ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

সফর মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত
প্রকাশ: শুক্রবার, ৯ আগস্ট, ২০২৪, ২:১৫ এএম  (ভিজিট : ২২৫৪)
হিজরি বর্ষপঞ্জির দ্বিতীয় মাস সফর। সফর আরবি শব্দ। এর অর্থ, খালি, শূন্য। আরবিতে ‘সফরুল মাকান’ বলতে এমন জায়গা বোঝায় যা মানুষ শূন্য। এ জন্য এ মাসের নামকরণ করা হয় ‘সফর’। আর ইসলামি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহররম। এই শব্দটি মূলত নামবাচক বিশেষ্য নয় বরং গুণবাচক বিশেষণ। ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে প্রাচীন মক্কার বছর গণনার দুটি মাস ছিল। প্রথম সফর ও দ্বিতীয় সফর। মহররম ও সফরে সানি একই নামের দ্বিবাচনিক রূপ দেখে তা সহজেই বোঝা যায়।

প্রাচীন আরব বছরের প্রথম অর্ধবছরে তিনটি মাস ছিল। যথা-সফর, রবি এবং জুমাদা। এই তিন মাসের প্রত্যেকটিতে দুটি করে মাস ছিল। যেমন প্রথম সফর, দ্বিতীয় সফর। প্রথম রবি, দ্বিতীয় রবি। প্রথম জুমাদা এবং দ্বিতীয় জুমাদা। যেহেতু বছর শুরু দুই সফরের প্রথমটি অলঙ্ঘনীয় ও পবিত্র মাসগুলোর অন্যতম ছিল, তাই এর গুণবাচক আখ্যা দেওয়া হয়েছিল ‘আল মুহাররম’। ধীরে ধীরে এই গুণবাচক মহররম নামটি প্রসিদ্ধ হয়ে গেছে। আর দ্বিতীয় সফর মাসটি সফর মাস নামেই অভিহিত হয়ে আসছে। এর কোনো পরিবর্তন হয়নি এবং হবেও না। ‘সিফর’ মূল ধাতু থেকে উদ্ভূত হলে ‘সফর’ মানে হবে শূন্য, রিক্ত। আর ‘সাফর’ ক্রিয়া মূল থেকে উৎপন্ন হলে অর্থ হবে হলুদ, হলদেটে, তামাটে, বিবর্ণ, ফ্যাকাশে, পাণ্ডুবর্ণ, দীপ্তিহীন, রক্তশূন্য ইত্যাদি।

জাহেল আরবরা এই মাসকে দুঃখের মাস মনে করত, এমনকি তারা এ মাসের চাঁদ দেখা থেকে পর্যন্ত বিরত থাকত এবং দ্রুত মাস শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করত। ইসলামি বিশ্বাস মতে, সময়ের সঙ্গে কোনো অকল্যাণ নেই; কল্যাণ-অকল্যাণ নির্ভর করে মানুষের বিশ্বাস ও কর্মের ওপর। অনেকে এই মাসকে একটি দুঃখের মাস মনে করেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাকে সফর মাস শেষ হওয়ার সুসংবাদ দেবে, আমি তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দেব। রাসুল (সা.) স্বয়ং সফর মাসের শিগগিরই অবসান কামনা করেছেন। তাই তো এ মাসে বেশি বেশি নফল ইবাদত করে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও জাতির সমুদয় অকল্যাণ থেকে মুক্ত থাকতে আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করতে হবে।

একবার হজরত আবু বকর ইসলামের দাওয়াত নিয়ে দূরের এক জনপদে সফরে যান। সে সফর থেকে ফিরতে অনেক বিলম্ব হচ্ছিল। কোনো চিঠি বা সংবাদও আসছে না। এমতাবস্থায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রিয় সাহাবির জন্য চিন্তিত হয়ে পড়লেন। ওই সময় একটি চিঠি এলো, তাতে লেখা, হে আল্লাহর রাসুল! আমি সফর মাস শেষে মদিনায় ফিরব। কিন্তু তখনও সফর মাসের বেশ সময় বাকি। তাই তিনি হজরত আবু বকরের অপেক্ষায় থাকাকালীন সময় সফর মাস শেষের অপেক্ষায় থাকলেন যে, কখন সফর মাস শেষ হবে। তখন তিনি ওই হাদিসটি বলেছিলেন। তা ছাড়া এ মাসের শেষ বুধবার পবিত্র আখেরি চাহার শোম্বা পালিত হবে। ফারসি শব্দ আখেরি চাহার শোম্বা অর্থ শেষ চতুর্থ বুধবার। সফর মাসের শেষ বুধবারকে ‘আখেরি চাহার শোম্বা’ বলা হয়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) সফর মাসের শেষের দিকে অসুস্থ হন। তিনি সফর মাসের শেষদিকে কিছুটা সুস্থ হন এবং গোসল করেন। এরপর তিনি পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এই অসুস্থতাতেই তিনি পরের মাসে ইন্তেকাল করেন। এ জন্য অনেকে এই দিনে রাসুলের সর্বশেষ সুস্থতা ও গোসলের স্মৃতি উদযাপন করেন। এ কারণে দিনটি মুসলমানরা ‘শুকরিয়া দিবস’ হিসেবে পালন করেন। এ দিনকে ঘিরে এমন আরও অনেক কথা প্রচলিত রয়েছে। তবে ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, উপরোক্ত বিষয় এবং এ মাসের ফজিলত বিষয়ে যা কিছু বলা হয় তার সবই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এমন কোনো বর্ণনা হাদিসে নেই। আরও মজার বিষয় হলো ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়া অন্য কোনো মুসলিম সমাজে সফর মাসের শেষ বুধবার পালনের রেওয়াজ নেই। তারা জানেও না আখেরি চাহার শোম্বা কী!

বিশুদ্ধ হাদিস ও সিরাতের গ্রন্থে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অসুস্থতা, অসুস্থকালীন অবস্থা, কর্ম ও ইন্তেকাল ইত্যাদির ঘটনা বিস্তারিত বর্ণিত আছে। কিন্তু কোথাও কোনোভাবে, কোনো দিন, তারিখ বা সময় উল্লেখ করা হয়নি। এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। অসুস্থ হওয়ার পরে মাঝে কোন দিন তিনি সুস্থ হয়েছিলেন এটা কেউ উল্লেখ করেননি। তবে কয়েক দিন অসুস্থ থাকার পর তিনি গোসল করেছিলেন বলে সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন আমার ঘরে প্রবেশ করলেন এবং তার অসুস্থতা বৃদ্ধি পেল তখন তিনি বললেন, তোমরা আমার ওপরে সাত মশক পানি ঢাল, যেন আরামবোধ করে লোকদের নির্দেশনা দিতে পারি। তখন আমরা এভাবে তার দেহে পানি ঢাললাম। এরপর তিনি মানুষের কাছে গিয়ে তাদের নিয়ে নামাজ আদায় করলেন এবং তাদের ওয়াজ করলেন। (বুখারি)

এখানে স্পষ্ট যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) তার অসুস্থতার সময় অসুস্থতা ও জ্বরের প্রকোপ কমানোর জন্য এভাবে গোসল করেন। যেন কিছুটা আরামবোধ করেন এবং মসজিদে গিয়ে সবাইকে নসিহত করতে পারেন। এই গোসল করার ঘটনা কত তারিখে বা কোন বারে ঘটেছিল তা হাদিসের কোনো বর্ণনায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। তবে আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমসহ অন্যান্য হাদিসের সঙ্গে এই হাদিসের সমন্বয় করে উল্লেখ করেছেন যে, এই গোসলের ঘটনাটি ঘটেছিল ইন্তেকালের আগের বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ইন্তেকালের পাঁচ দিন আগে। (ফাতহুল বারি : ৮/১৪২)

উপরোক্ত বিষয় ছাড়াও অনেকেই সফর মাসকে অশুভ মনে করে থাকেন। ইসলামি শরিয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। কোনো স্থান, সময়, বস্তু কিংবা কর্মকে অশুভ অথবা অমঙ্গলময় বলে মনে করা ইসলামি বিশ্বাসের পরিপন্থী। এটা একটি কুসংস্কার। প্রাচীন আরবের মানুষরা জাহেলি যুগ থেকেই সফর মাসকে অশুভ ও বিপদাপদের মাস বলে বিশ্বাস করত। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের এই বিশ্বাসের প্রতিবাদ করে বলেন, ‘ইসলামে কোনো অশুভ-অযাত্রা নেই’ (বুখারি ও মুসলিম)। আল্লাহ তায়ালা আমাদের এ মাসের প্রত্যেকটি দিনরাতে ফরজ-ওয়াজিব আমলের পাশাপাশি নফল নামাজ ও রোজা পালনসহ ইবাদত-বন্দেগিতে আত্মনিয়োগ করার তওফিক দান করুন।

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close