ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ফুটপাথে কমেছে চাঁদাবাজি
প্রকাশ: বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০২৪, ৪:৩৫ এএম  (ভিজিট : ২১৬)
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাথে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছেন আল আমিন। সেই সুবাদে তাকে রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও পুলিশকে দিতে হতো টাকা। এতে প্রতিদিন যা আয় করত তার বড় অংশই চলে যেতো চাঁদায়। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি সময়ের আলোকে বলেন, কিছু দিন আগেও পুলিশ ও নেতাদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ছিল সবাই। কারণ তাদের টাকা দিয়েও ব্যবসা করতে কষ্ট হতো। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগের পর সেই চিত্র পাল্টে গেছে। এখন কাউকে টাকা দিতে হয় না। প্রতিদিন যা আয় করছি তার সম্পূর্ণটাই নিজের কাছে থাকে। তা ছাড়া ব্যবসা করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের হুমকিও নেই বলে জানান তিনি। রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে এমন কথা বলছিল ফুটপাথে ব্যবসা করা শত শত দোকানি।

সোমবার সরেজমিন নিউমার্কেট এলাকার দেখা যায়, আগের চেয়ে ফুটপাথ ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেড়েছে। এতে তাদের মধ্যে কর্মচঞ্চলতাও বেড়েছে। কারণ আগে পুলিশ ও বিভিন্ন মহলের রাজনৈতিক নেতাদের কথামতো চলতে হতো তাদের। চাঁদার টাকা দিতে না পারলে উচ্ছেদের নামে দেওয়া হতো হুমকি। তবে এখন কাউকে টাকা দিতে হচ্ছে না বলে জানান ব্যবসায়ীরা। 

তারা জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে কেউ চাঁদা নেওয়ার সাহস পায়নি। কারণ এতদিন আওয়ামী লীগের নামধারী বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা কয়েক দফায় চাঁদা নিত। তা ছাড়া দিনে একবার পুলিশকেও দিতে হতো টাকা। এতে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতো। তবে সরকার পদত্যাগের পর নিজেদের মতো করে ব্যবসা করছেন তারা। 

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীতে প্রায় ২ লাখ হকারের ওপর চাঁদাবাজি করত দুই শতাধিকেরও বেশি লাইনম্যান। আওয়ামী লীগের কিছু নেতা তাদের নিয়ন্ত্রণ করত। যারা পরিচিত ছিল গডফাদার হিসেবে। এ ছাড়া চাঁদার টাকা যেত পুলিশ, মাস্তান এবং এলাকাভিত্তিক কিশোর গ্যাংয়ের হাতে। তা ছাড়া পুলিশ তাদের সঙ্গে থেকে নীরব ভূমিকা পালন করত। সব কিছু জানার পরও চুপ থাকত। কিছু বলতে গেলে দেওয়া হতো উচ্ছেদের হুমকি।

ফুটপাথে চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে একাধিক হকার জানান, রাজধানীর নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, সায়েন্স ল্যাব ও এলিফ্যান্ট রোড এলাকা ঘিরে ফুটপাথ ও সড়কে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ দোকান রয়েছে। এসব এলাকায় টেবিল ও চৌকির আকারের ওপর নির্ভর করে চাঁদার পরিমাণ। পাঁচ ফুট লম্বা আর তিন ফুট চওড়া একটি টেবিল এবং তার সামনে একটি টুল বসিয়ে ব্যবসা করতে স্থানভেদে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা চাঁদা দিতে হতো প্রতিদিন। তবে ঈদকে কেন্দ্র করে এই হারের পরিমাণ আরও বেড়ে যেতো। এ ছাড়া বিদ্যুৎ ও নিরাপত্তার নামে চাঁদা আদায় করা হতো ব্যবসায়ীদের থেকে। পুলিশের নাকের ডগায় বছরের পর বছর ধরে চলে আসছিল এমন বাণিজ্য। অথচ পুলিশের ভূমিকা বরাবরই রহস্যজনক ছিল বলে জানায় তারা।

হাসিবুল নামের এক পথচারী বলেন, ফুটপাথের ব্যবসায়ীদের থেকে চাঁদাবাজি বন্ধ হয়েছে ঠিক। কিন্তু অবৈধভাবে ফুটপাথ দখল করে রাস্তার পাশে তারা যে ব্যবসা করছে সেটাও বন্ধ করা প্রয়োজন। কারণ তাদের কারণে মানুষ ফুটপাথ দিয়ে হাঁটতে পারছে না। বাধ্য হয়ে মূল সড়ক ব্যবহার করছে। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। তবে ব্যবসায় চাঁদাবাজি বন্ধ হলে বিভিন্ন পণ্যের দাম কমবে বলেও মনে করেন তিনি।  

মিরাজুল ইসলাম নামের এক ফুটপাথ ব্যবসায়ী বলেন, এখন কোনো ধরনের চাঁদাবাজি না থাকার কারণে দোকানের সংখ্যা বেড়ে গেছে। তবে এসব ফুটপাথের দোকান নিয়ন্ত্রণ করেন সম্মুখ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের চাঁদাবাজি বন্ধ হওয়াতে এখন আমরা শান্তিতে ব্যবসা করতে পারছি। প্রতিদিন যা আয় করি, তার সবটাই পকেটে থাকে। পুলিশ বা রাজনৈতিক নেতাদের টাকা দেওয়া ও হুমকি-ধমকির ভয় নেই। তবে আমরা বাধ্য হয়ে ফুটপাথে ব্যবসা করছি। আমাদের জন্য যদি বিকল্প কোনো জায়গার ব্যবস্থা করা হতো তা হলে আমরা ফুটপাথে বসতাম না।

সময়ের আলো/আরএস/





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close