ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া কবিরা গুনাহ
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৪, ৩:০৯ এএম  (ভিজিট : ২০২)
আদালত ও সামাজিক বিচার-আচারে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে যেকোনো বিষয়ের সমাধান ও সুষ্ঠু সুরাহা করা হয়। কুরআন-হাদিসে বিশাল অংশজুড়ে মানুষকে সত্য ও সঠিক সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আর মিথ্যা সাক্ষ্য বর্জনের জোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বর্তমান যুগে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। তাই সময়ের দাবির প্রেক্ষিতে মিথ্যা সাক্ষ্য-সংক্রান্ত আলোচনা বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।

মিথ্যা সাক্ষ্যের বিধান: একজন ভালো মানুষের মধ্যে যেসব গুণ থাকা জরুরি তার অন্যতম একটি হচ্ছে, প্রয়োজনের মুহূর্তে সত্য ও সঠিক সাক্ষ্য দেওয়া এবং মিথ্যা সাক্ষ্য না দেওয়া। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘(রহমানের বান্দা তারা) যারা অন্যায় কাজে শামিল হয় না এবং যখন কোনো বেহুদা কার্যকলাপের কাছ দিয়ে যায় তখন আত্মসম্মান বাঁচিয়ে যায়’ (সুরা ফুরকান : ৭২)। আয়াতে বর্ণিত ‘যুর’ শব্দের আভিধানিক অর্থ মিথ্যা। অর্থাৎ যেখানে কোনো অন্যায় ও অবৈধ কাজ হয়, আল্লাহর নেক বান্দারা তাতে জড়িত হয় না। আবার এ অর্থও হতে পারে যে, তারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না। সব আলেম একমত যে, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া কবিরা গুনাহ।

মিথ্যা সাক্ষ্য শিরকের নামান্তর: পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সুতরাং তোমরা প্রতিমাদের কলুষ পরিহার করো এবং মিথ্যা কথা থেকে বেঁচে থাকো, একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর অভিমুখী হয়ে তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করো না। যে কেউ আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করে, সে যেন আকাশ থেকে পতিত হলো, তারপর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল অথবা বাতাস তাকে দূরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করল’ (সুরা হজ : ৩০-৩১)। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরকারগণ লিখেছেন, উল্লিখিত আয়াতে মিথ্যা সাক্ষ্যদানকে মূর্তিপূজা তথা শিরকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। কারণ শিরক হলো এমন মিথ্যা অপবাদ, যা আল্লাহর প্রতি আরোপ করা হয়। অর্থাৎ যারা শিরক করে তারা এই বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহর সঙ্গে অন্যান্য দেব-দেবীও ইবাদত লাভের যোগ্য। আর মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া এমন একটি অন্যায়, যার দ্বারা একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়। নির্দোষ মানুষকে দোষী বানানো হয় অথচ সেই ব্যক্তি এই অপবাদ থেকে পবিত্র। তাই মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া ও শিরক করা উভয়টি কাছাকাছি অপরাধ। তাই পবিত্র কুরআনে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়াকে মূর্তিপূজার সমতুল্য অপরাধ সাব্যস্ত করা হয়েছে। হজরত খুরাইম বিন ফাতিক (রা.) বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) ফজরের নামাজ আদায় শেষে দাঁড়িয়ে তিনবার বললেন, ‘মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া আল্লাহর সঙ্গে শিরক তুল্য।’ (আবু দাউদ : ৩৫৯৯)

মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া কবিরা গুনাহ: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি কি তোমাদের সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না? এ কথাটি তিনবার বললেন, সবাই বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! অবশ্যই বলেন। তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। তিনি হেলান দিয়ে বসা ছিলেন, এবার সোজা হয়ে কথাটি বারবার বলতে থাকলেন, এমনকি আমরা বলতে লাগলাম, কথাটি যদি আর না বলেন..! (বুখারি : ২৬৫৪)

জাহান্নামে যাওয়ার কারণ: মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার কারণে ব্যক্তিকে জাহান্নামে যেতে হবে। হজরত ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিতÑরাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন মিথ্যা সাক্ষ্যদাতার জন্য আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামের ফয়সালা না দেওয়া পর্যন্ত, সে তার পদদ্বয় নাড়াতে পারবে না।’ (ইবনে মাজাহ : ২৩৭৩)

নেক আমল কবুলে অন্তরায়: মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার কারণে ব্যক্তির নেক আমল আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা এবং সে অনুযায়ী আমল করা, আর মূর্খতা পরিহার করল না; আল্লাহর কাছে তার পানাহার বর্জনে (রোজা উপলক্ষে খাবার ত্যাগ) কোনো লাভ নেই।’ (বুখারি : ১৯০৩)

মিথ্যা সাক্ষ্য কেয়ামতের আলামত: কেয়ামতের অনেক আলামত রয়েছে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। বর্তমান সময়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে অথচ এ ব্যাপারে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সূত্রে বর্ণিতÑরাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের কাছাকাছি সময়ে ব্যক্তিবিশেষকে নির্দিষ্ট করে সালাম দেওয়ার প্রচলন ঘটবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। ফলে স্বামীর ব্যবসায়ে স্ত্রীও সহযোগিতা করবে। রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তা ছিন্ন করা হবে। মিথ্যা সাক্ষ্যদানের প্রচলন হবে এবং সত্য সাক্ষ্য গোপন করা হবে।’ (মুসনাদে আহমদ : ৩৮৭০)

মিথ্যা সাক্ষ্যদাতার তওবা: মানুষ যখন মিথ্যা সাক্ষ্য নামক কবিরা গুনাহের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয়ে ভবিষ্যতে পুনরায় গুনাহ না করার দৃঢ় সংকল্প করে, খাঁটি দিলে আল্লাহ তায়ালার কাছে তওবা করে, আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন এবং তার গুনাহ মাফ করেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের যে বড় বড় গুনাহ করতে নিষেধ করা হয়েছে, তোমরা যদি তা পরিহার করে চলো, তবে আমি নিজেই তোমাদের ছোট ছোট গুনাহ তোমাদের থেকে মিটিয়ে দেব এবং তোমাদের এক মর্যাদাপূর্ণ স্থানে দাখিল করব’ (সুরা নিসা : ৩১)। আরেকটি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘অবশ্য যারা এরপরও তওবা করবে ও নিজেদের সংশোধন করবে, তাদের জন্য আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু’ (সুরা আলে ইমরান : ৮৯)। আল্লাহ সবাইকে বোঝার ও আমল করার তওফিক দিন।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close