ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

উম্মতের প্রতি নবীজির পাঁচ অসিয়ত
প্রকাশ: শুক্রবার, ৯ আগস্ট, ২০২৪, ১২:৩৭ এএম  (ভিজিট : ২৭০)
ইসলামে এমন কিছু কাজ আছে যেগুলো আদায় ও পালন করতে মানুষ বিলম্ব করে থাকে। অথচ ওই কাজগুলো করতে বিলম্ব করতে নেই। এ ব্যাপারে হজরত আলী (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে পাঁচটি কাজ দ্রুত করার অসিয়ত বা নির্দেশ দিয়েছেন। এখানে সেসব নিয়ে আলোচনা করা হলো।

নামাজ আদায়ে বিলম্ব নয় : পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের গুরুত্ব কমবেশি সবাই জানে এবং সেভাবে গুরুত্বসহকারে আদায় করে থাকে। তবে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মতের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ একটি অসিয়ত বা নির্দেশনা হলো-পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ে বিলম্ব না করে শুরুর ওয়াক্তে আদায় করা। এ ব্যাপারে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই নামাজ মুসলিমদের এক অবশ্য পালনীয় কাজ নির্ধারিত সময়ে’ (সুরা নিসা : ১০৩)। বোঝা গেল, মুমিনদের ওপর নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ আদায় করা ফরজ। যেকোনো মূল্যে নামাজ নির্দিষ্ট সময় আদায় করতে হবে। যদি কেউ অসুস্থ হয়ে থাকে তবে বসে অথবা চিত বা কাত হয়ে এমনকি শুয়ে হলেও নামাজ আদায় করতে হবে। যুদ্ধরত অবস্থায়ও নামাজ আদায় করতে হবে।

দ্রুত তওবা করা : গুনাহের প্রতি মানুষের আকর্ষণ স্বভাবজাত। শয়তানের ধোঁকা, নফসের প্ররোচনা, পরিবেশের তাড়না, মানুষকে বিভিন্ন গুনাহের কাজে জড়িয়ে ফেলে। তাই গুনাহ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তায়ালার কাছে খাঁটি দিলে তওবা করা। তওবা আল্লাহ তায়ালার কাছে অত্যন্ত পছন্দনীয় একটি আমল। এর দ্বারা আল্লাহ তায়ালা বান্দার যাবতীয় গুনাহ মাফ করেন। তওবা আল্লাহ তায়ালার কাছে কতটা প্রিয় তা কল্পনা করা সম্ভব নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা বান্দার তওবার কারণে সেই লোকটির চেয়েও বেশি খুশি হন যে মরুভূমিতে তার একমাত্র বাহন উট হারানোর পর খুঁজে পেলে যে পরিমাণ খুশি হয়, তার চেয়ে বেশি খুশি আল্লাহ তায়ালা হন।’ (বুখারি : ৬৩০৯) 

সন্তানদের দ্রুত বিয়ে করানো : পিতা-মাতার ওপর যত দায়িত্ব রয়েছে তন্মধ্যে অন্যতম হলো ছেলেমেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেলে দ্বীনদার পাত্র-পাত্রী দেখে বিয়ে দেওয়া। ছেলেদের দাড়ি গজানোর দ্বারা আর মেয়েদের ঋতু শুরু হওয়ার দ্বারা পিতা-মাতাকে একথা বুঝানো হয় যে তাদের বিয়ের বয়স হয়ে গেছে, আর দেরি করা যাবে না। অতএব প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে বিয়ে দিয়ে দেওয়া পিতা-মাতার কর্তব্য। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও যদি পিতা-মাতা সন্তানের বিয়ে না দেয় আর এ কারণে সন্তান কোনো গুনাহে লিপ্ত হয়, অবৈধ কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে যায় তা হলে এই গুনাহে দায়-দায়িত্ব পিতা-মাতার ওপর বর্তাবে। হাদিসে এসেছে, ‘সন্তান জন্মগ্রহণের পর পিতা-মাতার দায়িত্ব হলো তার সুন্দর নাম রাখা এবং তাকে দ্বীন শিক্ষা দেওয়া, আর বালেগ হয়ে গেলে বিয়ে করিয়ে দেওয়া। যদি বালেগ হওয়ার পরও বিয়ে না করিয়ে দেয় আর সন্তান কোনো গুনাহে লিপ্ত হয় তা হলে এই গুনাহের দায়ভার পিতার ওপর বর্তাবে।’ (বায়হাকি : ৮২৯৯)

দ্রুত কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা : মৃত্যু এমন সত্য যা মুসলিম-অমুসলিম, ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ বিনাবাক্যে মৃত্যুর কথা মেনে নিতে এবং বিশ্বাস করতে বাধ্য। তাই যখন কোনো মানুষ মারা যাবে তখন তার কাফন-দাফন, জানাজা, কবরস্থ ইত্যাদি কাজ খুব দ্রুততার সঙ্গে শেষ করা। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত-রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জানাজা নিয়ে দ্রুত চলা উত্তম কাজ। লোকটা যদি নেককার হয় তা হলে তো কল্যাণের দিকেই তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর যদি এর বিপরীত হয় তা হলে দ্রুতই নিজেদের দায়িত্ব থেকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে’ (বুখারি : ১৩১৫)। অর্থাৎ মানুষের মৃত্যুর পর তার গোসল, কাফন-দাফন, জানাজা ইত্যাদি বিষয় দ্রুত সেরে কবরস্থ করা।

দ্রুত ঋণ পরিশোধ করা : সমাজ জীবনে চলতে গেলে নানাবিধ কারণে পরস্পরের প্রতি সাহায্য সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। এরকম একটি বিষয় হচ্ছে ঋণের আদান-প্রদান। ঋণ মানবজীবনের অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কুরআন-হাদিসে ঋণদাতা ও গ্রহীতার যাবতীয় সব বিষয় সুস্পষ্ট আকারে বর্ণিত আছে। এক হাদিসে আছে, ঋণ গ্রহীতা যখন সচ্ছল হয়ে যায় তখন দ্রুত ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া তার কর্তব্য। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত-রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ধনী ব্যক্তির ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করা জুলুম’ (বুখারি : ২২৮০)। মহান আল্লাহ সবাইকে বোঝার ও আমল করার তওফিক দিন।

মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলুম মাদরাসা 
 মধুপুর, টাঙ্গাইল

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close