ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

মহারাজা জগদিন্দ্র নাথ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
নিয়োগবাণিজ্যে অঢেল সম্পদ সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের
প্রকাশ: সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৪, ৩:৪০ এএম  (ভিজিট : ২৬৪)
নাটোরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মহারাজা জগদিন্দ্র নাথ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সভাপতি জাহিদুর রহমান জাহিদ এবং প্রধান শিক্ষক মো. আশরাফুল ইসলাম তথ্য জালিয়াতি করে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন, অবৈধ টাকায় শহরে বাড়ি-গাড়ি, গ্রামে বিঘা বিঘা জমি, গরুর ফার্ম ও পুকুরের ব্যবসাসহ কয়েক বছরে প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক হয়েছেন মহারাজা স্কুলের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমান প্রধান শিক্ষক মো. আশরাফুল ইসলাম তা অকপটে স্বীকার করেছেন। তবে তিনি দায় চাপিয়েছেন সভাপতির ওপর। এ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, আমি সভাপতির চাপে এসব করেছি। বিভিন্ন অনিয়মে সরাসরি সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। অন্যদিকে এ বিষয়ে জানার জন্য প্রতিষ্ঠানের সভাপতি জাহিদুর রহমান জাহিদের মোবাইল ফোনে কল করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকেই তিনি পলাতক রয়েছেন। তার নামে হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই প্রতিষ্ঠানে ২০১৫ সালে কলেজ শাখার যাত্রা শুরু। পাঠদানের অনুমতি ও একাডেমিক স্বীকৃতি পাওয়ার পর এমপিওভুক্তির আশায় ছিলেন শিক্ষক ও কর্মচারীরা। প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালে এমপিও ঘোষণার পর প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহিদুর রহমান জাহিদ এবং প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম বিভিন্ন অজুহাতে ও কৌশলে এমপিও করানোর নামে ১৮ জন শিক্ষক-কর্মচারীর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেন। ২০২২ সাল পর্যন্ত গণিতের মো. আবদুল মান্নান এবং ইংরেজির প্রভাষক ওমর ফারুক কর্মরত থাকলেও কলেজ এমপিওভুক্ত ঘোষণার পর তাদের বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দিয়ে কলেজ থেকে বিতাড়িত করা হয়। দুই প্রভাষকের পরিবর্তে অর্ধ কোটি টাকার বিনিময়ে গণিত প্রভাষক পদে মো. আশরাফুল ইসলামকে ও ইংরেজি প্রভাষক পদে সুনাম চন্দ্রকে পেছনের তারিখ দেখিয়ে (ব্যাকডেটে) ২০১৫ সালে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে পুনরায় রেজুলেশন করে তৎকালীন ডিজি প্রতিনিধি ও এনএস সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ দিলীপ কুমার ভদ্রের কাছে স্বাক্ষর নিতে গেলে তিনি নিয়মের বাইরে স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর মোটা অঙ্কের টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয় তাকে। সেটাও তিনি ফিরিয়ে দেন। পরে নিয়োগকালীন ডিজি প্রতিনিধির স্বাক্ষর জাল করে নিজেরাই সব নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এমপিওভুক্ত করান।

এ বিষয়ে তৎকালীন ডিজি প্রতিনিধি ও এনএস সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ দিলীপ কুমার ভদ্র বলেন, মহারাজা কলেজ শাখাটি এমপিওভুক্ত ঘোষণা হওয়ার পর বর্তমান প্রধান শিক্ষক আশরাফ আমার বাসায় এসে তার নিজের মনমতো তৈরি করা রেজুলেশন ও নিয়োগ ফলাফল শিটে স্বাক্ষর দিতে বলেন। কিন্তু আমি স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানাই। পরে রাজনৈতিক নেতার ফোন এবং টাকার প্রস্তাব দিলেও এই অবৈধ কাজে সম্মতি না দিয়ে এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের পরামর্শ দিই। পরে জানতে পারি, আমার স্বাক্ষর জাল করে সব নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, বিভিন্ন কৌশলে আমাদের সবার কাছ থেকে ৫-১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জোর করে আদায় করা হয়েছে। এমনকি প্রাপ্ত বকেয়া টাকা তুলতে জনপ্রতি লক্ষাধিক করেও টাকা নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। সবশেষ ২০২১ সালের এমপিও নীতিমালা অনুসারে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৫ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ হওয়ার কথা। কিন্তু নিয়মনীতি উপেক্ষা করে তথ্য জালিয়াতির মাধ্যমে ৯ জনকে নিয়োগ দিয়ে এমপিওভুক্ত করা হয়। ৩য় শ্রেণির ৩ জন কর্মচারীর কোটা পূরণ থাকা সত্ত্বেও আবারও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জাহিদ সভাপতি হওয়ার পর বৈধ ও অবৈধ মিলিয়ে অন্তত ১৫ জন ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির লোকবল নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগ থেকে অন্তত ১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক। নিয়োগকৃত ব্যক্তিরা সবাই তাদের ভাগনে, ভাতিজা, স্ত্রীসহ নিকট আত্মীয়। নিয়োগকৃত এই পদগুলোতে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অকাট্য তথ্যভিত্তিক প্রমাণ রয়েছে। জাহিদ সভাপতি হওয়ার পর থেকে অবৈধ টাকা আয় করার আঁতুড়ঘরে পরিণত করেছেন প্রতিষ্ঠানটিকে। সরকারি বিভিন্ন অনুদানের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে প্রায় ২০টি শতবর্ষী গাছ বিক্রি করে টাকা লুটপাট করার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। জালিয়াতির টাকায় অঢেল ধন-সম্পদের মালিক হয়েছেন সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ২০১৫ সালে নিয়োগকালীন প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল মজিদ বলেন, সরকারি বিধি মোতাবেক আমি সেই সময় এনএস কলেজে গিয়ে ডিজি ও অন্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে নিয়োগ বোর্ড সম্পন্ন করেছিলাম। পরে ব্যাক ডেটে কোনো নিয়োগের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই। আমি কোথাও কোনো স্বাক্ষর করিনি।


সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close