ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

নরসিংদীর ঐতিহ্যবাহী আটকান্দি মসজিদ
প্রকাশ: শুক্রবার, ৯ আগস্ট, ২০২৪, ৮:০১ এএম  (ভিজিট : ২৫৪)
নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার আটকান্দি গ্রামে ছোট মেঘনা নদীর কূল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের সাক্ষী এই মসজিদ। দেখতে অনেকটা আগ্রার তাজমহলের মতো। মসজিদের চারপাশটা সবুজে ঢাকা। নানা জাতের গাছপালায় ভরপুর পরিবেশ। ছায়া সুনিবিড় ঠান্ডা আবহ খেলা করে সবসময়। নদীর কাছে হওয়ায় সবসময় নীরবতায় আচ্ছন্ন থাকে মসজিদ এলাকা। ৩৪টি খিলানের ওপর দাঁড়িয়ে আছে মসজিদটি। খিলানের ওপরের অংশে রয়েছে অপূর্ব কারুকাজ। 

দুই ফুট পুরু দেয়াল। পাথর বসানো মেঝে। মেহেরাবজুড়ে মোজাইক পাথর বসানো। বিভিন্ন ফুলের দৃষ্টিনন্দন কাজ। আঁকা হয়েছে গাছের পাতা। সাদা আর নীল রঙের কারুকাজ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। ওপরে গম্বুজ আছে আটটি। মূল মসজিদের ওপর তিনটি। মাঝখানেরটি অপেক্ষাকৃত বড়। মূল মসজিদের বাইরে আছে পাঁচটি গম্বুজ। এগুলো মসজিদের গম্বুজ থেকে কিছুটা ছোট। বারান্দা দিয়ে মূল মসজিদে প্রবেশের দরজা আছে পাঁচটি। বারান্দার দুই পাশে রয়েছে আরও দুটি দরজা। ভেতরে প্রবেশের পথ তিনটি।

মসজিদের কোনো শিলালিপি না থাকায় সঠিক নির্মাণ তারিখ কেউ বলতে পারে না। স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী এটি প্রায় ১৫০ বছরের পুরোনো মসজিদ। শতাব্দী প্রাচীন এ মসজিদটি মোগল স্থাপত্যের আদলে গড়া। সুদূর মহীশুর থেকে কারিগর এনে নির্মাণ করা হয়েছে। অনেকে মসজিদের গম্বুজকে তাজমহলের গম্বুজের সঙ্গে তুলনা করেন। নরসিংদীর শেকড়সন্ধানী লেখক সরকার আবুল কালাম ‘কিংবদন্তির নরসিংদী’ গ্রন্থে লেখেন-মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা আলিম উদ্দিন ছিলেন দেওবন্দ ফারেগ আলেম। তিনি একজন ধার্মিক মানুষ ছিলেন। 

একসময় তিনি ঢাকার নবাববাড়ির (পূর্বে খাজা বাড়ি) মাদরাসা ও পরে চিঠি লেখা এবং উত্তর প্রদানের দায়িত্ব পান। নবাবদের অত্যাচার, জুলুম ও ট্যাক্স প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের লক্ষ্যে কৌশলে বিয়ে করেন নবাববাড়ির মেয়েকে। এরপর তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে চলে আসেন নিজ এলাকায়। প্রতিষ্ঠা করেন মসজিদ। অনুমান করা হয়, এটি ১৮৯০ সালের দিকে নির্মাণ করা হয়। মসজিদটি মোগল আমলের আদলে তৈরি করা হয়েছে।

স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তি আবদুল লতিফ বলেন, ঢাকার নবাববাড়িতে মাওলানা আলিম উদ্দিনের চাকরি হয়। বাচ্চাদের মক্তবে পড়াতেন এবং নবাব পরিবারেই বিয়ে হয়। একসময় স্ত্রীকে নিয়ে চলে আসেন নিজ শহর নরসিংদীর রায়পুরার আটকান্দি গ্রামে। এখানে এসে ৪০ বিঘা জমি কেনেন। ইটভাটা নির্মাণ করেন। সেখানে ইট তৈরি করে তারপর মসজিদ আর থাকার ঘর নির্মাণ করেন। এখনও মাটি খুঁড়লে ইটভাটার নিদর্শন পাওয়া যায়। মেঘনা নদীর পাড়ে সুন্দর একটি শানবাঁধানো ঘাট নির্মাণ করেছিলেন। অল্প সময়ে হয়ে উঠেন স্থানীয় জমিদার। মসজিদকেন্দ্রিক সমাজ পরিচালিত হতো। আটকান্দি নীলকুঠি মসজিদের পাশেই তার স্ত্রীর কবর রয়েছে।

ধারণা করা হয়, স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা এবং আবেগ থেকেই মাওলানা আলিম উদ্দিন এই মসজিদ নির্মাণ করেন। তবে মসজিদের কোনো শিলালিপি না থাকায় মসজিদটির সঠিক নির্মাণ সাল এবং নির্মাণের কারণ জানা সম্ভব হয়নি। প্রতিদিনই এই ঐতিহাসিক মসজিদটিকে দেখতে অনেক ঐতিহ্যপ্রেমী এবং ভ্রমণপিপাসু মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে এখানে ছুটে আসেন। মসজিদটিতে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয়। কিন্তু নির্মাণের পর থেকে মসজিদের কোনো সংস্কার না করার ফলে বর্তমানে মসজিদের ভেতর ও বাইরের অবস্থা খুবই নাজুক। অল্প বৃষ্টিতেই মসজিদের দেয়াল দিয়ে ভেতরে পানি ঢুকে। তাই ঐতিহাসিক এই মসজিদটিকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আওতাভুক্ত করে সংস্কার করা প্রয়োজন। যদি এখনি সঠিকভাবে সংস্কার করা না যায় তা হলে কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে আরও একটি ঐতিহাসিক নির্দশন।


সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close