ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

দাবিতে সরব রাজপথ
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০২৪, ৬:১৫ এএম  (ভিজিট : ৩৬৬)
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হয় নীল শার্ট আর খাকি রঙের প্যান্ট পরিহিত গ্রাম পুলিশ। প্রথম দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত প্রায় ৫০ হাজার গ্রাম পুলিশ তাদের জাতীয়করণের দাবিতে এক দিন অবস্থান করেন। পরদিন অর্থাৎ গত শুক্রবার বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান নেন। বিকাল ৪টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে নতুন আরও ৪ জন উপদেষ্টার শপথ অনুষ্ঠান। শপথ অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন সেদিনকার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি গাড়ি থেকে নেমে তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে জানতে চান। একই সঙ্গে তিনি তাদের দাবি-দাওয়া সংক্রান্ত কাগজ হাতে তুলে নেন। এমনকি পরবর্তী রোববার সচিবালয়ে এ বিষয়ে আলাপ করবেন বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু সেদিন রাতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তার দফতর পুনর্বণ্টন হয়ে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তরিত হয়।

গ্রাম পুলিশরা দলবেঁধে আবার গত শনিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারি বাসভবন যমুনার আশপাশে অবস্থান করেন। কিন্তু সেদিন তেমন কোনো ফলাফল তাদের হাতে আসেনি। যে কারণে রোববার আবার তারা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নেন। এদের অবস্থান ছিল চোখে পড়ার মতো। একমাত্র পোশাকের কারণে। গতকাল সোমবার তারা দলবদ্ধভাবে আবার অবস্থান নেন প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ের সামনে, আবদুল গনি রোডে। তাদের অবস্থানের কারণে পুরো এলাকা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। বিকাল ৪টার পর থেকে সচিবালয়ের সব গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি সচিবালয় থেকে কোনো ধরনের গাড়ি বের হতে পারেনি বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন।

গ্রাম পুলিশের দাবির মতো এখন অনেক সংগঠন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থার কর্মকতা ও কর্মচারীরা এখন তাদের বিভিন্ন দাবিতে সোচ্চার। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে একেবারে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তারা দাবি নিয়ে সরগরম। এই কার্যক্রম কয়েক দিন ধরে অব্যাহত রয়েছে। তাদের ঘরে ফেরানোর জন্য সংশ্লিষ্টরা বেশ তৎপর বলে একাধিক সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে।

সচিবালয়ের অভ্যন্তরে অনেক আগে উত্তপ্ত হয়েছিল। পরবর্তীতে যা রূপ নেয় ‘জনতার মঞ্চ’। সেই উত্তালের পর সচিবালয়ে আর কখনো এত উত্তাল দেখা যায়নি। অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহণের পর থেকেই সচিবালয়ের কর্মকর্তারা সোচ্চার হয়ে ওঠেন তাদের ন্যায্য দাবিতে। আর সেই দাবি হচ্ছে, পদোন্নতি বঞ্চিতদের পদোন্নতি দেওয়া। ইতিমধ্যে বেশ কয়েক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এখনও বেশ কয়েকটি দাবিতে সরগরম কর্মচারী ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা। নন-ক্যাডার সমিতি গত কয়েক দিন ধরে তাদের দাবিতে সচিবালয়ের অভ্যন্তরে মানববন্ধন করেছে। এমনকি তাদের রেশন দেওয়াসহ অন্যান্য দাবিতে সচিবালয়ে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টাকে অবহিত করেছেন। এরপরও সোমবার তারা তাদের দাবিতে মানববন্ধন করেছে।

সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের এই পদগুলো রাজস্ব খাতে নেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করে। একই দিনে অর্থাৎ বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক সমিতি জাতীয়করণের দাবিতে প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করেন। এই সংগঠনের লাগোয়া অবস্থান নেয় বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের ফিল্ড সার্ভিসেস ডেলিভারি কর্মকর্তারা। তারা তাদের ব্যানারে তাদের চাকরি স্থায়ী করার দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত করে তোলে প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণ। এক সারিতে বসা সাদা অ্যাপ্রোন পরা নার্সরা। তাদের দাবি বেতন বৈষম্য দূর করা। আবার এক পাশে দাঁড়িয়ে নীল রঙের নার্সরা দাবি তুলছেন, ভুয়া নার্স বাতিল করতে হবে।

সচিবালয়ের অন্যদিকে অর্থাৎ আবদুল গনি রোডে শ্যাডো ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে আয়নাঘরের প্রস্তুতকারীদের বিচারের দাবি জানিয়েছে। শুধু তাই নয়, আগামীতে যেন এ ধরনের কোনো আয়নাঘর করতে কেউ সাহস না পায় তার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে। এ রাস্তায় অবস্থান নেয় জাতীয় মহিলা সংস্থা বাস্তবায়িত ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পে কর্মরত নারীরা। তারা বিভিন্ন স্লোগানে অবস্থান নিয়ে তাদের দাবি উচ্চারণ করেন। এর মধ্যে রয়েছে- চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে রাজস্ব খাতে তাদের নেওয়া। এর আগে তারা অবশ্য গত রোববার প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। তাদের বিশেষ স্লোগান হচ্ছে, আর নয় প্রকল্প, আমরা চাই রাজস্ব। তথ্য আপা প্রকল্পে দুই হাজারের বেশি নারী কাজ করছেন বলে জানা গেছে।

ভিসার কথা বলে একটি প্রতিষ্ঠান ২ হাজার কোটি টাকা প্রতারণা করেছে। এই প্রতারণার মামলা পল্লবী থানা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলে সচিবালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছে একটি সংগঠন। তারা প্রতারণাকারী প্রতিষ্ঠানের বিচার দাবি করেছে। বিভিন্ন দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন অফিসের সামনে। সচিবালয়ের সামনে থেকে শুরু করে মতিঝিল, আগারগাঁও, বনানীসহ আরও অনেক এলাকায় ছড়িয়ে গেছে এই কর্মসূচি।

গতকাল সোমবারও বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে মানববন্ধন হয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদত্যাগের দাবিতে। আবার ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে এখনও চাকরি ফেরত দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন চলছে। চলছে মানববন্ধনও। একইভাবে গুলশানে বেশ কয়েক দিন ধরে ইউসিবিএল প্রধান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ চলছে।

গতকাল আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বেতারের মূল ফটকের সামনে মানববন্ধন হয়েছে। বাংলাদেশ বেতারের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, নিজস্ব শিল্পী ও কলাকুশলীদের চাকরিতে পদোন্নতিসহ বিভিন্ন বৈষম্যের দাবিতে এই মানববন্ধন করা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে- বেতারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বঞ্চনার অবসান, ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতিসহ উপসচিব পদে ন্যায্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি, একীভূত বিসিএস (তথ্য) ক্যাডার করা ও বাংলাদেশ বেতারে নিজস্ব মহাপরিচালক নিয়োগ দেওয়া। 

তারা বলেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্র মেরামতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য জাতীয় গণমাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশ বেতারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। একইভাবে কয়েক দিন ধরে দাবি ওঠে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানের অপসারণের। নতুন কমিশনের চেয়ারম্যান দিলেও আবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অবশেষে আবারও নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়ায় এখন কিছুটা শান্ত পরিবেশ বিরাজ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

রাজপথ ছাড়াও বিভিন্ন মাধ্যমে বিভিন্ন সংস্থার দাবি উঠছে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের এমডিসহ তার সহযোগীদের পদত্যাগ দাবি করেছে ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা মানববন্ধনের মাধ্যমে তাদের কার্যালয়ের সামনে এই দাবি তোলে। তারা বলেছেন, তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

আইসিটি অধিদফতরের রাজস্ব খাতের কর্মকর্তারা পদোন্নতির দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলন করেছে। সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এই দাবি তোলেন। একই সঙ্গে তারা দাবি তুলেছে দ্রুত চাকরি নিয়মিতকরণ ও স্থায়ী করা।

সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের ক্ষতিগ্রস্ত ঠিকাদার সমন্বয় কমিটি কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ ও দুনীতি বন্ধ করাসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে এই দাবি বাস্তবায়ন না হলে সড়ক ভবন ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দেন।

ইডকলের ১০৬ জন কর্মচারীর চাকরি পুনর্বহাল দাবিতে গতকাল কারওয়ান বাজারে মানববন্ধন করে। তারা অভিযোগ করেছে, গত মে মাসে কোনো ধরনের নোটিস ছাড়াই অন্যায়ভাবে নির্বাহী আদেশে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়। নির্বাহী আদেশে তাদের চাকরি পুনর্বহাল করার দাবি জানিয়েছে।

কোনো ধরনের রাজপথ নয়, একেবারে নিভৃতে দাবি জানিয়েছে একসঙ্গে কয়েকটি সংগঠন। তারা বাংলাদেশকে একটি সংবেদনশীল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানায়। এই সংগঠনে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভানেত্রী বিচিত্রা তিরকী, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, এলআরডিএর নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা ও খুশী কবির।

এদিকে বেশিরভাগ দাবি হচ্ছে চাকরি স্থায়ীকরণ, পদোন্নতি ও বেতন বৈষম্য দূর করা। গতকাল প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া ২৫ ক্যাডারের যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি বঞ্চিত সিনিয়র ১৩ থেকে ২২তম ব্যাচের ১৯৫ জন উপসচিব। তারা দীর্ঘ স্মারকলিপিতে এসব উপসচিবদের পিএসসির মেধাতালিকা অনুযায়ী নিজ নিজ ব্যাচের সঙ্গে সিনিয়রিটি নিশ্চিত করে যুগ্মসচিব পদে ভূতাপেক্ষা পদোন্নতি দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছেন।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close