ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

সড়কে ফিরেছে ট্রাফিক পুলিশ সহযোগিতা করছেন শিক্ষার্থীরা
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৪, ৭:২৬ এএম  (ভিজিট : ৩৪০)
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে সড়কে ছিল না ট্রাফিক পুলিশ। হামলার ভয়ে রাস্তায় দায়িত্ব পালন করেননি পুলিশ সদস্যরা। ফলে সড়কে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। এই বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে সড়কের দায়িত্ব নেন শিক্ষার্থীরা। অবশেষে রাজধানীর সড়কে সীমিত পরিসরে দায়িত্ব নিতে শুরু করেছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। প্রায় এক সপ্তাহ পর সড়কে দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের। 

রাজধানীর বেশ কয়েকটি মোড়ে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কাজ করতে দেখা গেছে তাদের। চলতি সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। তবে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতিতেও সোমবার বেশিরভাগ মোড়ে শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। 

এদিকে এতদিন ধরে সড়কে শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করে আসা শিক্ষার্থীরাও বলছেন, ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে ট্রাফিক পুলিশ অপরিহার্য। স্বল্প সময়ের জন্য তারা সড়কে কাজ করলেও তাদের পক্ষে রাজধানীর যানজট নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। 

সাধারণ মানুষও খুশি সড়কে ট্রাফিক পুলিশ দেখে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান চলতি সপ্তাহের মধ্যে ট্রাফিক কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ার আশা ব্যক্ত করেন।

সোমবার ভোর সাড়ে ৬টা থেকে রাজধানীর সড়কগুলোতে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। ভোর সাড়ে ৬টা থেকে দুপুর আড়াইটা এবং দুপুর আড়াইটা থেকে রাত ১১টা এই দুই শিফটে কাজ শুরু করেছেন তারা। দুপুরে সরেজমিনে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করছেন। সেখানে কোনো পুলিশ কিংবা আনসার সদস্য নেই। সেখানে দায়িত্ব পালনরত শিক্ষার্থীরা জানান, সকাল থেকে এই গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে কোনো পুলিশ নেই। 
তাদের একজন মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র শাহরিয়ার ইসলাম রাতুল। তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে আমরা এই মোড়ে ট্রাফিকের কাজ করছি। আজকে নিউজে দেখলাম সড়কে ট্রাফিক পুলিশ কাজ শুরু করেছে। তবে সকাল থেকে এই এলাকায় কোনো ট্রাফিক বা আনসার সদস্য আসেননি। আমরা ৪০ জন ভাগ করে দায়িত্ব পালন করছি। তবে ট্রাফিক পুলিশ ছাড়া রাজধানীর যানজট নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। বেসরকারি চাকরিজীবী মো. ফয়সাল বলেন, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ শিক্ষার্থীদের কাজ নয়। তারা এই কাজ করতে গিয়ে ঝুঁকির মধ্যে আছেন। তবে হ্যাঁ, দেশের দুর্দিনে তারা রাস্তার হাল ধরেছেন। কোনো দুর্ঘটনার আগেই তাদের এই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নিতে হবে। 

একটু এগিয়ে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড। সেখানেও নেই কোনো পুলিশ। ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছিলেন শিক্ষার্থীরা। দায়িত্ব পালন করা শিক্ষার্থী বলেন, শিফটে ভাগ হয়ে তারা রাত-দিন কাজ করছেন। এই এলাকার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের স্বাগত জানিয়েছেন তারা। মোহাম্মদপুর আসাদ গেট মোড়ে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ৬ জন আনসার সদস্য কাজ করছিলেন। 

এই এলাকায় দায়িত্ব পালন করা সরকারি বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী আবু হাসনাইন বলেন, দুই দফায় সকাল থেকে আমাদের সঙ্গে ৬ জন আনসার পেয়েছি। তবে পুলিশ পাইনি। সব ঠিক না হওয়া পর্যন্ত আমরা দায়িত্ব পালন করে যাব। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের সামনে তিন জন পুলিশ সদস্যের দেখা মেলে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের একজন বলেন, দুপুরে কাজে যোগদান করেছি। তবে এখনও স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু হয়নি। আশা করছি দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। শিক্ষার্থীরা আমাদের সাহায্য করছেন।

খামার বাড়ি, ফার্মগেট, বাংলামোটর এলাকাতেও খুব কম সংখ্যক পুলিশ সদস্য ছিলেন। তবে সব পয়েন্টেই উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থী ছিলেন। এদিকে কারওয়ান বাজার সার্ক ফোয়ারা মোড়ে এসে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও শিক্ষার্থীকে দেখা যায়। 

এই সিগন্যালে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য বলেন, কাজে যোগদান করলেও মানসিকভাবে এখনও ফিট হতে পারিনি। চোখের সামনে এত সহিংসতা ও পুলিশ সদস্যের লাশ দেখে সবাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। সরকারের উচিত হবে পুলিশ সদস্যদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে খেয়াল রাখা।
     
সোমবার সকালে রাজধানীর গুলশান-১ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ট্রাফিক পুলিশ রাস্তায় কাজ করছেন। আন্দোলন চলার সময় পুলিশের প্রতি যে ক্ষোভ ছিল মানুষের, আজ সেটা দেখা যায়নি। সবাই পুলিশ সদস্যদের উৎসাহিত করছেন। 

ডিএমপির ট্রাফিক গুলশান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল থেকে রাজধানীর মহাখালী, আমতলী, বনানী, বনানী পূজামণ্ডপ, গুলশান-২, গুলশান-১ ও পুলিশ প্লাজা এলাকায় দায়িত্ব পালন করছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। দুপুর ১২টার দিকে গুলশান-১ নম্বর মোড়ে ট্রাফিক ব্যস্ততা পরিদর্শন করতে আসেন ডিএমপির ট্রাফিক গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এ এস এম হাফিজুর রহমান। তিনি এ সময় রাস্তায় ট্রাফিক শৃঙ্খলার দায়িত্বে কাজ করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং তাদের ধন্যবাদ জানান। 

পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, দায়িত্বে ফিরে আসায় মানুষ আমাদের স্বাগত জানিয়েছে। আমাদের মানুষ সহযোগিতা করছে। 

সোমবার থেকে নতুন করে শুরু হওয়া ট্রাফিক কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান বলেন, ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের আমরা নতুন উদ্যমে অনুপ্রাণিত করে আজ থেকে মাঠে নামিয়েছি। তারা ছাত্রদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছেন। কম গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ সদস্যদের না দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দেওয়া হয়েছে। কোনো পয়েন্টে বেশি, কোনো পয়েন্টে কম সদস্য আছে। আশা করছি চলতি সপ্তাহের মধ্যে ট্রাফিক কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close