটবক্সে বলেন, আমরা ভুলে গিয়েছি সরকারি চাকুরে আর সরকারি চাকরের মধ্যে পার্থক্য আছে। সরকারি চাকর আজ্ঞাবহ হয়ে মাথা নিচু করে থাকতে পারে। কিন্তু সরকারি চাকুরে একটা দায়িত্ব নিয়ে চাকরিতে যোগদান করেছিল, যা দায়িত্বশীল নাগরিক, এই দায়িত্ব থেকে কিন্তু আমাদের নিষ্কৃতি হয়নি।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close