ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

হুমকির মুখে নাকুগাঁও স্থলবন্দর ও ভোগাই ব্রিজ
প্রতিদিন লোপাট অর্ধকোটি টাকার বালু
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০২৪, ৫:৫৯ এএম  (ভিজিট : ২৮০)
প্রতিদিন অন্তত অর্ধকোটি টাকার বালু লোপাট হচ্ছে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার অতি গুরুত্বপূর্ণ পাহাড়ি নদী ভোগাই থেকে। ভারত সীমানা ঘেঁষে নদীর তীর ভেঙে ও গভীর গর্ত খুঁড়ে অবৈধ এ বালু উত্তোলনের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে জেলার একমাত্র স্থলবন্দর নাকুগাঁও স্থলবন্দর এবং সীমান্ত সড়কে নির্মিত ভোগাই ব্রিজ। স্থানীয়দের অভিযোগ, বারবার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার পরও অজ্ঞাত কারণে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না উপজেলা প্রশাসন। বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িতদের দাবি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি নিয়েই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। অন্যদিকে জেলা প্রশাসক বলছেন, এভাবে বালু উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে শেরপুর জেলা প্রশাসক আবদুল্লাহ আল খাইরুম বলেন, কোনোভাবেই নিলামে প্রাপ্ত স্টকের বাইরে বালু উত্তোলনের সুযোগ নেই। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

এদিকে স্থানীয়রা অভিযোগের তীর ছুঁড়েছেন উপজেলা প্রশাসনের দিকে। তারা বলছেন, নিলামপ্রাপ্তরা ভোগাই নদীর নিষিদ্ধ বিভিন্ন এলাকায় গত ৮ জুলাই থেকে দিনে-রাতে দেদার বালু উত্তোলন করে চলেছে। নিলাম ও অর্থ বাজেয়াপ্তের শর্ত উল্লেখ থাকলেও তা জেনেও আমলে নেওয়া হচ্ছে না। বারবার বিষয়টি জানানো হলেও নানা কৌশলে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। অবৈধ বালু উত্তোলনে তার নীরব ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, নিলামে তোলা বালুর পরিমাণ যদি চুক্তিতে উল্লেখিত পরিমাণের চেয়ে কম থাকে সে ক্ষেত্রে ক্রয়কৃত বালু অপসারণের পর আবেদন সাপেক্ষে উপযুক্ত স্থান থেকে শুধু প্রয়োজনীয় পরিমাণ বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এর আগে কোথাও থেকে বালু উত্তোলন করা যাবে না। পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে ইউএনও মাসুদ রানা বলেন, সীমান্তে বালু উত্তোলন করা হলেও বিজিবি কেন ব্যবস্থা নেয় না? এ ছাড়া বালু উত্তোলন বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ডাকা হলেও পুলিশ আসে না। এর দায় পুলিশের ওপরও বর্তায়। তবে ইউএনওর অভিযোগ মানতে নারাজ নালিতাবাড়ী থানার ওসি মনিরুল আলম ভূঁইয়া। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী পুলিশ চাইলে অবশ্যই দেওয়া হবে। এর আগেও দেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বাংলা সনে এক বছরের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদীর পাঁচটি মৌজায় মোট ৯ একর ৮২ শতাংশ জায়গা থেকে বালু উত্তোলনের জন্য বালুমহাল ইজারা দেওয়া হয়। ৯৬ লাখ ৮৬ হাজার টাকায় কালাকুমা, হাতিপাগার, ফুলপুর নয়াবিল ও ম-লিয়াপাড়ায় বালুমহাল ইজারা নেয় জিলানী এন্টারপ্রাইজ। বেশ কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী নাকুগাঁও, কালাকুমা ও তারানী মৌজার নিষিদ্ধ সীমানা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় গত ২৭ জুন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে উপজেলা প্রশাসন প্রায় ১১ লাখ ঘনফুট বালু জব্দ করে। ওই সময় জব্দকৃত সেই বালুর পরিমাণ ৩০ লাখ ঘনফুট বলে গণমাধ্যমকে জানানো হয় এবং জব্দকৃত বালুর বাজারমূল্য দেখানো হয় প্রায় ৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে দুই দফায় জব্দকৃত বালু পরিমাপ করে দেখা যায়, জব্দকৃত বালুর পরিমাণ ১১ লাখ ৭৬ হাজার ৭৯৬ ঘনফুট।

এদিকে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর জব্দকৃত বালু রাতের আঁধারে লুটপাট হতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে জব্দকৃত বালু নিলামে তোলে উপজেলা প্রশাসন। নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে সব মিলিয়ে ১ কোটি ১৮ লাখ টাকায় বালু ক্রয় করেন কামরুজ্জামান নামের এক ব্যক্তি। মূলত কামরুজ্জামানের নামে নিলাম পেলেও এর পেছনে জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে আরও অনেকের শেয়ার রয়েছে বলে জানা গেছে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, নিলামে তোলার পর জব্দকৃত বালু অপসারণ না করে নদীর নিষিদ্ধ সীমানা ভারত ও স্থলবন্দর সংলগ্ন নাকুগাঁও, উত্তর কালাকুমা ও তারানী এলাকায় ৯০ থেকে ১০০টি শ্যালো ইঞ্জিনচালিত মিনি ড্রেজার বসানো হয়। নদীর তীর ভেঙে এবং নদীতে নিয়মবহির্ভূতভাবে গভীর গর্ত খুঁড়ে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। এর ফলে নদীর পশ্চিম তীরে থাকা নাকুগাঁও স্থলবন্দর, পুলিশের ইমিগ্রেশন, নাকুগাঁও কাস্টমস কর্মকর্তার কার্যালয়সহ সরকারি বহু স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে। নাকুগাঁও ব্রিজের পিলারের নিচে থাকা পাইলিং পর্যন্ত বেরিয়ে পড়েছে। প্রচ- ঝুঁকিতে রয়েছে সীমান্ত সড়কে নির্মিত জনগুরুত্বপূর্ণ ভোগাই ব্রিজ। এ ছাড়া ভাঙন হুমকিতে রয়েছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা।

বালু সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিটি ড্রেজিং সেটে রাত-দিন বালু উত্তোলন করলে স্থানভেদে দুই থেকে তিন ট্রাক বালু উত্তোলন করা যায়। বর্তমানে এক ট্রাক বালুর মূল্য ট্রাকের আকারভেদে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। সে হিসেবে প্রতিটি ড্রেজিং সাইটে প্রতিদিন গড়ে অন্তত এক থেকে দেড় লাখ টাকার বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আর এ হিসেবে পুরো নিষিদ্ধ এলাকা থেকে প্রতিদিন লোপাট হচ্ছে কমপক্ষে অর্ধকোটি টাকার বালু যা অন্যান্য সময়ে কয়েক মাসের সমান। শুধু তাই নয়, এসব বালু বিক্রির পাশাপাশি আগের চেয়ে দ্বিগুণ হারে নিজেদের ছাপানো রসিদ বইয়ের মাধ্যমে টাকা তোলা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বালু উত্তোলনকারীরা জানান, এ স্থানটি ডাকের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একই কথা বলেন বিজিবির দায়িত্বে থাকা সদস্যরাও।

এদিকে উপজেলা প্রশাসন থেকে নিলামে তোলা জব্দকৃত বালু অপসারণের জন্য ১৪ আগস্ট থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জুড়ে দেওয়া হয়েছে কিছু শর্তাবলি। এসব শর্তের মধ্যে প্রথম শর্তে বলা হয়েছে, নাকুগাঁও ব্রিজের উত্তর ও দক্ষিণে ৫০০ মিটার করে মোট এক কিলোমিটার এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করা যাবে না। দ্বিতীয় শর্তে উল্লেখ করা হয়, নদীর পাড়, কৃষিজমি ও বসতবাড়ির ক্ষতি সাধন করে বালু উত্তোলন করা যাবে না। সবশেষ ছয় নম্বর শর্তে উল্লেখ করা হয়, উল্লেখিত শর্তসমূহ ভঙ্গ করলে নিলাম বাতিল ও সমুদয় অর্থ বাজেয়াপ্ত করা হবে।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close