ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

বিক্রির খরায় হাসি নেই নৌকা কারিগরদের মুখে
প্রকাশ: রবিবার, ১১ আগস্ট, ২০২৪, ৪:২০ এএম  (ভিজিট : ১৭৮)
নদীমাতৃক বাংলাদেশ। বর্তমানে নদীতে পানি থাকলেও তেমন পানি নেই খাল-বিলে। ফরিদপুর অঞ্চলে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বাঁধ দিয়ে রাস্তা নির্মাণের ফলে সঠিকভাবে পানির প্রবাহ না হওয়ার কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চলের খাল-বিলে পানি ঢুকতে বিঘ্ন হচ্ছে। আর এই পানি প্রবাহের স্বল্পতার কারণে এ অঞ্চলের নৌকা চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্ষার এই ভরা মৌসুমেও নৌকা চলাচলের মতো পানি অনেক খাল-বিলেই নেই।

নৌকা তৈরির কারিগরদের আশা, এই বর্ষা মৌসুমে শেষের দিকে হলেও বৃষ্টিপাত হয়ে বিস্তৃত অঞ্চলে পানি বাড়বে। আর যত পানি বাড়বে তত নৌকার চাহিদা বাড়বে। বর্ষার একমাত্র বাহন হলো নৌকা যার ঐতিহ্য ফরিদপুর অঞ্চলে রয়েছে শত বছরের অধিক সময় ধরে। কিন্তু অতীতের ঐতিহ্যবাহী এই নৌকা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। 

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শশাঙ্ক কুমার বিশ্বাস বলেন, বর্ষা মৌসুমে এ এলাকায় পানির প্রবাহের যে গেট আছে সে গেট খুলে দিলে কুমার নদসহ আশপাশের এলাকায় নদীভাঙন শুরু হওয়ার খুব সম্ভাবনা আছে। এ ছাড়া এলজিইডি, বিএডিসি, বাংলাদেশ রেলওয়ের রাস্তা ও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য পানির স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। আর এই পানির প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য আমাদের পুরোনো রেগুলেটরের পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তির রেগুলেটর এসেছে যা পানি থেকে মাটির ছয় থেকে দশ ফুট পর্যন্ত খননের সক্ষমতা রয়েছে। পদ্মা নদীতে যত পানির প্রবাহ বাড়বে নদী খননের মাধ্যমে আশপাশের এলাকায় পানির প্রবাহ সঠিক রাখা সম্ভব হবে।  আশা করি আগামীতে বিভিন্ন খাল-বিলের প্রবেশদ্বারে মাটি খননের মাধ্যমে পানির প্রবাহ বাড়াতে সক্ষম হব।  

জানা যায়, ফরিদপুর অঞ্চলে যে কয়টি নদী রয়েছে তার শাখা-প্রশাখা ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত রয়েছে। নদীগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পদ্মা নদী, কুমার নদ, আড়িয়ালখাঁ নদ ও মধুমতী নদী। এসব নদীসহ শাখা নদীগুলো বহমান রয়েছে। 

সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টি না হওয়া, অতিমাত্রার খরা ও অধিক তাপপ্রবাহ এবং সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যে অনেক জায়গায় বাঁধ দিয়ে রাস্তা নির্মাণের কারণে খাল-বিলে পানি নেই বললেই চলে। 

সরেজমিন দেখা গেছে, ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় ভাঙ্গা বাজারে কুমার নদের পাড় ঘিরে নৌকার হাট বসেছে। সেই হাটে শত শত নৌকা সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা বিক্রির আশায়। কিন্তু আশানুরূপ ক্রেতা নেই। এই নৌকার হাট সপ্তাহে একদিন শুক্রবার বসে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চলে হাট। কিন্তু এ বছর ক্রেতার আনাগোনা খুব একটা চোখে পড়ছে না। এ কারণে নৌকা বানানোর কারিগরসহ নৌকা ব্যবসায়ীরা অলস সময় পার করছেন। এ অঞ্চলে বর্ষাকালে বিশেষ করে আষাঢ় মাস থেকে ভাদ্র মাস জুড়ে মৌসুমি নৌকার ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠত। নৌকার পাশাপাশি বর্ষায় এই হাটে ছোট নৌকা আঞ্চলিক ভাষায় বলে ডিঙি নৌকা, তাল গাছের ডোঙা এবং বৈঠা বিক্রি হয়। একসময় ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও জেলা থেকে ঐতিহ্যবাহী এই ভাঙ্গায় নৌকার হাটে ক্রেতা- বিক্রেতার হাঁক-ডাকে মুখর থকত।

সরেজমিন কয়েকজন নৌকার কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা জানা যায়। ফরিদপুরের ভাঙ্গার নৌকা কারিগর গৌতম মণ্ডল (৬৫) বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছরেরও অধিক সময় ধরে আমি নৌকা তৈরি করে ভাঙ্গারহাটসহ পাশর্^বর্তী জেলার হাটগুলোতে নৌকার ব্যবসা করে আসছি। ছোটবেলায় আমার বাবার সঙ্গে বিভিন্ন হাটে নৌকা বিক্রি করতে যেতাম। বাবা মারা যাওয়ার পরে এখন আমি নিজেই করি। কিন্তু নৌকার তৈরির কাঠসহ বিভিন্ন সরঞ্জামের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ অনেক বেড়ে গেছে। আর এ অঞ্চলে ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের পরে গ্রামের খালে-বিলে নৌকা চলাচলের মতো তেমন পানি হয় না। চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে নৌকার ব্যবসা করে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। 

আরেকজন নৌকার কারিগর কৃষ্ণ মণ্ডল (৫০) বলেন,  আমি ২৫ বছর ধরে নৌকা তৈরি ও নৌকা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এখন আর আগের মতো নৌকা চলে না। আগে বর্ষার মৌসুমে এই ভাঙ্গা বাজার নৌকার হাটে ৫০ থেকে ১০০টি নৌকা বিক্রি হতো। কয়েক বছর ধরে ২০ থেকে ৩০টি নৌকা বিক্রি হয়। নৌকা কম চলার একমাত্র মূল কারণ পানির অভাব। পানি না থাকলে মানুষ নৌকা দিয়ে কি করবে? এরকম যদি প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে পানির সংকট থাকে তা হলে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এ অঞ্চলের একমাত্র নৌকার হাটটি আস্তে আস্তে কোন একসময় বিলীন হয়ে যাবে। যদিও এ বছর দেরিতে হলেও বৃষ্টি হচ্ছে। আর এ বৃষ্টি যত বেশি হবে তত আমাদের নৌকার ব্যবসা ভালো হবে। এ অঞ্চলের নৌকা ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর দাবি, আগামীতে ফরিদপুর জেলাসহ এ অঞ্চলের নদী ও খাল-বিলে পানির প্রবাহ যেন ঠিক থাকে সেই লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close