ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

আবাসিকে গ্যাস সংকট বেড়েছে
প্রকাশ: শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৪, ৪:১২ এএম আপডেট: ২৪.০৮.২০২৪ ৭:৫৬ এএম  (ভিজিট : ২৭৩)
গ্যাস সংকটে ভোগান্তি পিছু ছাড়ছে না রাজধানীর বেশিরভাগ আবাসিক গ্রাহকের। এই সংকট কবে দূর হবে তাও বলতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা। প্রতি মাসে গ্যাস বিল দেওয়ার পাশাপাশি সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করে রান্না করতে গিয়ে বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে।

গ্রাহকের অভিযোগ, দিনের বেশিরভাগ সময়ই রান্নার জন্য গ্যাস পাওয়া যায় না। অল্প যতটুকু পাওয়া যায় তা দিয়ে ছোট এক পাতিল পানি গরম করতেও ১ ঘণ্টা সময় লাগে।

গ্যাসের চাপ বাড়ে কোথাও কোথাও সন্ধ্যার পর। কোথাও কোথাও গভীর রাতে অথবা ভোর ৫টা-৬টার দিকে। এই সময়ে তো কেউ রান্না করে না। বাধ্য হয়ে এলপিজি সিলিন্ডার বা হোটেল থেকে খাবার কিনে খেতে হয়।

জানা গেছে, রাজধানীর গ্রিন রোড, মহাখালী, আদাবর, মৌচাক, নাজিরাবাজার, নয়া বাজার, কেরানীগঞ্জ, হাসনাবাদ, যাত্রাবাড়ী, ধলপুর, কাঁঠালবাগান ও কল্যাণপুর এলাকায় গ্যাস সংকট বেশি।

পুরান ঢাকার বংশাল এলাকার গৃহিণী নাসিমা আক্তার বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চুলায় গ্যাস জ্বলে না। কোনো কোনো দিন বিকাল পর্যন্ত মিটমিট করে জ্বলে। এতে কোনো কাজ হয় না। হোটেল থেকে নাশতা কিনতে হয়। তাতে করে সংসারে বাড়তি খরচ করতে হয়। ভাত ও তরকারি রাতে রান্না করে রাখতে হয়। সব মিলিয়ে আমরা সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে আছি। গ্রিন রোডের বাসিন্দা আজমল হোসেন বলেন, দিনের বেশিরভাগ সময়ই গ্যাস থাকে না। পরিবারের সদস্যদের জন্য খাবার রান্না করাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

হাসনাবাদের বাসিন্দা চাকরিজীবী মনির বলেন, গ্যাস থাকে না বললেই চলে। কিন্তু প্রতি মাসে বিল ঠিকই দিতে হয়। আবার রান্নার জন্য ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহার করায় মাসে প্রায় ১৫শ’ টাকা অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়। এই টাকা কে দেবে। প্রতি মাসে বাড়তি টাকা খরচ করায় অন্য খাতে টান পড়ছে।

নয়াবাজারের বাসিন্দা করিম হক বলেন, গ্যাস দিতে না পারলে বিল কেন নেবে। গ্যাস না থাকায় প্রায়ই বাইরে থেকে কিনে খেতে হয়। এতে বাড়তি টাকা খরচ হচ্ছে। গভীর রাতে যখন গ্যাসের সরবরাহ বাড়ে তখন রান্না করা কারও পক্ষে সম্ভব না।

পেট্রোবাংলা বলছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালে গত ২৬ মে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সামিটের ভাসমান এলএনজি টার্মিনালটি। এখন পর্যন্ত টার্মিনালটি থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু করতে না পারায় ৫০ কোটি ঘনফুটের মতো গ্যাস সরবরাহ কম হচ্ছে। এ জন্য সংকট আরও বেড়েছে। এটি সিঙ্গাপুর থেকে মেরামত কাজ শেষ করে আসে গত মাসে। এরপর গ্যাস সরবরাহ শুরু করার জন্য সাগরে নেওয়া হয়। সাগরের গভীর তলদেশে দড়ি দিয়ে বেঁধে এলএনজি টার্মিনালটিকে স্টেবল রাখা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত সেই ব্যবস্থাপনাটি এখন পুনস্থাপনের কাজ চলছে। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া ও অতিরিক্ত ঢেউয়ের কারণে ঠিকমতো কাজ করা যাচ্ছে না। এ জন্য সময় বেশি লাগছে। 

মেরামতকারী ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়েছেন আরও সময় লাগতে পারে। সে হিসেবে আগামী মাসের শেষ দিকে এই এলএনজি টার্মিনাল থেকে সরবরাহ শুরু হবে।

সামিটের এলএনজি টার্মিনাল থেকে গাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানী ঢাকার আবাসিকের গ্রাহকরা। পুরোনোর সঙ্গে নতুন নতুন এলাকায় গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে, কোথাও কোথাও একেবারেই চুলা জ্বলছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে গ্যাস সংকটে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ না পাওয়ায় শিল্প কারখানার উৎপাদন কমেছে। সিএনজি স্টেশনগুলোতে গ্যাসের চাপ কম থাকায় গ্যাস নিতে সময় বেশি লাগছে। গ্যাস সংকটে বড় কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। এতে দেশের গ্রামাঞ্চলে ঘন ঘন লোডশেডিং হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪০০ কোটি ঘনফুটের বেশি। দেশে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে দৈনিক ১১০ কোটি ঘনফুটের মতো গ্যাস সরবরাহ করা হয়। আর স্থানীয় উৎপাদন মিলিয়ে ৩০০ ঘনফুটের মতো গ্যাস সরবরাহ করা হয়। ঘাটতি থাকে ১০০ কোটির মতো। ঘূর্ণিঝড় রিমালে একটি এলএনজি টার্মিনাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেটি থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে ৫০ কোটি ঘনফুটের মতো গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে। সব মিলিয়ে ১৫০ কোটি ঘনফুটের বেশি গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে।

পিজিসিবি ও পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী, গত বুধবার এলএনজি সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র ২৬০ কোটি ঘনফুট। গত বৃহস্পতিবারও একই পরিমাণ সরবরাহ করা হয়েছে। সরবরাহ কমে যাওয়ায় রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। সার কারখানায় ৩২ কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ১৫ কোটি ঘনফুট। আর বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২৩০ কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ৯০ কোটি ঘনফুট। বন্যা পরিস্থিতির কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ কমানো হয়েছে।

তিতাস গ্যাস জানিয়েছে, এলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় গ্যাসের সরবরাহ কমার পাশাপাশি চাপও কমেছে। সরবরাহ না বাড়া পর্যন্ত পরিস্থিতি এমনই থাকবে।

এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইন্স) মো. কামরুজ্জামান খান সময়ের আলোকে বলেন, দিন দিন গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে; কিন্তু সরবরাহ বাড়ছে না। তিতাসের গ্যাস পাইপে অসংখ্য ছিদ্র থাকায় পূর্ণ মাত্রায় গ্যাস সরবরাহ করা যায় না। এটা একটা সমস্যা। এ জন্য যারা ভেতরের দিকে থাকেন সে সব গ্রাহক ঠিকমতো গ্যাস পান না। এটা নিয়ে কাজ চলছে।

তিনি বলেন, আগামী মাসে সামিটের এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।


সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close