ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

পরিবহন মালিকদের আয় বাড়লেও কমেনি ভাড়া
প্রকাশ: বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০২৪, ৫:২০ এএম আপডেট: ২১.০৮.২০২৪ ৭:৪৮ এএম  (ভিজিট : ৩৪৩)
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের সব স্তরেই লেগেছে পরিবর্তনের হাওয়া। দিন বদলের হাওয়া লেগেছে পরিবহন খাতেও। বন্ধ হয়েছে সড়কে চাঁদাবাজিসহ সব অপতৎপরতা। আগে দূরপাল্লা গাড়িপ্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, গণপরিবহনে ৮০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা ও লেগুনায় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা চাঁদাবাজি হতো। যা এখন শূন্যের কোটায়। ফলে মালিকদের আয় বেড়েছে, তবে কমেনি যাত্রী ভাড়া। এ অবস্থায় নতুন সরকারের কাছে পরিবহন ভাড়া কমানোর জোর দাবি জানিয়েছে সাধারণ যাত্রীরা।

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাঁদাবাজি বন্ধের সঙ্গে ভাড়া কমানোর কোনো সম্পর্ক নেই। যাত্রী ভাড়া কমাতে হলে তেলের দাম ও পরিবহন সংশ্লিষ্ট আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশের দাম কমাতে হবে। তা হলে ভাড়ার তালিকা সংশোধন করা যাবে। পরিবহন ভাড়া কম রাখা যাবে। তবে তাদের এই যুক্তি মানতে নারাজ যাত্রী কল্যাণ নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী সময়ের আলোকে বলেন, তেলের দাম আজকে বাড়ানো হয়নি। এটা অনেক আগেই বেড়েছে। সম্প্রতি যেটা কমেছে সেটি হলো চাঁদাবাজি। এমন নয় যে চাঁদাবাজি কমেছে, তেলের দাম বেড়েছে। এ রকম যুক্তি যদি তারা সামনে নিয়ে আসে আমি মনে করি, এটা  জনস্বার্থবিরোধী। নতুন সরকারকে এই জায়গাগুলোতে কঠোর হতে হবে।

গত সোমবার রাজধানীর গাবতলী ও কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীদের ডাকাডাকি করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। এ সময় ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে হানিফ পরিবহনের রাজশাহীগামী  মো. বেলাল বলেন, দেশে পরিবর্তন এসেছে। সিন্ডিকেট ভেঙে গেছে। বাজারেও পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। সব পরিবহনের চাঁদাবাজিও বন্ধ হয়েছে, কিন্তু ভাড়া আগের মতোই আছে। এটাও সংস্কার জরুরি। আগে হানিফ পরিবহনে ঢাকা টু রাজশাহী ৬৯০ টাকা ভাড়া ছিল, এখনও তা-ই নেওয়া হচ্ছে। চাঁদাবাজি যেহেতু বন্ধ হয়েছে এখন ভাড়া কমানোর দাবি জানাই।

হানিফ পরিবহনের ম্যানেজার বলেন, আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৩০০ টাকা চাঁদা দেওয়া লাগত এখন কমেছে। এখন  চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নকে টার্মিনাল ফি বাবদ ৭০ টাকা ও পুটিয়ায় রাজশাহী জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সংগঠন পরিচালনা ব্যয়  ও সার্ভিস চার্জের নামে ৩০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। এ ছাড়া সড়কে আর কোনো বাড়তি চাঁদা দিতে হয় না। ভাড়া কমানোর বিষয়ে তিনি বলেন, তেলের দাম কমানোর পর এসব রুটে ভাড়া ১০ থেকে ২০ টাকা করে কমেছে। আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভাড়া ছিল  ৮৩০ টাকা। এখন নেওয়া হচ্ছে ৮২০ টাকা, রাজশাহীর ভাড়া ছিল ৭১০ টাকা এখন ৬৯০ টাকা। নাটোরের ভাড়া ছিল ৫৯০ টাকা এখন সেটা ৫৭০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এটি বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়া। এখানে ভাড়তি ভাড়া নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে তেলের দাম ও পরিবহনের যন্ত্রাংশের দাম কমলে ভাড়া আরও কমানো সম্ভব হবে। টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, একই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে গ্রামীণ ট্রাভেলস, দেশ ট্রাভেলস ও শ্যামলী পরিবহনে।

শ্যামলী এন আর পরিবহনের ম্যানেজার বলেন, এখনও চাঁদাবাজি পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। শুরুতে কয়েক দিন বন্ধ থাকলেও এখন আবার শুরু হয়েছে। সরাসরি চাঁদাবাজি না হলেও ভিন্নভাবে হচ্ছে। আগে গাড়ি থামিয়ে চাঁদাবাজি হতো আর এখন কাউন্টারে স্লিপ দিয়ে চাঁদাবাজি হচ্ছে। ঢাকা থেকে বের হতে গাবতলীতে ৫০ টাকা পার্কিং চাঁদা দিতে হয়। এরপর শিবগঞ্জে মালিক শ্রমিক সংগঠনের নামে ৩০০ টাকা ও পুটিয়ায় ৩০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। আগে সরাসরি খেত এখন ঘুরিয়ে খায় এই আর কী।

গ্রামীণ ট্রাভেলসের ম্যানেজার কবির খান সময়ের আলোকে বলেন,  আগে ঢাকা থেকে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা চাঁদা দিতে হতো।  এ ছাড়া চিটাগংয়ের গাড়িতে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালেই সাড়ে ৫০০ টাকা চাঁদা দিতে হতো। সবচেয়ে বেশি চাঁদাবাজি হতো সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনালে। মহাখালীতে কথাও বলা যেত না। খুব জুলুম ছিল। ফেডারেশনের আন্ডারে শ্রমিক ইউনিয়নের লোকজনে এই চাঁদাবাজির সঙ্গে জরিত ছিল। এনায়েত উল্লাহরা তখন ফেডারেশনের নেতৃত্বে ছিল। এখন গাবতলী সিটি করপোরেশনের পার্কিংয়ে ৫০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। আর মহাখালী পার্কিংয়ে ৫০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। এর বাইরে আর কোনো চাঁদা দিতে হয় না। এখন নিঃসন্দেহে ভালো একটা পরিবেশ রয়েছে।

ভাড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চাঁদা হয়তো কমছে, তবে চাঁদার ওপর ভাড়া কখনো নির্ধারণ হয় না। ভাড়া নির্ধারণ হয় কিলোমিটার ও তেলের দামের ওপর নির্ভর করে। এর বাইরেও কিছু বিষয় আছে যেমন-টায়ার, টিউবসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশের দাম পর্যায়ক্রমেই বাড়ছে। যে টায়ার আমরা আগে ৩০ হাজার টাকায় কিনেছি, সেটি এখন ৬৮ থেকে ৭০ হাজার টাকা।  তেলের দাম কমলে ভাড়াটা সরকার থেকেই নির্ধারণ হবে। এখন যেটা নেওয়া হচ্ছে সেটাও বিআরটিএর নির্ধারিত। গাবতলী টার্মিনালে বরিশালগামী শাকুরা পরিবহনের ম্যানেজার মো. শিপন বলেন, আগে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদা দেওয়া লাগত এখন শুধু গাবতলীতে ৫০ টাকা পার্কিং ভাড়া দিতে হয়। অন্যান্য চাঁদাবাজি বন্ধ রয়েছে।

শুধু দূরপাল্লা নয়, চাঁদাবাজি বন্ধ হয়েছে লেগুনা ও নগর পরিবহনেও। আগে রাজধানীতে লেগুনা প্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা চাঁদাবাজি হতো। আর গণপরিবহনে ৮০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। চাঁদাবাজি বন্ধের পর মালিক পক্ষের আয় বাড়লেও  ভাড়া কমেনি। এতে তাদের মনে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে।  

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন,  ২০০৯ সালে যখন ভাড়া নির্ধারণ হয় ব্যয় বিশ্লেষণে তখন আমাদেরকে সেখানে রাখা হয়নি।  ২০১১ সালে যখন সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দায়িত্ব নিলেন তখন আমরা তার কাছে ভাড়া নির্ধারণে বার্গেনিংয়ের সুযোগ চাই। কিন্তু আমরা গিয়ে দেখলাম তারা একটা ব্যয় বিশ্লেষণ করেছে। সেখানে নানা খাতে অযৌক্তিক ব্যয় ধরেছে তারা। যেমন প্রতি বছর টায়ার লাগে ছয়টা তারা ধরেছে ১২টা, আমরা দেখি তারা রাতে রাস্তার পাশে গাড়ি পার্কিং করে রাখে, কিন্তু তারা বছরে গ্যারেজ ভাড়া নিচ্ছে দুই লাখ টাকা। এগুলো কিন্তু  ভাড়া থেকে নেওয়া হচ্ছে। এ রকম নানা অযৌক্তিক খরচ বাড়ানো হয়েছে। এ রকম একটু আধটু খরচ বাড়া মানে চাঁদাবাজিটাকে বৈধতা দেওয়া।  কারণ আমরা জানি ওই চাঁদাবাজির সঙ্গে জাতীয় রাজনীতির অনেক কিছু জড়িত ছিল তখন। এখন চাঁদা নেই ওই ইললিগ্যাল যে ভাড়াটা বাড়ানো হয়েছে সেগুলো তো এখন আর প্রযোজ্য নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু যদি সংস্কার হয় সবার আগে পরিবহন খাত সংস্কার হওয়া অত্যন্ত জরুরি। কেন নয় এখানে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত।

তিনি বলেন, একটা লেগুনাতে দৈনিক চাঁদাবাজি কমেছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। অর্থাৎ এই ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা সরাসরি মালিক পাচ্ছে। আর জ্বালানি খরচের চেয়ে অনেক বেশি মুনফা তার পকেটে ঢুকছে। লোকাল সার্ভিসের ক্ষেত্রে একটা বাসে ৮০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। আর দূরপাল্লার ক্ষেত্রে ৬০০ টাকার মতো।


 

সময়ের আলো/আরএস/





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close