ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

সড়কে চাঁদাবাজি হচ্ছে না, প্রভাব পড়েছে বাজারেও
প্রকাশ: শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৪, ৩:১৮ এএম  (ভিজিট : ৩০৬)
নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পেছনে অন্যতম দায়ী সড়ক-মহাসড়কে অনিয়ন্ত্রিত চাঁদাবাজি।চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য ছিল রাজধানীর প্রায় সব পাইকারি ও খুচরা বাজারেও। তবে এখন রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এসব চাঁদাবাজি বন্ধ রয়েছে। যদিও নতুন করে চাঁদাবাজির চেষ্টাও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সবজিসহ মাছ, ডিম ও মুরগির মতো পণ্য বিভিন্ন উৎপাদনস্থল থেকে ঢাকার বাজারে আসতে বেশ কয়েকবার চাঁদা দিতে হতো। এসব চাঁদা নিতেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা। এখন কেউ না থাকায় হচ্ছে না চাঁদাবাজি। এর প্রভাব পড়েছে বাজারেও। গত কয়েক দিনে বেশকিছু নিত্যপণ্যের দাম অনেকটাই কমে এসেছে।

রাজধানী ঢাকার পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজার থেকে শুরু করে খুচরা বাজারেও নেওয়া হতো চাঁদা। কারওয়ান বাজারে পণ্যবাহী ট্রাকপ্রতি ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা চাঁদা দিতে হতো। এ ছাড়া খুচরা বাজারের বিক্রেতারা সেখান থেকে পণ্য কিনে আনার সময় আবারও প্রতিটি পরিবহনের জন্য আলাদা টাকা দিতে হতো। পাশাপাশি প্রতি বস্তা লোডিং-আনলোডিংয়ের জন্য দিতে হতো নির্দিষ্ট টাকা। এসব এখন বন্ধ।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অনেকটা স্বস্তিভাব বিরাজ করছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে। কোটাবিরোধী আন্দোলন ও আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা, এরপর সরকারের পতন সব মিলিয়ে স্থবির হয়ে পড়েছিল দেশের অর্থনীতি। বাজারে পণ্য সরবরাহে দেখা দিয়েছিল তীব্র সংকট। বিক্রেতারা বলছেন, সেই সংকট অনেকটা কেটে গেছে।

বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে সবজি, ডিম, মুরগি ও পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে চাল, ডাল, তেলের মতো কয়েকটি পণ্যের দর আগের জায়গায় স্থিতিশীল রয়েছে।

আরও দেখা গেছে বাজারেভেদে বেগুন, পটোল, পেঁপে, ঢ্যাঁড়শ ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ধুন্দল, ঝিঙে ও চিচিঙ্গার দাম ৬০ টাকার মধ্যে আর বরবটি, করলা ৮০ টাকা। এ সপ্তাহের শুরুতেও এসব সবজির দাম ছিল ৮০-১০০ টাকা। অর্থাৎ কয়েক দিনের ব্যবধানে কিছু সবজির দাম অর্ধেকে নেমেছে। আন্দোলনের আগের তুলনায়ও এখন সবজির দাম বেশ কম, বলছেন ক্রেতারা।

গত সোমবার-মঙ্গলবার ঢাকায় প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ১৯০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। যা এখন ১৫০-এ নেমেছে। তবে পাড়া-মহল্লার দোকানে এখনও ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে কমেছে ব্রয়লার মুরগির দামও। প্রতি কেজিতে ২০ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৯০ টাকা দরে।
আন্দোলনের সময় পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়েছিল, যা কমে এখন আবার আগের দাম ১০০-১১০ টাকায় এসেছে। একইভাবে আলুর দাম আবারও ৬০ টাকা কেজিতে নেমে এসেছে।
খুচরা বাজারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা অস্থায়ী প্রতিটি দোকান থেকে ২০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করতেন। এসবের প্রভাব পড়ত পণ্যের দামে। ফলে যে দামে পণ্য বিক্রি হওয়ার কথা তার চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি হতো।

বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার বলেন, ‘বাজারে এখন কেউ টাকা নিচ্ছে না। রাস্তাঘাটে এখন চাঁদাবাজি নেই।’ আগে কারওয়ান বাজারে গাড়ি বুঝে, জায়গা বুঝে, পণ্য বুঝে মনমতো চাঁদা তোলা হতো। ফলে বেড়ে যেত পণ্যের দাম। এখন চাঁদাবাজি না হওয়ায় গত কয়েক দিনে পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। তবে নতুন করে কেউ কেউ চাঁদাবাজির চেষ্টা করছেন বলে জানান ইমরান মাস্টার।

এ বিষয়ে ক্ষুদ্র আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘নামে-বেনামে অনেকে ফোন দিচ্ছেন ব্যবসায়ীদের। তারা চাঁদা দাবি করছেন। আমরা ব্যবসায়ীদের বলেছি, যারা আসবে বা ফোন করবে, তাদের তথ্য সেনাবাহিনীর কাছে দিতে।’

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন স্থানে দলটির নেতাকর্মী ও পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধ হয়েছে। তবে এই সুযোগে গত তিন দিনে নতুন করে চাঁদাবাজির চেষ্টা করেছেন কিছু ব্যক্তি। এসব ব্যক্তি নিজেদের বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী বলে ব্যবসায়ীদের কাছে পরিচয় দিচ্ছেন। কেউ কেউ চাঁদার টাকা পাঠাতে ব্যবসায়ীদের কাছে বিকাশ নম্বরও দিয়ে গেছেন।
ব্যবসায়ীরা মনে করেন, যদি আবার চাঁদাবাজি শুরু হয়, তা হলে পণ্যের দাম ফের বেড়ে যাবে। কেননা এক দল বিদায় হলেও আরেক দল দখলবাণিজ্যে নেমেছে। প্রতিদিনই বাজারে এসে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন তারা। তবে ব্যবসায়ীদের মধ্যে চাঁদা না দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার অঙ্গীকার রয়েছে।

ওমর ফারুক নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এবার আমরা চাঁদা দেব না। প্রয়োজনে রাস্তায় নামব, নিজেরা প্রতিরোধ গড়ে তুলব শিক্ষার্থীদের মতো।’

রাজধানীর বিভিন্ন ফুটপাথেও চাঁদাবাজি বন্ধ রয়েছে। সাইফুল গাজী নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আগে প্রতিদিন ফুটপাথ ভাড়া দিতে হতো ২৫০ টাকা। এ ছাড়া পুলিশকে ১০০ টাকা এবং সিটি করপোরেশনের নামে ৫০ টাকা চাঁদা নেওয়া হতো। চার দিন ধরে এসব টাকা দেওয়া লাগছে না। ফলে বাড়তি খরচ থেকে রেহাই পাচ্ছেন ছোট ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।’

গত কয়েক দিন রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে শিক্ষার্থীরা চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিল করেছেন। পাশাপাশি তারা হ্যান্ডমাইক দিয়ে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছেন। একইসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর চাঁদাবাজি বন্ধে বাজারে নতুন করে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘চাঁদাবাজি প্রতিরোধে শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে অধিদফতরের সব কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নতুন করে যেন কেউ চাঁদাবাজিসহ হিডেন চার্জ নিতে না পারে, সে ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close