ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

আয়-রোজগার বন্ধ, চিকিৎসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় গুলিবিদ্ধ মাসুদ
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৪, ৩:৩১ পিএম  (ভিজিট : ১৯০)
প্রাণে বেঁচে গেলেও ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আহত অনেকেই আগের চেয়েও দুঃসহ জীবনযাপন করছেন। চিকিৎসার পেছনে সহায়-সম্বল বিক্রি ও ধার দেনার সমস্ত টাকাই খরচ হয়ে গেছে। আহত অনেকেই শারীরিক ও মানসিক কারণে কাজে ফিরে যেতে পারেননি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সরকার পতনের এক দফা দাবিতে গত ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ মাসুদ মিয়াকে (৩০) নিয়ে উদ্বিগ্ন তার পরিবার। চিকিৎসা, সুস্থ হওয়া ও তার কাজে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে না পেরে বাড়িতে যন্ত্রণা নিয়ে কাতরাচ্ছেন তিনি।

ভুক্তভোগী মাসুদ মিয়া গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের রামনগর (ফকিরপাড়া) গ্রামের কৃষক সাহেব মিয়া ও মোরশেদা বেগম দম্পতির ছেলে। গত ৫ আগস্ট তিনি গাজীপুরে গুলিবিদ্ধ হন।

রামনগর ফকিরপাড়া গ্রামে মাসুদ মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি বিছানায় কাতরাচ্ছিলেন। পাশে হতাশা আর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে বসে আছেন মা-বাবা। সন্তান সুস্থ হতে পারবে কি না, এ নিয়ে চিন্তিত তারা। স্ত্রী ও দুই কন্যার চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছিল।

সেদিন গুলিবিদ্ধ হওয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন মাসুদ মিয়া। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রক্তস্নাত বিজয়ের কোনো আনন্দ তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। অসংখ্য মানুষের গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর দৃশ্যগুলো চোখে ভেসে উঠলেই শিউরে উঠছেন তিনি।

সেদিনের ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে মাসুদ মিয়া বলেন, তিনি গাজীপুরে এপেক্স হোল্ডিং লিমিটেড নামের একটি তৈরি পোশাক শিল্প কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে রাজপথে ছাত্র-জনতার ঢল নামে। তিনিও অন্যদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে আন্দোলনে সামিল হন। একপর্যায়ে শফিপুর আনসার একাডেমির সামনে গেলে সেখানে অস্ত্র হাতে পুলিশ সদস্যদের বাধার মুখে পড়েন। তারা ছাত্র-জনতার সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে শুরু হয় সংঘর্ষ। এসময় বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে পাশের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান বলে জানান মাসুদ। 

তিনি বলেন, সেখানে ক্ষতস্থান থেকে রক্তক্ষরণ বন্ধে ব্যান্ডেজ করে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার করে পায়ের গুলি বের করা হয়। পরের দিন ৬ আগস্ট পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে বগুড়া টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। সেখানে ১১ দিন চিকিৎসার পর অর্থাভাবে চিকিৎসা বন্ধ রেখে বাড়িতে চলে আসেন। এখন বাড়িতেই অবস্থান করছেন তিনি।

এলাকাবাসী ও স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে মা-বাবা এবং স্ত্রীসহ দুই কন্যা সন্তানকে গ্রামে রেখে মাসুদ গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে গত ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। কবে সুস্থ হয়ে চাকরিতে ফিরতে পারবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তার পরিবারের সদস্যরা। ইতোমধ্যে গৃহপালিত গরু বিক্রি এবং ধারদেনা করে চিকিৎসা করাতে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন টাকার অভাবে বন্ধ রয়েছে চিকিৎসা। এদিকে তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। অথচ উন্নত চিকিৎসা করার মতো সামর্থ্য তার পরিবারের নেই। অন্যদিকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় চাকরি হারানো শঙ্কা দেখা দিয়েছে। মাসুদকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।

মাসুদের বাবা কৃষক সাহেব মিয়া সময়ের আলোকে বলেন, ছেলেটা চাকরি করায় তিনি চিন্তামুক্ত ছিলেন। সংসারের অভাব কিছুটা দূর হচ্ছিল। তিনি ছেলের সুচিকিৎসার ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে বলেন, শুনেছি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হতাহতদের পাশে দাঁড়িছেন সরকার। কিন্তু আমাদের পরিবারের পাশে আজও কেউ আসেনি। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা না পেলে হয়তোবা মাসুদকে পঙ্গত্ববরণ করতে হবে।

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান   গুলিতে আহত   গাইবান্ধা  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close