ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নাম পরিবর্তনের হিড়িক
সময়ে পাল্টে যায় নাম
প্রকাশ: শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৪, ২:৩৪ এএম  (ভিজিট : ৪৩০)
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে ‘জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ নাম দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটে থাকা সাইনবোর্ডটি ছিঁড়ে ফেলে সাদা কাপড়ে লাল রঙের কালিতে নতুন নাম লেখা হয়েছে। ২০১৮ সালে নেত্রকোনায় প্রতিষ্ঠা করা হয় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়। নেত্রকোনা শহরের উপকণ্ঠে রাজুর বাজার নামক এলাকায় ময়মনসিংহ-সুনামগঞ্জ সড়কের পাশে বিশ্ববিদ্যালয়টি অবস্থিত। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩টি অনুষদের অধীনে ৪টি বিভাগ আছে। এখনও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো ব্যাচ বের হয়নি। ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পরেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়। মূল ফটকে ‘নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখা ব্যানার টাঙিয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

দেশে বর্তমানে ৫৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম তার পরিবারের সদস্যদের নামে করা হয়েছে। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নাম পরিবর্তনের দাবি উঠছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসনিকভাবে এখনও কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হয়নি। সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের পর নাম পরিবর্তন কার্যকর করা যাবে।

দেশের উচ্চশিক্ষা তদারককারী প্রতিষ্ঠান ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ বছরে প্রায় দুই ডজন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরমধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসহীন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৮টি। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ডিজিটাল এবং কৃষিশিক্ষার মতো বিশেষায়িত। ২০১৩ সাল ও তারপর বিভিন্ন বছরে এসব বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আইন করা হয়। এরপর শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু সব কটির স্থায়ী ক্যাম্পাসের ব্যবস্থা হয়নি। তিনটির স্থায়ী ক্যাম্পাসের নির্মাণকাজ চলছে। এর বাইরে কোনোটির স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তবে ১৪টির জমিও নেই, ভবনও নেই। যেখানে-সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শুরু করার আগে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। তা না হলে ভালো মানের শিক্ষা সম্ভব নয়। একেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাসের জন্য যেসব প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে বিপুল টাকার ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে।

সরকার যেখানে আর্থিক চাপে রয়েছে, সেখানে বিপুল ব্যয়ের এসব প্রকল্প কবে অনুমোদন পাবে, কবে স্থায়ী ক্যাম্পাস হবে, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না। শিক্ষার জন্য নিজস্ব উদ্যোগে ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করে বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা করা, শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে শিক্ষার্থীরা যেনতেনভাবে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের শিক্ষা শেষ করছেন, কার্যত ঠকছেন।

গাজীপুরের বিশেষায়িত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির আইন হয় ২০১৬ সালে। তার দুই বছর পর ২০১৮ সালের জুনে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বর্তমানে মোট শিক্ষার্থী ৪৫৯ জন। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও বিশ্ববিদ্যালয়টি পায়নি নিজস্ব ভবন ও ক্যাম্পাস। কার্যক্রম চলছে দুটি ভাড়া করা ভবনে। শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে বাসা ভাড়া নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে শ্রেণিকক্ষের সংকট। ছোট ছোট কক্ষে গাদাগাদি করে নেওয়া হয় ব্যবহারিক ক্লাস। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। 

ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার গঠনের পর বদলে যেতে থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চিত্র। দলীয় মনোভাবাপন্ন উপাচার্যদের পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অথবা নিজে থেকেই পদত্যাগ করছেন তারা। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এখনও পদত্যাগ করেননি তাদের পদত্যাগে আলটিমেটাম দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা পদত্যাগ করেছেন। ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদত্যাগ করেছেন। এসব পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে। প্রশাসনিকভাবে এখনও কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হয়নি। সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের পর নাম পরিবর্তন কার্যকর করা যাবে।


সময়ের আলো/আরএস/ 




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close