ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

হুমকির মুখে সৈকতের জীববৈচিত্র্য
বিলীনের পথে বাঁশখালী উপকূলের প্যারাবন
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৪, ২:৩৯ এএম  (ভিজিট : ২২৮)
১৯৯১ সালে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের পর বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকার এক হাজার একর জায়গায় প্যারাবন সৃজন করা হয়েছিল। ছনুয়া, গণ্ডামারা, সরল, কাথরিয়া, খানখানাবাদ ও বাহারছড়া ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ, চর ও উপকূলের রাস্তার পাশে সৃজিত এসব প্যারাবনের বেশিরভাগেরই অস্তিত্ব নেই এখন। অনেক স্থানে বেড়িবাঁধসংলগ্ন জমি দখলের পর করা হয়েছে লবণ ও চিংড়ির চাষ। এমন অবস্থায় প্যারাবন রক্ষায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬০ একর জায়গায় বনায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া ১০ হাজার চারা রোপণের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে বন বিভাগের পক্ষ থেকে।   

এ বিষয়ে বাঁশখালী উপকূলীয় বন কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান রাসেল বলেন, প্যারাবন রক্ষায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরল, গণ্ডামারা ও রত্নপুর এলাকায় ৬০ একর জায়গায় বনায়ন করা হয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে বাহারছড়া ও রায়ছটা বেড়িবাঁধে আরও ১০ হাজার চারা রোপণ করা হবে।  

বাঁশখালী উপকূলীয় বন কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান রাসেল আরও বলেন, বৃষ্টির কারণে আবহাওয়া বৈরী থাকায় কদমরসুলসহ সমুদ্রসৈকতে ঝড়ের আঘাতে ও প্রচণ্ড ঢেউয়ে ভেঙে পড়া ঝাউগাছগুলো সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গাছগুলো সংগ্রহ করা হবে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে খানখানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জয়নাল আবেদীন বলেন, উপকূলীয় এলাকার শোভাবর্ধনকারী ঐতিহ্যবাহী ঝাউবাগানের যথাযথ পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় সাগরপাড়ের দৃষ্টিনন্দন প্যারাবন হারিয়ে যাচ্ছে। অবৈধ দখলদারদের শিকারে পরিণত হয়ে প্রতিদিন গাছ নিধন করা হচ্ছে বলেও জানান খানখানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জয়নাল আবেদীন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এরপর উপকূলীয় বাসিন্দাদের জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসে দেশের এনজিও সংস্থা উবিনীগ ও জাপানের ওয়েস্কা। এই সংস্থা দুটি শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে সবুজ বেষ্টনীর আওতায় বাইন ও কেওড়া গাছের বন সৃজন করে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বনের এসব গাছ কেটে চিংড়ি ঘের তৈরি করা হয়েছে অনেক এলাকায়। 

বাঁশখালীর সমুদ্রসৈকতের গণ্ডামারা, সরল, কদমরসুল, কাথরিয়া ও বাহারছড়া অংশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি ঝাউগাছ ও বাইনবাগান একটা সময়ে পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকত। কিন্তু এখন আর সেই সৌন্দর্য চোখে পড়ে না খুব একটা। ভাঙন অব্যাহত থাকায় একদিকে সমুদ্রসৈকত সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়েছে সৈকতের জীববৈচিত্র্য। নয়নাভিরাম দৃশ্যের এ সৈকত ঝড় ও ভাঙনের কবলে পড়ে হাজার হাজার ঝাউবাগান বিলীন হয়ে গেছে। যার ফলে শ্রীহীন হয়ে পড়ছে সমুদ্রসৈকত এলাকা।

সরেজমিন দেখা গেছে, যেসব এলাকায় প্যারাবন, বাইনবাগান ও ঝাউবন রয়েছে সেখানকার বেড়িবাঁধ অনেকটা ভালো আছে। সাগরের প্রচণ্ড ঢেউ ও তীব্র ঝড়ের প্রথম আঘাত ওইসব বাগানে পড়ে বিধায় অনেকটা রক্ষা পায় বেড়িবাঁধ। যেসব এলাকায় বাগান নেই সেসব এলাকার বেড়িবাঁধ অনেক আগেই বিলীন হয়ে গেছে।

পরিবেশবাদীদের মতে, ঝাউবাগানের ভেতরে এক ধরনের বেসিনের মতো গর্ত তৈরি হয় যেখানে পানি জমে থাকে। জমে থাকা এসব পানি ভাঙনকে ত্বরান্বিত করে। তাই ভাঙন রোধে ঝাউবনের পাশাপাশি নারিকেলসহ অধিক শেকড়যুক্ত গাছ যেগুলো উপকূলীয় এলাকায় হয়, এ ধরনের গাছ লাগাতে হবে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধের রক্ষাকবচ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে অল্প কিছুসংখ্যক ঝাউগাছ। সাগরের করালগ্রাস ও ঝড়ের কবলে পড়ে অধিকাংশ ঝাউগাছই ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে। এসব এলাকায় একসময় ঝাউগাছই রক্ষা করত বেড়িবাঁধ। এখন ঝাউগাছ বিলীন হয়ে যাওয়ায় সাগরের বড় বড় ঢেউগুলো সরাসরি বেড়িবাঁধে আঘাত হানার ফলে সহজেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বেড়িবাঁধ।

স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল ইসলাম, আনোয়ার ও শহীদুল আলমের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, গত দুই বছরে শুধু এসব এলাকায় বিলীন হয়েছে অন্তত ৩ থেকে ৪ হাজার ঝাউগাছ। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে ভাঙন, গাছ নিধন এবং দখলের কবলেও পড়েছে ঝাউবাগান। কদমরসুল এলাকার বাসিন্দা ও ঝুপড়ি দোকানদার হুমায়ূন কবির বলেন, বাঁশখালী সমুদ্রসৈকতে একসময় দৃষ্টিনন্দন ঝাউবন ছিল। কতিপয় দুষ্কৃতকারী ঝাউগাছ কেটে সাবাড় করেছে। কোনো কোনো অংশে ভাঙনের ফলে প্যারাবন উজাড় হয়ে গেছে। এ ছাড়া প্রতি বছর বর্ষায় ভাঙন আরও বেড়ে যায়।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close