ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

কলবের পরিচয় প্রকার পরিচর্চা
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৪, ১:১২ এএম  (ভিজিট : ২৯০)
মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশের নাম ‘কলব’। এর অর্থ অন্তর বা মন। শব্দটি কুরআন ও হাদিসে বহুবার ব্যবহৃত হয়েছে। কুরআন মাজিদে প্রায় ১৩২ জায়গায় আল্লাহ তায়ালা কলবের কথা উল্লেখ করেছেন। হাদিসে নবীজি (সা.) কলবকে মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে অভিহিত করেছেন।

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জেনে রেখো, শরীরের মধ্যে এমন একটা গোশতের টুকরা আছে, যেটা সুস্থ থাকলে সারা শরীরই সুস্থ থাকে। আর সেটা অসুস্থ হয়ে গেলে সারা শরীরই অসুস্থ হয়ে পড়ে। শুনে রাখো, সেটাই হলো কলব’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৫২)। আরেক হাদিসে তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের বাহ্যিক কিছু আল্লাহ দেখেন না, দেখেন তোমাদের কলব বা অন্তর।’ আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত-রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তোমাদের শরীর ও চেহারা দেখেন না, বরং তিনি দেখেন তোমাদের কলব ও কর্ম’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ২৫৬৪)। উল্লিখিত হাদিস থেকে আমরা বুঝলাম, কলব বা অন্তরই শরিরের প্রধান অংশ এবং আল্লাহ তায়ালা সেটাই দেখেন। সুতরাং আমাদের উচিত কলব পরিশুদ্ধ রাখা।

প্রখ্যাত আলেম আল্লামা ইবনুল কাইয়িম জাওজিয়্যাহ (রহ.) কলবকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন এবং প্রত্যেক প্রকারের সংজ্ঞা উল্লেখ করেছেন। প্রথম হলো সুস্থ কলব। কেয়ামতের দিন সুস্থ কলব ছাড়া কেউ মুক্তি পাবে না। আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা, ‘কেয়ামতের দিন অর্থসম্পদ এবং সন্তান-সন্ততি কারও কোনো উপকারে আসবে না। একমাত্র ওই ব্যক্তি মুক্তি পাবে, যে সুস্থ কলব নিয়ে আল্লাহর কাছে পৌঁছবে’ (সুরা শুয়ারা, আয়াত নং : ৮৮-৮৯)। দ্বিতীয় হলো মৃত কলব। এটা জীবিত কলবের একদম বিপরীত। কলব আছে কিন্তু সেটা প্রাণহীন। এই প্রকার কলবের অধিকারী ব্যক্তি কলব দ্বারা ভালো-মন্দ কিছুই বুঝতে পারে না। আর এর ঠিকানা হবে আগের প্রকারের বিপরীত অর্থাৎ জাহান্নাম। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি বহু জিন ও মানুষ। তাদের কলব আছে কিন্তু কলব দিয়ে তারা অনুধাবন করে না, তাদের চোখ আছে কিন্তু চোখ দিয়ে তারা দেখে না, তাদের কান আছে কিন্তু কান দিয়ে তারা শুনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মতো, বরং তার চেয়েও নিকৃষ্ট। তারাই হলো গাফেল।’ (সুরা আরাফ, আয়াত নং : ১৭৯)

আর তৃতীয় প্রকার হলো অসুস্থ কলব। জীবিত এবং মৃতের মাঝামাঝি। জীবিত কিন্তু রোগাক্রান্ত। কলব যখন রোগাক্রান্ত হয়, তখন রোগাক্রান্ত কলব আল্লাহর হেদায়েত লাভের ব্যাপারে, প্রভুর প্রতি সাক্ষাতের আশা পোষণ করতে, ভালো কাজে অগ্রসর হতে, ইবাদতে মনোনিবেশ করতে বাধা সৃষ্টি করে। এ ধরনের কলবে ঈমানও থাকতে পারে, মুনাফিকিও থাকতে পারে। যদি ভালো জিনিস যেমন-ঈমান, ইখলাস, আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা, তাওয়াক্কুল দ্বারা প্রভাবিত হয় তা হলে সুস্থ কলবের পর্যায়ে উন্নীত হয়। আবার যদি খারাপ বিষয় তথা কুপ্রবৃত্তি, হিংসা, অহংকার, শিরক, মন্দ কাজের দ্বারা প্রভাবিত হয়, তা হলে মৃত কলবের পর্যায়ে চলে যায়।

রাসুল (সা.) এ ধরনের কলবের ব্যাপারে বলেছেন, ‘চাটাই বুননের মতো এক এক করে ফেতনা মানুষের কলবে আসতে থাকে। যে কলব সেটাকে গ্রহণ করে, তাতে একটি করে কালো দাগ পড়ে যায়; আর যে কলব তা প্রত্যাখ্যান করে, তাতে একটি করে উজ্জ্বল চিহ্ন অঙ্কিত হয়। এভাবে কলব দুই ধরনের হয়ে যায়। একটি উল্টানো কালো কলসির মতো, নফস তার মধ্যে যা গেঁথে দেয় তা ছাড়া কিছুই চেনে না। আর অন্যটি শে^ত পাথরের মতো, আসমান ও জমিনের স্থায়িত্ব যতদিন, ততদিন কোনো ফিতনা তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ১৪৪)। এখান থেকে আমরা বুঝতে পারি, প্রথম প্রকার কলব ভালো, মুক্তিপ্রাপ্তদের কলব। আর তৃতীয় প্রকারের কলবের অধিকারী মানুষ যদি ভালোর সঙ্গে থাকে, তা হলে সেই কলবও একসময় সুস্থ হয়ে ওঠে।

অসুস্থ কলব কীভাবে সুস্থ করা যায়, কীভাবে সুস্থ রাখা যায়; আধ্যাত্মিক জ্ঞানবিশারদগণ এর বহু পদ্ধতি নিজেদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন। প্রাচীন এবং বর্তমান যুগের সুফিগণের কিতাবে বহু পদ্ধতি পাওয়া যাবে। তবে তারা একটা বিষয়কে সবাই জোর দিয়ে উল্লেখ করেছেন, তা হলো আল্লাহর স্মরণ। আল্লাহ তায়ালাকে সর্বদা অন্তরে স্মরণ রাখতে পারলেই কলব সুস্থ হয়ে উঠবে, আরও সজীব হবে। আর আল্লাহর স্মরণ যদি অন্তরে না থাকে, তা হলে কলব আস্তে আস্তে অসুস্থ হয়ে যাবে এবং একসময় একদম প্রাণহীন হয়ে পড়বে। এ জন্য আমাদের কলব সুস্থ রাখার জন্য সবসময় আল্লাহর স্মরণ কলবে জারি রাখতে হবে।

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আল্লাহর স্মরণ দ্বারাই অন্তর প্রশান্তি লাভ করে’ (সুরা রাদ, আয়াত নং : ২৮)। প্রশান্তি লাভ করে কথাটির অর্থ অস্থিরতা কমে, কলব সুস্থ হয়ে ওঠে, শক্তিশালী হয়। আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমি তোমাদের স্মরণ করব’ (সুরা বাকারা, আয়াত নং : ১৫২)। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর স্মরণ করে আর যে করে না তাদের দৃষ্টান্ত জীবিত ও মৃত মানুষের মতো’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৬৪০৭)। ব্যক্তি তো জীবিতই, হাদিসের জীবিত আর মৃতের বিষয় হলো, আল্লাহর স্মরণ করা ব্যক্তির কলব জীবিত আর আল্লাহর স্মরণ না করা ব্যক্তির কলব মৃত।

শিক্ষক, মাদরাসাতুল হেরা, মিরপুর-২, ঢাকা


সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close