ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

মাঠে নেই পুলিশ, ডাকাত আতঙ্কে ঘুম হারাম নওগাঁবাসীর
প্রকাশ: রবিবার, ১১ আগস্ট, ২০২৪, ৯:১৩ পিএম  (ভিজিট : ৪৩২)
তিন ট্রাক লাল গামছা পরিহিত ডাকাত, তিন নৌকা ডাকাত। এসেছে উমুক জায়গায়। এখনই চলে গেল উমুক জায়গায়। আপনারা সজাগ হোন, মাইকিং করুন। এভাবেই চলছে গত কয়েকদিন থেকে প্রচারণা। ফলে আতঙ্কে রয়েছে নওগাঁ জেলার সাধারণ জনগণ। কোথাও কোথাও দলবদ্ধ হয়ে হাতে লাঠি নিয়ে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। আর ফেসবুকে জানান দিচ্ছেন আমরা আছি। যার কারণে আতঙ্কিত হয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন শহরসহ জেলার বিভিন্ন গ্রামের সাধারণ মানুষ।

আর তাদের আতঙ্কের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে মাঠে পুলিশ না থাকার কারণে। যদিও সেনাবাহিনী তাদের টহল অব্যাহত রেখেছেন। অনেক জায়গায় খবর পাওয়া মাত্রই ছুটে যাচ্ছেন। করছেন সহযোগিতা। তবে মানুষের জানমালের রক্ষা ও প্রতিনিয়ত যাদের জন্য মানুষ রাতের বেলায় শান্তিতে ঘুমাতে পারতেন সেই পুলিশ সদস্যদের মাত্র কয়েক দিনের অনুপস্থিত সাধারণ জনগণ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। পুলিশ মাঠে না থাকাতেই আতঙ্কের মাত্রা বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।

জানা যায়, গত সোমবার (৫ আগস্ট) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবির মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। এরপর দেশব্যাপী শুরু হয় এক অস্থির পরিবেশের। স্ব স্ব জায়গার দায়িত্ব পালনের কর্তব্য থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে রাখেন পুলিশ সদস্যরা।

এদিকে সাধারণ জনগণ চায় দ্রুত এই অস্থিরতা কেটে যাক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে নামুক। জনগণ আতঙ্ক ছাড়া ঘুমাতে চায়। তবে নওগাঁর ১১ থানায় শুরু হয়েছে পুলিশের কার্যক্রম। দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জনগণকে সেবা দেওয়া শুরু করেছে। শনিবার (১০ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে নওগাঁ সদর মডেল থানায় এমন চিত্র দেখা যায়। এ সময় থানার নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের দেখা গেছে। এছাড়া জনগণের জানমাল নিরাপত্তায় সড়কে টহল দিতেও দেখা যায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের।

শহরের রজাকপুর এলাকার মামুন বলেন, ডাকাত আতঙ্কের খবরে আমরা দুই একদিন রাত জেগে পাহারা দিয়েছি। এখন আর দিই না। কারণ কোথাও এমন কোনো ঘটনার খবর পাইনি।

শহরের সুলতানপুরের মিঠুন ও বৈশাখী জানান, আজও আমরা ডাকাত আতঙ্কে রাত পার করেছি। তবে এলাকার জনগণ পাহারায় ছিল। তাই কোনো অসুবিধা হয়নি। তবে আমরা এই আতঙ্ক নিয়ে রাত কাটাতে চাইনা। স্বাধীনভাবে থাকতে চাই।  

সদর উপজেলার ফারাদপুর এলাকার কয়েকজন বলেন, আমরা ডাকাত আতঙ্কে আছি। তাই প্রতিটি বাড়ি থেকে একজন করে নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে রাতে পাহারা দিচ্ছি। তবে এখনও পর্যন্ত কারও বাড়িতে ডাকাতি হয়নি বলে জানান তারা।

রাণীনগর উপজেলার ত্রিমোহণী এলাকার আমান মুঠোফোনে বলেন, শুক্রবার রাতে চুনিয়াগাড়ি ঘাটে এক নৌকা লোক নেমে দিয়ে চলে যায় বলে কয়েকজন আমাকে ফোনে জানাই। ফোন পেয়ে আমি বাজারে যাই। এরপর সেনাবাহিনীকে জানালে তারা আসেন। এর কিছুক্ষণ পর জানতে পারি নগর ব্রিজ এলাকায় একটি নৌকা ধরেছে জনগণ। সেখানে প্রায় ২০-৩০ জন যুবক ছিল। যাদের প্রত্যেকের বয়স হবে ১৮-৩০ বছরের মধ্যে। এবং নৌকাতে সাউন্ড বক্সসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি ছিল। তাদের ভাষ্য তারা পিকনিক খেতে এসেছিল। তাদেরকে দেখে বিভিন্ন কিছু মনে হচ্ছিল। দেশের এই অবস্থায় কেন তারা পিকনিকের জন্য নৌকা নিয়ে বের হবে, প্রশ্নের সুরে বলেন তিনি। আমরা আবারও সেনাবাহিনীকে ফোন করা মাত্রই তারা সহযোগিতার জন্য এসেছিলেন। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন। এরপর এলাকাবাসী তাদেরকে চলে যেতে বললে তারা নওগাঁর উদ্দেশ্যে চলে যায়। তবে আমাদের এলাকাসহ আশেপাশের এলাকায় কোথাও কোনো ডাকাতির ঘটনা না ঘটলেও আমরা আতঙ্কে আছি। এছাড়া কেউ কেউ ফায়দা হাসিলের জন্য গুজব বা আতঙ্ক অথবা অস্থিতিশীলতা করার চেষ্টা করতে পারে। তাই পুলিশের মাঠে থাকা জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন।

জেলার মহাদেবপুর উপজেলায় ডাকাত আতঙ্ক থেকে রক্ষার জন্য রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন বলেন জানা গেছে। এছাড়া অন্যান্য উপজেলাতেও ডাকাত আতঙ্ক আছে বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু মুঠোফোনে বলেন, এগুলো সম্পূর্ণ গুজব। একটি মহল প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। তাই আমরা জেলা বিএনপি সজাগ আছি। এবং জেলা জুড়ে প্রত্যেক ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিএনপির নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও তাদের ধর্মীয় উপাসনালয় গুলোতে পাহারা দিতে বলা হয়েছে নেতাকর্মীদের। তাই কোনো গুজবে কান না দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

জানতে চাইলে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডাকাতের নামে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। এ মুহূর্তে আতঙ্কিত না হয়ে কোথাও কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা গ্রুপের সন্দেহজনক ঘুরা-ফেরা দেখা গেলে সাথে সাথে পুলিশ অথবা সেনাবাহিনীকে জানাতে হবে। ইতোমধ্যে জেলা পুলিশের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেনাবাহিনীর সাথে রাতে পুলিশ সদস্যরা টহল দিচ্ছে। দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হবে। তবে সবার আগে পুলিশের কর্মস্থলকে শতভাগ নিরাপদ করতে হবে। আইন অনুযায়ী পুলিশকে কাজ করার পরিবেশ করে দিতে হবে। পুলিশ পুরোপুরি কাজে ফিরতে পারলেই খুব দ্রুত জনগণের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে। তাছাড়া জনগণের জানমাল রক্ষায় পুলিশ আগে যেমন সর্বদা নিয়োজিত ছিল, তেমনি ভবিষ্যতেও থাকবে বলে জানান পুলিশের ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা।

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  ডাকাত আতঙ্ক-ঘুম হারাম   নওগাঁ-রাজশাহী  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close