প্রকাশ: সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৪, ৬:১১ পিএম (ভিজিট : ৫৩৬)
গাইবান্ধা জেলা শহরের পুরাতন জেলখানা এলাকার গোলচত্বর থেকে ডিবি রোড ধরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় যাওয়ার পথে সড়কের দুপাশের দেয়ালে চোখ আটকে যাবে যে কারও। সড়কের পাশের বিভিন্ন ভবন ও সীমানা প্রাচীরের দেয়ালগুলো যেন এক একটি বিশাল ক্যানভাস। সেখানে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে আঁকা নানা রকম গ্রাফিতি। দেশে ন্যায় প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িকতা, ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঘিরে নিহতদের হত্যার বিচারের দাবি উঠে এসেছে গ্রাফিতির মাধ্যমে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর এ সব শিল্পকর্মের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের ‘দ্রোহের ভাষা’ ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
জেলা শহরসহ সাত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গ্রাফিতি অঙ্কন করছে শিক্ষার্থীরা। রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের এ উদ্যোগ। সপ্তাহ জুড়ে জেলা শহরের ডিবি রোডে গাইবান্ধা সরকারি মহিলা কলেজ, পাবলিক লাইব্রেরি, পৌরপার্ক, স্কুল লেন, কাচারীবাজার এলাকার বিভিন্ন দেয়াল ও সীমানা প্রাচীরে গ্রাফিতি অঙ্কন করে শিক্ষার্থী স্বেচ্ছাসেবীরা। পাশাপাশি তারা অযাচিতভাবে লাগানো রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ীক পোস্টারও পরিষ্কার করেছে।
গাইবান্ধার বিশিষ্টজনরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের এসব দেয়াল চিত্র অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শক্তি-সাহস ও প্রেরণা হয়ে রয়ে যাবে গণমানুষের স্মৃতিতে আর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের অগ্নিঝরা দিনগুলো স্মরণীয় হয়ে থাকবে ইতিহাসে। সোমবার (১৯ আগস্ট) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কেউ দেয়াল ঘষে পরিষ্কার করছেন, কেউবা সেখানে রঙের প্রলেপ দিচ্ছেন। কেউবা সেই প্রলেপ দেওয়া জায়গায় আঁকছেন লাল-সবুজের পতাকা। কেউ আবার ব্যস্ত স্লোগান লেখায়। শিক্ষার্থীদের এ রকম ব্যস্ততা দেখা যায় স্কুল লেনের একটি ভবনের দেয়ালে। দীর্ঘ ওই দেয়াল রং তুলির আঁচড়ে বর্ণিল হয়ে উঠেছে। যেখানে দেশপ্রেমের প্রতীক হিসেবে লাল-সবুজের পটভূমিতে বাংলাদেশের মানচিত্রের সামনে দুই হাত প্রসারিত করে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সাহসিকতার প্রতীক আবু সাঈদ। রয়েছে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আরেক বীর শহিদ মীর মুগ্ধর অবয়ব এবং পাশাপাশি মন্দির-মসজিদ-প্যাগোডা যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধনে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রত্যাশার কথা বলছে। দেয়ালচিত্রগুলোতে বাংলায় স্লোগান যেমন লেখা হয়েছে, তেমনি আছে ইংরেজিতে লেখা স্লোগান। আছে ইসলামিক ক্যালিগ্রাফিও। প্রতিবাদী আর রূপক চিত্রের পাশাপাশি আছে ফুল ও প্রজাপতির চিত্র। বিদ্রোহী গানের পাশে আছে জেনারেশন জেডের প্রশংসা, ২৪ এর গল্পের পাশে বায়ান্নর ইতিহাসও আছে। নজরুলের গানের কথার পাশাপাশি আছে জালাল উদ্দীন রুমীর বিখ্যাত উক্তি। ব্রিদোহী স্লোগানের পাশাপাশি আছে সম্প্রীতির আহ্বান। দেয়াল চিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রতিবাদ, দেশপ্রেম, সাম্য-ভ্রাতৃত্ব বোধ ও পশু-পাখির প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার বার্তা।
অঙ্কন শিল্পী শিক্ষার্থীরা বলছেন, আগে দেয়ালে অযাচিতভাবে পোস্টার লাগানো ছিলো। যা শহরের সৌন্দর্য নষ্টের কারণ। সেগুলো পরিষ্কার করে আমরা গ্রাফিতি এঁকেছি। গ্রাফিতি আমাদের প্রতিবাদের ভাষা। এর মাধ্যমে আমরা রাষ্ট্রের বিভিন্ন সমস্যার কথা বলছি। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকবেন, তাদের জন্য এটা একটি বার্তা- যেকোনো ধরনের স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড এদেশের জনগণ আর মেনে নিবে না। দেশ বিনির্মাণে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের এসব স্মৃতি উজ্জীবিত করবে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের ছাত্রসমাজকে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জড়িতদের ত্যাগ মানুষের মাঝে স্মরণীয় রাখতেই এ উদ্যোগ, বলছেন তারা।
সময়ের আলো/আরআই