ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

লাশের স্তূপে দেওয়া আগুনে পুড়ে ছাই শিক্ষার্থী বায়েজিতের স্বপ্ন
প্রকাশ: বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০২৪, ১:০৩ পিএম  (ভিজিট : ৭০৪)
‘মাকে সুন্দর একটি বাড়ি উপহার দেবার স্বপ্ন ছিল বায়েজিদ বস্তামীর (২৩)। ছয় মাস বয়সী শিশুকে সুশিক্ষিত করার পাশাপাশি একমাত্র আদরের ছোট বোনকে বড় অফিসার হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন ছিল তার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ৫ আগস্ট ঢাকার বাইপেল আশুলিয়া থানার সামনে পুলিশের গুলিতে ছেলে বায়েজিদ নিহত হওয়ার পর ১৩ শিক্ষার্থীর লাশের স্তূপে পুলিশ পিকআপে তাকেও পুড়ে ফেলা হয়।’

বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুরে কথাগুলো সময়ের আলোকে বলছিলেন বায়েজিদের মা রেনুয়ারা। ছেলের অকাল মৃত্যু তাকে যেন বাকরুদ্ধ করেছে। 

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বায়েজিদ উপজেলার উমার ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কৈগ্রাম এলাকার মৃত সাকোয়াদ হোসেনের ছেলে। তিনি ২০১৮ সালে ফারসিপাড়া দাখিল মাদরাসা থেকে এসএসসি পাশ করেন। এরপর ২০২০ সালে ঢাকার উত্তরা আইডিয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে বাইপাইল আশুলিয়া সাভার এলাকার ভেনেসা বাংলাদেশ লিমিটেড নামের একটি কোম্পানিতে চাকরি শুরু করেন।

চাকরির সুবাদে ওই গার্মেন্টসে রিনা আক্তার নামে এক নারী শ্রমিকের সঙ্গে দুই বছর আগে বিয়ে হয় বায়েজিদের। স্ত্রী ও ছয় মাসের একটি ছেলে শিশুসহ পরিবারে দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। বাবা মারা যাওয়ার পর অভাবের সংসারে বায়েজিদই ছিলেন একমাত্র ভরসা। মেধাবী এ শিক্ষার্থীর এভাবে ঝরে পড়াতে বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী ও আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। পরিবারের দাবি বায়েজিদকে যেনো রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় স্বীকৃতি দেওয়া হয়।  

জয়পুরহাটের প্রিন্সের চাতাল এলাকার আঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, ‘বায়েজিদ আর আমি ঢাকায় একই ফ্যাক্টরিতে কাজ করতাম। ওইদিন বিকেলে আংশিক পোড়া মানিব্যাগের ভেতর থেকে বায়েজিদের ছবি ও আইডি কার্ডসহ একটি মোবাইল পায় সেনাবাহিনীর লোকজন। এরপর ওই মোবাইল থেকে বায়েজিদের স্ত্রীর কাছে ফোন দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, বায়েজিদের লাশ পাওয়া গেছে। এবং লাশগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।’  

বায়েজিদের স্ত্রী রিনা আক্তার সময়ের আলোকে বলেন, আশুলিয়া থানা থেকে কে বা কারা ফোন দিয়ে বলেন, ‘কলেজের আইডি কার্ড, ছবি ও মোবাইলসহ বায়েজিদ নামে এক ব্যক্তির পোড়া মরদেহ পাওয়া গেছে। এরপর কয়েকজন ছাত্র কাগজে সই দিয়ে মরদেহসহ হাত খরচের জন্য কিছু টাকা দিয়ে স্বামীর লাশ হস্তান্তর করেন।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘একদিকে আর্থিক সংকট অন্যদিকে স্বামীর অকাল মৃত্যুতে ছয় মাসের শিশু সন্তানকে নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।’

নিহতের বড় ভাই বড় ভাই কারিমুল বলেন, ‘বায়েজিদকে আশুলিয়া থানায় গুলিবিদ্ধ করে পুরে ফেলে পুলিশ। এরপর আইডি কার্ড দেখে পরিচয় শনাক্ত করার পর ওখানকার ছাত্র সমন্বয়কারী ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ৬ আগস্ট বিকেলে বায়েজিদের স্ত্রীর হাতে লাশ তুলে দিলে গভীর রাতে মরদেহটি গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। পরের দিন সকাল আটটায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মরহুমের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।’

ধামইরহাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বাহাউদ্দীন ফারুকী সময়ের আলোকে বলেন, ‘বায়েজিদের পরিবারের লোকজন এসে সরকারের কাছ থেকে অনুদান পাওয়ার বিষয়ে আমাদের কাছে আইনগত সহযোগিতা বিষয়ে কথা বলেন। এবং আমদের পক্ষ থেকে তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছি।'

তিনি আরও বলেন, ‘বায়েজিদের মৃত্যুর মামলা আমরা তো এখানে করতে পারবো না। তিনি যেখানে মারা গেছেন সে এলাকার থানায় মামলা করতে হবে। আইনগতভাবে পোস্টমর্টেম করার বিষয়টি ও আমাদের এক্তিয়ারের বাইরে।’


সময়ের আলো/এএ/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close