ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

রাঙামাটিতে পাহাড় ধস ও বাঘাইছড়িতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
দুর্গতদের সাহায্যে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী ও প্রশাসন
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট, ২০২৪, ৮:০৫ পিএম  (ভিজিট : ২৮০)
হ্রদ বেষ্টিত পাহাড়ী কন্যা রাঙামাটিতে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের কারণে বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বাঘাইছড়ি উপজেলা ৩১টি গ্রাম বন্যায় ভাসছে। বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে- লংগদু, কাউখালী, বিলাইছড়ি,বরকল নানিয়ারচর উপজেলার নিন্মাঞ্চলে। জেলার ২১টি পয়েন্টে পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটেছে। রাঙামাটি-চটগ্রাম সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিলো সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা ৩১টি গ্রাম বন্যায় ভাসছে। উপজেলার ৫৫টি আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে ৪০টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ১ হাজার ৭০০ লোক জন আশ্রয় গ্রহণ করেছে। প্রশাসনের পক্ষে ১৪ মেট্রিকটন খাদ্যশষ্য বিতরণ করা হয়েছে। 

হু হু করে পানি বাড়ছে লংগদু, কাউখালী, বিলাইছড়ি,  জুরাছড়ি, বরকল, নানিয়ারচর উপজেলার নিন্মান্চলে। এইসব এলাকার নিন্মাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি দেখা দিয়েছে। নিন্মবিত্তরা চরম দুর্ভোগে পোহাচ্ছ। জুরাছড়ির শলক খাল, বিলাইছড়ির রাইংখ্যাং খাল, বাঘাইছড়ির কাচালং, মাচালং, নানিয়ারচরের চেঙ্গী খাল, লংগদুর মাইনী খাল, বরকলের কর্ণফুলী নদী ও কাউখালী উপজেলার মাতামুহুরীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। 

তলিয়ে যাচ্ছে এই ৭টি উপজেলার নিন্মাঞ্চল। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। আবার জেলার নদ-নদীতে পানি বেড়ে সেই পানি প্রবাহিত হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদে।

এতে করে (২২ আগস্ট) বিকেল পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর ১০৪ এমএসএলে এসে ঠেকেছে। কাপ্তাই হ্রদের ধারণ ক্ষমতা ১০৯ এমএসএল। রুল কার্ভ অনুযায়ী হ্রদে পানির স্তর ১০৭-৮ এমএসএল হলেই পানি বিদ্যুৎ বাঁধ রক্ষায় ১৬ স্পীল ওয়ে খুলে দিতে হবে। অথচ বুধবার বিকেল পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে ১০১ এমএসএল ছিলো পানির স্তর। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত মাত্র এক দিনেই পানির স্তর ৩ এমএসএল বেড়ে গেছে। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখনও তার পানি ছাড়ার বিষয়ে কোন সীদ্ধান্তে পৌঁছেনি। বন্যা দুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে সেনাবাহিনীর সদস্যসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। 

টানা ভারী বর্ষণে জেলার ২১ পয়েন্ট পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটেছে। রাঙামাটি- চট্টগ্রাম সড়কের ঘাগড়া কলাবাগান এলাকায় পহাড় ধ্বসের কারণে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিলো। ক্ষতিগ্রস্থ সড়কের পাহাড় ধসের মাটি সরাতে মাঠে নেমেছে রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যগন। রাঙামাটি- চট্টগ্রাম সড়কের ঠান্ডাছড়ি ও রাঙামাটি- খাগড়াছড়ি সড়কের কুতুকছড়িতে সড়ক ডুবে গেছে। এতে রাঙামাটির সাথে চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ির সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে। তবে বিকেলের দিকে সড়কের পানি কমার পর ছোট যানবাহন চলাচল শুরু করে। যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক আছে বান্দরবানের সঙ্গেও। কাপ্তাই হ্রদে উজানের প্রবল স্রোতের কারণে উপজেলাগুলোর সাথে জেলার নৌ-পথে যোগাযোগও অনেকটা বিচ্ছিন্ন। 

রাঙামাটি সদরে ২৯টি ছাড়াও উপজেলাগুলোয় ২৬২টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ৬৫ জনকে রাঙামাটির আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় নেওয়ার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন সূত্র। বাঘাইছড়ি উপজেলার মারিশ্যা-বাঘাইহাট সড়কে বুধবার ও বৃহস্পতিবার পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে করে বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। সকালে বাঘাইছড়ির মারিশ্যা-বাঘাইহাট সড়কের প্রশিক্ষণটিলা নামক এলাকায় পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় যান চলাচল বন্ধ  রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে খাগড়াছড়ির বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাকসুদুর রহমান। 

জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, রেডক্রিসেন্ট,  ফায়ার সার্ভিসসহ একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। একইসাথে ব্যপক মাইকিং করে জনগণের মাঝে সচেতনতা বাড়াচ্ছে। ২০১৭ সালে ভয়াবহ পাহাড় ধসে ৫ সেনা কর্মকর্তাসহ ১২০ জন মানুষের মৃত্য হয়। প্রশাসন প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে।

বৃষ্টি ও ভারতীয় উজানের পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কথা নিশ্চিত করে বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীণ আক্তার বলেন, উপজেলায় ৩১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ৫৫টি আশ্রয় কেন্দ্রের ৪০টিতে প্রায় ১৭০০ দুর্গত লোকজন আশ্রয় গ্রহণ করেছে। 

বৃহস্পতিবার কাউখালী উপজেলাতেও বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। উপজেলা সদরে অবস্থিতসহ আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রায় ২০টি বসতঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। দুর্গতদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। গত ২ যুগেও কাউখালীর লোকজন এত বন্যার পানি দেখেনি বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। 

কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হ্যাপী দাস বলেন, বন্যাদুর্গত পরিবারগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্য করা হবে। 

রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কলাবাগান এলাকার পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে সড়ক বিভাগের লোকজন গিয়ে সড়কটির মাটি সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করেছে। রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক সড়কের পানিতে ডুবে যাওয়া অংশের পানি কমে গেলে আবারও বিকেল  থেকে ছোট যান চলাচল শুরু হয়েছে। জেলার বিভিন্ন সড়কে ছোট-বড় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটলেও বড় কোন পাহাড় ধ্বসের খবর পায়নি বলে যোগ করেন এ কর্মকর্তা।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close