২৫ আগস্ট, রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস। ২০১৭ সালে কক্সবাজারের টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নামে। সেই রোহিঙ্গা ঢলের ৭ বছর পূর্ণ হলো আজ। মিয়ানমারের আরাকানে রোহিঙ্গাদের ওপর সে দেশের সেনারা হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ দেওয়ায় জীবন বাঁচাতে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসলে তাদের আশ্রয় দেয়া হয় ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে। শরণার্থীদের প্রধান ঢলটি আসে ২৫ আগস্ট। এই দিনটিকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে রোহিঙ্গারা। গণহত্যা দিবস উপলক্ষে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে সংক্ষিপ্ত আকারে কর্মসূচি পালনের খবর পাওয়া গেছে।
সভায় বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ফেস্টুন, ব্যানার নিয়ে বৃষ্টি উপেক্ষা করে রোহিঙ্গারা অংশ গ্রহণ করেন। এসময় মিয়ানমারে নাগরিকত্ব নিয়ে ফিরতে চাই, নিরাপদ প্রত্যাবাসন চাই স্লোগান ও বক্তব্যে আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানান বক্তারা।
রোববার (২৫ আগস্ট) সকাল ১০ টায় শালবাগান ক্যাম্প ২৬ এবং জাদিমুড়া ক্যাম্প ২৭ এর ক্যাম্পের মাঝামাঝি বি- ৮ ব্লকে রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস উপলক্ষে সভার আয়োজন করা হয়।
এ ব্যাপারে শালবাগান ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি (রোহিঙ্গা নেতা) বদরুল ইসলাম বলেন, ‘সংক্ষিপ্ত আকারে কর্মসূচি পালনে ক্যাম্প ইনচার্জ হতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমরা ক্যাম্পের ভিতর র্যালি ও মসজিদে দোয়ার মাধ্যমে দিনটি পালন করছি। আমরা আর এদেশের বোঝা হয়ে থাকতে চাইনা। নিরাপদ প্রত্যাবাসন চাই।’
তিনি বলেন, ‘২০১৭ সনে সেনাদের হাতে ১০০ নারী ধর্ষিত, ৩০০ গ্রামকে নিশ্চিহ্ন, ৩৪ হাজার শিশুকে এতিম, ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে হত্যা, ৯ হাজার ৬০০ মসজিদ, ১২০০ মক্তব, মাদ্রাসা ও হেফজখানায় অগ্নিসংযোগ, আড়াই হাজার রোহিঙ্গা মুসলিমকে বন্দী ও ৮ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আরকান রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত হয়। তাই আমরা রোহিঙ্গারা ২৫ আগস্টকে ‘জেনোসাইড ডে’ বা গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছি।’
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শালবাগান ক্যাম্প ২৬ এর হাফেজ ইউসুফ, মো. জাকারিয়া, নবাব শরীফ, মৌলভী রশিদ আহমদ, ক্যাম্প ২৭ এর মো. ফায়সাল প্রমুখ।
এদিকে, যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ক্যাম্পের প্রতিটি পয়েন্টে এপিবিএন পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে। শালবাগান ক্যাম্প ২৬ এর সহকারী ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি) মোস্তাক আহমেদ জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে গণহত্যা দিবস পালন করছে রোহিঙ্গারা।
এদিকে, উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়া ও রোহিঙ্গাদের অনীহার কারণে ২০১৭ সালের পর থেকে কয়েক দফা চেষ্টা করেও আলোর মুখ দেখেনি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। ইতিমধ্যে গত কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারের রাখাইনে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে জান্তা বাহিনীর সংঘাত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
২০২২ সালের নভেম্বরে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও নিরাপত্তা, নাগরিকত্ব নিয়ে অনীহা ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়নি দাবি করায় বন্ধ হয়ে যায় প্রত্যাবাসন কার্যক্রম। এরপরেও ক্যাম্পে বসবাসরত সাধারণ রোহিঙ্গারা মর্যাদাপূর্ণ হয়ে ফিরতে চান নিজ দেশে। ফিরে পেতে চান নিজেদের হারানো সবকিছু।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার প্রবেশ করেছে। কক্সবাজারের উখিয়া–টেকনাফের প্রায় ৩০টি ক্যাম্পে তারা অস্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
সময়ের আলো/আরআই