ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

স্বল্পপরিসরে থানায় সীমাবদ্ধ পুলিশের কার্যক্রম
সংকটের মাঝে সেবার চ্যালেঞ্জ
প্রকাশ: শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৪, ৬:৩০ এএম  (ভিজিট : ২৭৪)
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরই রাজধানীসহ সারা দেশে চার শতাধিক থানায় হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ-লুটপাটের ঘটনা ঘটে। থানার ভেতরের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পোড়ানো হয়, লুট হয় অস্ত্র। এ হামলায় ভেঙে পড়ে থানার সার্বিক কার্যক্রম। নিহত ও আহত হয় কয়েকশ পুলিশ সদস্য। পুলিশ সদস্যরা আতঙ্ক কাটিয়ে থানায় ফিরলেও থানার কার্যক্রম এখনও স্বাভাবিক হয়নি। বিভিন্ন সংকটের মধ্যেও স্বল্পপরিসরে সেবা দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। তবে এ সেবা বেশিরভাগ থানার ভেতরেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। থানার বর্তমান চ্যালেঞ্জ দ্রুত কেটে যাবে, আশা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। রাজধানীর থানাগুলোতে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্যরা নিরাপত্তা দিচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, থানায় যা আছে সেটা দিয়েই সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। এ ছাড়া পুলিশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে।

শুক্রবার দুপুরে মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে দেখা যায়, থানার সামনে সেনাবাহিনীর তিনটি গাড়িতে সেনাসদস্যরা রয়েছেন। প্রবেশ দ্বারে বেশ কয়েকজন সেনাসদস্য লম্বালম্বিভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। ভেতরে এখনও পড়ে আছে পোড়া ও ভাঙচুর হওয়া গাড়ি। থানার ভেতরে ডিউটি অফিসারের কক্ষে কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিয়মিত কার্যক্রম চালাচ্ছেন। গারদ ঘরে পাহারায় রয়েছেন দুই সেনা সদস্য।ওসির রুমে টেবিল, চেয়ার, সোফা ও ফ্যান ছাড়া তেমন কিছু চোখে পড়েনি। এর মধ্যে গ্রেফতার এক ব্যক্তিকে আদালতে নিয়ে যেতে দেখা যায়। তবে ওসি ও ডিউটি অফিসারের কক্ষ ছাড়া থানাজুড়ে সুনসান নীরবতা এবং অন্ধকার। এখনও থানার ভেতরে পোড়া পোড়া গন্ধ। থানায় সাধারণ মানুষের তেমন উপস্থিতি চোখে পড়েনি।

উত্তরা পূর্ব থানায় দেখা যায় সাদা পোশাকে ডিউটি করছেন পুলিশ সদস্যরা। বেশিরভাগ পুলিশ সদস্য থানায় এসে হাজিরা দিয়ে চলে যান। এক-দুইটা টেবিলেই স্বল্পপরিসরে চলছে কার্যক্রম। রাজধানীতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় সব থানাতেই একই অবস্থা। যতটুকু সরঞ্জাম আছে সেটা দিয়েই কাজ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে।

সংকটের মধ্যে থানার কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা সময়ের আলোকে বলেন, আমাদের গাড়ি নেই। কোথাও কিছু হলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে যতটুকু কাজ করা যায় করছি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোহাম্মদপুর থানার এক কর্মকর্তা সময়ের আলোকে বলেন, বেশিরভাগ পুলিশ সিভিল পোশাকেই কাজ করছে। গাড়ি নেই। থানার বাইরে কোনো টহল দল কাজ করছে না। এখনও পুলিশ সদস্যরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। কারও মনে কোনো উদ্যম নেই। এখনও সবার মাঝে হতাশা কাজ করছে। থানায় সাধারণ মানুষের উপস্থিতি কম। বেশিরভাগই জিডি হচ্ছে। খুব গুরুত্বপূর্ণ হলে মামলা হচ্ছে। কোথাও আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের গাড়িতে আমরা যাচ্ছি। 

সাধারণত থানার ভেতরেই কার্যক্রম চালানো হচ্ছে জানিয়ে ওয়ারী থানার ওসি জানে আলম মুন্সী সময়ের আলোকে বলেন, সিভিল পোশাকে ডিউটি করছি। কোথাও আইনশৃঙ্খলার অবনতি দেখা দিলে সেনাবাহিনী, শিক্ষার্থী ও এলাকার লোকজন নিয়ে যাই, এ মুহূর্তে পুলিশ সিঙ্গেলে যাচ্ছে না। মামলা গ্রহণ ও তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনলাইন মামলার সার্ভিস এখনও চালু হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলো নিচ্ছি। আগের মামলার তদন্ত আপাতত বন্ধ আছে। কম্পিউটার নেই। থানা থেকে তো সব নিয়ে গেছে। মামলার তদন্তে ব্যাঘাত ঘটছে। বেশিরভাগ থানার টহল গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে টহলের জন্য কী ব্যবস্থা নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। আমরা গাড়ি চেয়েছি। স্বল্পপরিসরে জরুরি কাজগুলো করি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ও ডিসি মিডিয়াকে একাধিকবার ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে এ বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগরের সঙ্গে। সময়ের আলোকে তিনি বলেন, থানার পাশাপাশি আমাদের থানাগুলোর অনেক গাড়িই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের তো কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। থানায় যতটুকু রিসোর্স আছে সমন্বয় করে তার সর্বোচ্চ ব্যবহারের চেষ্টা করছি।

পরিবহনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের যে ট্রান্সপোর্ট বিভাগ আছে তারাও থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত মিটিং করছে। যতগুলো গাড়ি আছে সমন্বয়ের মাধ্যমে সেগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হচ্ছে। মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা হচ্ছে। স্বাভাবিক কার্যক্রমগুলো শুরু হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত সব সমস্যা কাটিয়ে উঠব।

পুলিশের এ পরিস্থিতির জন্য পুলিশের কর্মকাণ্ডের দোষ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এটা নিয়ে বসে না থেকে উত্তরণের দিকে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক সময়ের আলোকে বলেন, সর্বশেষ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে থানা ও পুলিশের ওপর হামলার চিত্র আমরা দেখলাম। তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সহায়ক গাড়ি, অস্ত্র, নথি, কম্পিউটার ইত্যাদির অনেক কিছু পুড়েছে। আবার অনেক কিছু লুট হয়েছে। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আমাদের দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টার্গেট হয়ে যায়। টার্গেট হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণও আছে। কারণগুলোর পক্ষে বিপক্ষে যুক্তিও আছে। কিন্তু এখন যুক্তি তর্ক করে সমাধান হবে না। এদিকে অতি দ্রুত সমাধান প্রয়োজন।

তিনি বলেন, থানায় এখন যতটুকু যা আছে সেটা দিয়েই কাজ করতে হবে। কাজ শুরুর যে কোনো একটা পর্যায়ে ধীরে ধীরে আগের অবস্থানে ফিরতে পারবে। পুলিশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের থেকেও সহযোগিতা প্রয়োজন। তাদের এগিয়ে আসতে হবে। পুলিশের ওপর যে তাণ্ডব চলল তার মূল কারণ পুলিশের কর্মকাণ্ড। আবার কাজের মধ্য দিয়েই তাকে আস্থার জায়গা তৈরি করতে হবে। আস্থার জায়গায় ফিরতে হলে কাজে মনোযোগী হয়ে সর্বোচ্চ সেবা দিতে হবে পুলিশকে। লুট হওয়া অস্ত্রসহ সবকিছু সর্বোচ্চ চেষ্টা করে উদ্ধার করতে হবে।

সময়ের আলো/আরএস/ 






https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close