ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

এইচএসসির পরীক্ষা বাতিল নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট, ২০২৪, ৩:৩৫ এএম আপডেট: ২২.০৮.২০২৪ ৮:৩০ এএম  (ভিজিট : ৩৮১)
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিলের পর তা নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এমনকি পরীক্ষার্থীদেরও অনেকেই এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। অনেকেই বলছেন, পরীক্ষা না দিয়ে ফল প্রকাশিত হলে তা মন্দ নজির হয়ে থাকবে। এই ফলাফলে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী জীবনে ভুগতে হবে। 

মঙ্গলবার সচিবালয়ের ভেতরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করেছে সরকার। সেদিন এইচএসসি ও সমমানের অবশিষ্ট পরীক্ষাগুলো বাতিল ঘোষণা করে আদেশ জারি করে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। 

বুধবার সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, সেটি বহাল থাকছে। এখন এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হলে নিরাপদ পরিস্থিতি বহাল থাকবে কি না, প্রশ্নপত্রের গোপনীয়তা রক্ষা করা যাবে কি না- এ পরীক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আসলে আমরা জানি না এরা কারা। তিনি বলেন, সবমিলিয়ে পরীক্ষার পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি আছে। চেয়েছিলাম আরও বিশ্লেষণ করতে। কিন্তু আপনারা জানেন যেসব ঘটনা ঘটেছে তা অনাকাংখিত।

পরীক্ষার ফল কীভাবে দেওয়া হবে এ বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষ্কার করে কিছু জানাননি। তবে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, একটা রক্ষাকবচ আমার কাছে মনে হয়েছে, এসব পরীক্ষার্থী পুরো বছর পরীক্ষা দিয়েছে। তারা টেস্ট-প্রিটেস্ট দিয়েছে। আমি সব কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করব, তারা যেন শিক্ষার্থীদের সব বিষয়ের সব মূল্যায়নপত্র দেয়। 

প্রাণঘাতী করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত হয়নি এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফল প্রকাশ করা হয়। জেএসসির ২৫ শতাংশ ও এসএসসির ৭৫ শতাংশ ফলের ভিত্তিতে এইচএসসি অটোপাসের ফল প্রকাশ করা হয়। তবে এ ফল প্রকাশে মান বণ্টন, আইন সংশোধনসহ অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেছিলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরীক্ষা বন্ধ থাকায় তাদের মানসিক চাপে ফেলেছে। এ ছাড়া কোটা আন্দোলনের কারণে অনেক শিক্ষার্থী মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত নন। অনেক সহপাঠী আহত, হাসপাতালে ভর্তি।

এ অবস্থায় তারা স্থগিত পরীক্ষাগুলো আর দিতে চান না। তাই তারা ইতিমধ্যে হওয়া পরীক্ষা এবং এইচএসসির পরীক্ষা বাতিল নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া স্থগিত বিষয়ে এসএসসির সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে এইচএসসির ফলাফল প্রকাশের পক্ষে তারা।

গত ৩০ জুন থেকে সিলেট বোর্ড ছাড়া সারা দেশে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। বন্যার কারণে সিলেট বোর্ডের পরীক্ষা ৯ জুলাই শুরু হয়। সাতটি পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছিল। পূর্বঘোষিত পরীক্ষাসূচি অনুযায়ী, ১১ আগস্ট লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। এই পরীক্ষায় ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন অংশ নিয়েছিল। কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালীন গত ১৬ জুলাই রাতে সারা দেশে স্কুল, কলেজ, পলিটেকনিকসহ সব বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর ১৮ জুলাইয়ের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়। পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেলে ১ আগস্ট পর্যন্ত উচ্চ মাধ্যমিকের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ৪ আগস্ট থেকে পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবার কথা ছিল। কিন্তু সেই পরীক্ষাগুলোও স্থগিত হয়ে যায়। বার বার স্থগিতের পর ১১ আগস্ট থেকে নতুন সূচিতে পরীক্ষা শুরুর কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সরকার পতনের পর সহিংসতায় বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রশ্নপত্র পুড়ে গেলে পরীক্ষা ফের স্থগিত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। 

সর্বশেষ আগামী ১১ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত পরীক্ষাগুলো নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিল শিক্ষা বোর্ড। সেটি অনুমোদনও করা হয়। পরীক্ষার্থীরা সোমবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে পরীক্ষায় বসার মতো অবস্থায় নেই বলে বিক্ষোভ করেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পরীক্ষার্থীরা চান, ইতিমধ্যে যে কয়টি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে, তার ভিত্তিতে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হোক। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে যৌক্তিক দাবি পূরণের ইতিবাচক আশ্বাসে তারা আন্দোলন স্থগিত করেন। শিক্ষার্থীদের দাবির পরে সকালে এইচএসসি পরীক্ষার বাকি বিষয়গুলোর পরীক্ষা অর্ধেক প্রশ্নোত্তরে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আর পরীক্ষা ১১ সেপ্টেম্বর থেকে পরীক্ষা আরও ২ সপ্তাহ পেছানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা না মেনে সচিবালয়ে ঢুকে বিক্ষোভ করেন। আন্দোলনের মুখে একপর্যায়ে এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হয়।

নটর ডেম কলেজের সাধারণ এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের নামে দেওয়া একটি বিবৃতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে তারা বলছেন, এইচএসসির ফল শুধু এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েই মূল্যায়ন করা উচিত। মোটকথা, তাদের অবস্থানটি পরীক্ষার পক্ষে। তবে তারা বলছেন, শুধু আহত (ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত) শিক্ষার্থীদের তালিকা করে তাদের বিষয় ‘ম্যাপিং’ কিংবা ‘অটোপাস’, আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবশিষ্ট পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়নই এই সমস্যার সমাধান বলে তারা মনে করেন।

গতকাল পরীক্ষার দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বেশকিছু শিক্ষার্থী মানববন্ধন ও মিছিল করে। তারা অটোপাস নয়, মেধায় পাসের পক্ষে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করে। 

সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা সচিবালয়ের গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে একটি অস্থিতিশীল এবং অপ্রত্যাশিত পরিবেশ তৈরি করেছেন। সচিবালয়ে শিক্ষাসচিব থেকে শুরু করে আমাদের সবাইকে অবরুদ্ধ করে ফেলেন। পরে সচিব শিক্ষা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করে পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন। হাসনাত আরও বলেন, পরীক্ষা বাতিল করার বিষয়কে আমরা কখনোই সমর্থন করি না। কারণ পরীক্ষা ছাড়া একজন শিক্ষার্থীকে কখনোই মূল্যায়ন করার সুযোগ নেই। পরীক্ষাই হচ্ছে একজন শিক্ষার্থীর মেধা মূল্যায়নের একমাত্র মাধ্যম। এই যে পরীক্ষা ছাড়া মূল্যায়ন, তার মধ্য দিয়ে যারা প্রকৃত মেধাবী, যারা সারা বছর ধরে পড়াশোনা করেছে, তাদেরকে মূলত নিরুৎসাহিত করা হলো। সুতরাং আমরা চাইব আর কখনোই এ ধরনের ডিসিশন চাপে পড়েই হোক বা যেকোনো কারণেই হোক, পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মুহা. আমানুল্লাহ সময়ের আলোকে বলেন, স্থগিত পরীক্ষা বাতিল হওয়ার সিদ্ধান্তটি ভালো নজির স্থাপন করবে না। পরীক্ষা পিছিয়ে, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এই পরীক্ষা শেষ করা যেত। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পরীক্ষাবিহীন পাস নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়বে।

সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফল প্রকাশ : ফল কীভাবে করা হবে এ নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা বৈঠক করেছেন। সেখানে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সিস্টেম অ্যানালিস্টরা বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। তার মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য আলোচনা ছিল, অনুষ্ঠিত পরীক্ষাগুলোর নম্বর এবং যেগুলো হয়নি সেগুলোর সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফলাফল প্রস্তুত করা।

কীভাবে সাবজেক্ট ম্যাপিং হবে, সেই বিষয়ে বিভিন্নজন বিভিন্ন মত দিয়েছেন। কেউ এসএসসির ফলাফল দেখে ম্যাপিং করতে বলেছেন। আবার কেউ জেএসসি ও পিইসি পরীক্ষার ফলও পর্যালোচনার বিষয়টি তুলেছেন। বিষয়টি নিয়ে আরও বৈঠক করে একটি চূড়ান্ত প্রস্তাব প্রস্তুত করে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিবে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। 

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।

এ বিষয়ে অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, যেসব পরীক্ষাগুলো হয়েছে, সেগুলোর নম্বর এবং যে পরীক্ষাগুলো হয়নি, সেগুলোর সাবজেক্ট ম্যাপিং বা কোন উপায়ে ফল প্রকাশ করা যায়; সে বিষয়ে খসড়া প্রস্তাবনা পাঠাতে বোর্ডগুলোর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সিস্টেম অ্যানালিস্টদের বলা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে খসড়া প্রস্তাবনা পেলে, আমরা তা যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। 


সময়ের আলো/আরএস/





এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close