ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে হাঁটু পানিতে মানববন্ধন
বৃষ্টির পানিতে জলজট সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল, ভেসে গেছে মাছের ঘের
প্রকাশ: সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৪, ৯:১৫ পিএম  (ভিজিট : ২৭০)
সাতক্ষীরায় টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে জেলার নিম্নাঞ্চল। এতে সদ্য রোপা আমন ও আউশ ধানের জমি তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার, ভেসে গেছে হাজার বিঘা মাছের ঘের ও ফসলি জমি। এদিকে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে সোমবার (২৬ আগস্ট) কাটিয়া মাঠপাড়া-গদাইবিল সড়কে হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে স্থানীয়রা মানববন্ধন করেন।

সাতক্ষীরা পৌরসভার নিচু এলাকায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে জেলা শহরের নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী শতাধিক পরিবার। বেশকিছু এলাকায় মানুষের বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। বেতনা নদী তীরবর্তী এই বিলগুলোর পানি নদীতে যেতে পারছে না। এই পানি পৌরসভার দিকে এগিয়ে আসছে। অতিবৃষ্টিতে গ্রামাঞ্চলের প্রায় সব পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সচিব আলীনূর খান বাবুল জানান, পৌরসভায় পানি নিষ্কাশনে যথাযথ ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় মানুষ বছরের পর বছর ধরে জলাবদ্ধতায় ভুগছে। স্বাভাবিক বর্ষণে তলিয়ে গেছে পৌরসভার ইটাগাছা, কামাননগর, রসুলপুর, মেহেদিবাগ, মধুমোল্লারডাঙ্গী, বকচরা, সরদারপাড়া, পলাশপোল, পুরাতন সাতক্ষীরা, রাজারবাগান, বদ্দিপুর কলোনি, ঘুড্ডিরডাঙি ও কাটিয়া মাঠপাড়াসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। 

তিনি আরও জানান, গুটিকয়েক লোক পৌরসভার মধ্যে অপরিকল্পিত মাছের ঘের করার কারণে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে, বৃষ্টির পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর, কালিগঞ্জ ও আশাশুনিসহ জেলার সাতটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল। এসব এলাকার মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে রোপা আমন ধানের বীজতলা। অনেক এলাকায় বীজতলার ধানের চারায় পচন ধরেছে। ফলে জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। অনেকে আবার নতুন করে বীজতলা তৈরির জন্য বীজ ধান সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

মৌসুমের শুরুতে অনাবৃষ্টিতে বীজতলা তৈরি করতে না পারা আর অসময়ে অতি বৃষ্টিতে রোপণকৃত জমি ডুবে যাওয়ায় চরম দু:চিন্তায় পড়েছেন সাতক্ষীরা কৃষকরা।

কৃষকরা জানান, এ বছর আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে আকাশ ছিলো বৃষ্টিহীন। সঠিক সময় বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এ বছর সাতক্ষীরায় আমন চাষের ক্ষেত্রে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে চাষিদের। চাষিরা সময় মতো আমনের বীজতলা তৈরি করতে পারেননি। ফলে সময় মতো আমন রোপণ করতে পারেননি।  

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, কপোতাক্ষ, বেতনা, মরিচ্চাপ নদীর তীরবর্তী ঝাউডাঙা, লাবসা, বল্লী, ধুলিহর, ফিংড়ি, ব্রহ্মরাজপুর, ইউনিয়নের বিলগুলোতে সদ্য রোপা আমন ও বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পানি অপসারণের কোনো পথ না থাকায় বৃষ্টির পানি বাড়িঘরে উঠতে শুরু করেছে। সাতক্ষীরা শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রাণসায়ের খালও পানি টানতে পারছে না। প্লাবিত এলাকার কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে। অতিবৃষ্টির ফলে গদাইবিল, ডাইয়ের বিল, শাল্যের বিল, বিনেরপোতার বিল, রাজনগরের বিল, চেলারবিল, কচুয়ার বিল, রামচন্দ্রপুর বিল, হাজিখালি বিল, আন্ধারমানিক বিল, ঢেপুরবিল, পালিচাঁদবিল, বুড়ামারা বিল, খড়িলের বিল, আমোদখালি বিল, মাছখোলার বিলসহ জেলার অন্তত ৫০টি বিলে পানি থই থই করছে। এসব বিলের মাছের ঘের ভেসে গেছে।

আশাশুনি উপজেলার বিছট গ্রামের কৃষক রুহুল আমিন জানান, তার এক বিঘা জমির ব্রি-১০ ধানের বীজতলা বৃষ্টির পানিতে পচে নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে আবার বীজতলা তৈরির জন্য তিনি বীজ ধান সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। কিন্তু ব্রি-১০ ধানের বীজ কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে তিনি এবার তার ৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, স্বাভাবিক বর্ষণে জেলার নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে সদ্য রোপা আমন ও আউশ ধানের জমি তলিয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের জরিপ করে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৮ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে, যা গত মৌসুমে ছিল ৭৮ হাজার ৬৮ হেক্টর জমি। তবে মৌসুমি বৃষ্টিপাত না হওয়া এবং অসময়ে অতি বৃষ্টির কারণে অধিকাংশ কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। 

এদিকে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মা. মিরাজ আহম্মেদ মুন্না, শরিফুল ইসলাম, কবির হোসেন, নজরুল ইসলাম, আব্দুস সামাদ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় কাটিয়া মাঠপাড়া ও গদাইবিলের মানুষ দীর্ঘ এক মাস জলাবদ্ধতায় হাবুডুবু খাচ্ছে। প্রভাবশালীরা পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে অবৈধভাবে ঘের করার কারণে হাজারো পরিবার জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বাড়িঘরে পানি উঠেছে। টিউবওয়েল অকেজো হয়ে পড়েছে। ঘর থেকে বের হওয়ার উপায় নেই কারও। 

তারা বলেন, এখনি জলাবদ্ধতা দূরীকরণের উদ্যোগ না নিলে এলাকায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী জানান, গত এক সপ্তাহে সাতক্ষীরায় ১৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।  

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  বৃষ্টির পানিতে জলজট-প্লাবিত নিম্নাঞ্চল   জলাবদ্ধতা নিরসন-মানববন্ধন   সাতক্ষীরা   




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close