রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক, রংপুরের সাবেক পুলিশ কমিশনার ও সাবেক ডিআইজিসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রোববার (১৮ আগস্ট) শহীদ আবু সাইদের বড় ভাই রমজান আলী রংপুর মেট্রোপলিটন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বাদী হয়ে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান, সাবেক ডিআইজি আব্দুল বাতেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদী রমজান আলী সাংবাদিকদের বলেন, নানা কারণে মামলা করতে দেরি হয়েছে। আমরা সুষ্ঠু বিচার চাই।
আইনজীবী রায়হানুজ্জামান বলেন, আমরা মেট্রোপলিটন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রাজু আহমেদের আদালতে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলার আবেদন করলে আদালত শুনানি শেষে তাজহাট থানাকে মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। আদালত মামলাগুলো গ্রহণ করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানাগুলোকে নির্দেশ দেন।
এদিকে রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আব্দুল্লাহ আল তাহির (২৮) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ৪০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
রোববার (১৮ আগস্ট) দুপুরে রংপুর মেট্রোপলিটন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নিহতের বাবা মো. আব্দুর রহমান বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, পুলিশের রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি (বাধ্যতামূলক অবসর) আব্দুল বাতেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (বাধ্যতামূলক অবসর) মো. মনিরুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার উত্তম কুমার পাল, এডিসি (ক্রাইম) উৎপল কুমার রায়, এডিসি (ডিবি) মো. নুর ইসলাম পাটোয়ারী, কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোন্তাসির বিল্লাহ। এ ছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আবুল কাশেম, জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক একেএম ছায়াদত হোসেন বকুল, যুগ্ম আহ্বায়ক মাজেদ আলী বাবলু, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল মালেক, সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল হক প্রমানিক, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাফিয়ার রহমান সফি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল, সাবেক সদস্য সদস্য (সংরক্ষিত) নাছিমা জামান ববি, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম, ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল আলম, ৩০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম তোতা, ২৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইঞ্জিনিয়ার শাহাদাৎ হোসেন, ২৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহাজাদা আরমান, ২৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কানা হারুন, ২৮নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ইদ্রিস আলী, জেলা যুবলীগের সভাপতি লক্ষ্মীণ চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনি, মহানগর সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেন, জেলা যুবলীগ নেতা ডিজেল আহমেদ, ২৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ সনু, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী মো. মানিক, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি শাহজাহানুর ইসলাম সৌরভ, সাধারণ সম্পাদক রিপন বাবু, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাব্বির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক তানিম আহসান চপল, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ আসিফ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী মো. মামুন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই রংপুর মহানগর সিটি বাজার এলাকায় ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। ওই দিন পুলিশের গুলিতে নিহত হন আব্দুল্লাহ আল তাহির। সে ঢাকায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকসের অষ্টম পর্বের শিক্ষার্থী ছিল।
মামলার আইনজীবী এ কে এম হারুন-উর-রশিদ বলেন, আমরা ৪০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলার আবেদন করলে আদালত রোববার (১৮ আগস্ট) শুনানি শেষে আরপিএমপি কোতোয়ালি থানাকে মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। আদালত মামলাগুলো গ্রহণ করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানাগুলোকে নির্দেশ দেন। গত ১৯ জুলাই রংপুর সিটি বাজারের সামনে পুলিশ তাকে গুলি করে হত্যা করে।
একই দিনে রংপুর সিটি বাজারের সামনে রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে কলা ব্যবসায়ী মেরাজুল ইসলাম মেরাজ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। রোববার (১৮ আগস্ট) রংপুর মেট্রোপলিটন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২১ জনের নামসহ অজ্ঞাত অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মেরাজুল ইসলাম মেরাজের মা আম্বিয়া খাতুন বাদী হয়ে এ হত্যা মামলা করেছেন। আদালত শুনানি শেষে আরপিএমপি কোতোয়ালি থানাকে মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
সময়ের আলো/আরআই