উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয় জৌলুসপূর্ণ, সমাপনী অনুষ্ঠান দায়সারা গোছের। অলিম্পিক গেমসের প্রতিটি আসরের চিত্রটা এমনই। রীতি মেনে পরবর্তী গেমসের আয়োজকদের কাছে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় সমাপনী অনুষ্ঠানে।
প্যারিসেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। তবে তাদের সমাপনী অনুষ্ঠানটা দায়সারা গোছের ছিল না। উদ্বোধনীর মতো এটিও ছিল জৌলুসপূর্ণ। আয়োজক দেশ ফ্রান্সের সংস্কৃতি তুলে ধরার পাশাপাশি পরবর্তী অলিম্পিক গেমসের আয়োজক লস অ্যাঞ্জেলেস তথা যুক্তরাষ্ট্রের সংস্কৃতিও তুলে ধরা হয়।
সেখানে মূল ভূমিকায় ছিলেন টম ক্রুজ। হলিউডের কিংবদন্তি এই অভিনেতার হাতেই তুলে দেওয়া হয় ব্যাটন। প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়েছিল আইফেল টাওয়ার ঘেঁষা সিন নদীতে। ইতিহাসে এবারই প্রথম স্টেডিয়ামের বাইরে অলিম্পিকের উদ্বোধন দেখেছে বিশ্ব। সমাপনী অনুষ্ঠান অবশ্য স্টেডিয়ামেই হয়েছে। ফ্রান্সের সবথেকে বড় স্টেডিয়াম স্তাদে ডি ফ্রান্স।
রোববার স্থানীয় সময় রাত ৯টা বাজতেই ফ্রান্সের জাতীয় সংগীত বাজিয়ে শুরু হয় সমাপনী অনুষ্ঠান। এরপর গেমসে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো জাতীয় পতাকা নিয়ে বর্ণিল ঢঙে মার্চ পাস্টে অংশ নেয়। বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা ছিল গেমসের এক ভলান্টিয়ারের হাতে। কেননা সমাপনীতে ছিলেন না বাংলাদেশের কোনো ক্রীড়াবিদ এবং কর্মকর্তাদের কেউ, বিষয়টা দৃষ্টিকটুই ছিল।
ভলান্টিয়ার এবং ক্রীড়াবিদদের পদচারণায় মুখরিত হয় পুরো স্টেডিয়াম। পরে গান হয়েছে, নাচ হয়েছে, ছিল আলোর রোশনাই। বংশীবাদকের দল হাজির হয় মাঠে। আলো আর সুরের খেলা চলতে থাকে একই সঙ্গে। শেষ দিকে শূন্য থেকে নেমে আসেন হলিউড তারকা টম ক্রুজ, ২০২৮ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসে হতে যাওয়া পরবর্তী গেমসের বার্তা দিয়ে গেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রে যে সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছে প্যারিসের সমাপনীতে, সেখানে প্রাধান্য পেয়েছে হলিউড। এটি যে লস অ্যাঞ্জেলস তথা ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত। হলিউডে অ্যাকশনধর্মী সিনেমায় যে স্টান্টগুলো দেখা গেছে, স্তাদে ডি ফ্রান্সেও সেগুলো দেখা গেছে।
ক্রুজ মূলত ছিলেন শো-স্টপার। স্টেডিয়ামে তার আগমন ছিল দুর্দান্ত ভঙ্গিতে। পায়ে হেঁটে নয়, স্তাদে ডি ফ্রান্সের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে মঞ্চে নামেন। যেমনটা মিশন ইম্পোসিবল সিরিজের ফলআউট সিনেমায় দেখা গেছে। মঞ্চে নামার পরই ক্রুজকে স্বাগত জানান লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন বাস। শুরুতে তার হাতেই অলিম্পিক পতাকা তথা হিদালগো ব্যাটন তুলে দিয়েছিলেন প্যারিসের মেয়র। যেটা লস অ্যাঞ্জেলেস মেয়র তুলে দেন সিমোনে বাইলসের হাতে। কিংবদন্তি জিমন্যাস্টের হাত থেকে ব্যাটনটা নিয়ে একটি মোটর বাইকে চেপে স্টেডিয়াম ঘুরে গেট দিয়ে বেরিয়ে যান ক্রুজ।
শুধু ক্রুজই নন, সমাপনী অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেছেন আরও অনেকেই। অলিম্পিকের লোগোতে যে পাঁচটি রিং থাকে, তা পাঁচটি মহাদেশের প্রতীক।
বর্ণীল আলোয় সাজানো ওই রিংগুলোকেও মহাকাশে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপর নাচ-গান, পিয়ানো আর ইলেক্ট্রিক গিটারের সুরের মূর্ছনায় মজেছেন স্তাদে ডি ফ্রান্সের গ্যালারিতে উপস্থিত হওয়া ৭০ হাজার দর্শক। সব পারফরম্যান্স শেষে প্যারিস অলিম্পিক আয়োজক কমিটির প্রধান মঞ্চে উঠেন। তিনি ডেকে নেন প্রতিটি মহাদেশের সফলতম ক্রীড়াবিদ এবং শরণার্থী অলিম্পিক দলের এক প্রতিনিধিকে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রধান টমাস বাখও।
অনুষ্ঠানের শেষদিকে অলিম্পিক মশাল নিয়ে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেন ফ্রান্সের কীর্তিমান সাতারু লিও মারশা। এরপর টমাস বাখ ঘোষণা করেন- প্যারিস অলিম্পিক সমাপ্ত।
সময়ের আলো/জিকে