ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ডাকাত আতঙ্কে সারাদেশে মানুষের নির্ঘুম রাত
*সেনাবাহিনী ও জনতার ধাওয়ায় ঢাকায় আটক ৩৫ *মসজিদে মসজিদে মাইকিং, পাড়ায়-মহল্লায় লাঠি-বাঁশিনিয়ে মহড়া স্থানীয়রা
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৮ আগস্ট, ২০২৪, ৮:১৬ পিএম আপডেট: ০৯.০৮.২০২৪ ১:২২ এএম  (ভিজিট : ৩৮৩)
বুধবার রাত তখন ২টা। সবাই গভীর ঘুম। হঠাৎ মসজিদের মাইকে একজন বলছেন, ‘আপনারা সকলে ঘুম থেকে উঠুন এলাকায় ডাকাত পড়েছে।’ পর্যায়ক্রমে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে মূহর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পরে মাইকিংয়ের শব্দ। ডাকাতের ভয়ে নারী-শিশুসহ নগরবাসীর মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পরে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের প্রায় সবগুলো জেলাতেই বুধবার দিবাগত রাতে ডাকাত আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। তবে নগরবাসীর ডাকে সারা দিয়ে বেশ কয়েকটি জায়গায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাৎক্ষনিক উপস্থিত হয়ে এলাকাবাসীর সহযোগীতায় ৩৫ জনকে আটক করে নিয়ে গেছে।

সম্প্রতি ছাত্র-জনতার এক দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপরে থানাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও সহিংসতা চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। জীবন বাঁচাতে একপর্যায়ে আত্মগোপনে চলে যায় পুলিশ সদস্যরা। সারাদেশের থানাগুলো অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও অস্ত্র-গোলাবারুদ নিয়ে যাওয়ায় চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পরে দেশের মানুষ। অভিযোগ উঠেছে লুটে নেওয়া আগ্নেয়াস্ত্র দিয়েই বাসায় বাসায় তল্লাশি চালিয়ে ছিনতাই-ডাকাতি করছে দুর্বৃত্তরা।

বুধবার (৭ আগস্ট) রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী বাসা-বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে নৈরাজ্য, লুটপাট আর ডাকাতি শুরু করে দুর্বৃত্তরা। একই সঙ্গে রাস্তাঘাটে অবস্থানরত দোকানগুলোতেও লুটপাট করেন তারা। দেশিও অস্ত্র রামদা, চাকু, লাঠি, বাঁশ ও লুট হওয়া পুলিশের অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয় একদল দুর্বৃত্তরা। তারা দলে ৩০-৪০ জন করে ছোট পিকাপভ্যানে করে মহড়া দেন। রাস্তায় যাকে পাচ্ছে তাকেই ধরে নিয়ে যায়। আবার সুযোগ বুঝে বাসাবাড়িতেও হামলা চালায়। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে। এমন অবস্থায় রাস্তা-ঘাটে বের হতেই ভয় পাচ্ছে সাধারণ জনগণ।

বুধবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে রাত তিনটা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আরশিনগর, আটিবাজার, নয়াবাজার, বসিলা, বসিলা মেট্রো হাউজিং, মোহাম্মদপুরের কাদিরাবাদ হাউজিং, শেখেরটেক, জিগাতলা, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ এলাকা, শনিরআখড়া, মিরপুরের পল্লবী, মিরপুর ১০, ইসিবি চত্বর এলাকা, উত্তরার ৮-৯, ১০-১১ নম্বর সেক্টর, গাজীপুর ও টঙ্গী কলেজ রোড এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৩৫ জনকে আটক করে সেনাবাহিনীর কাছে তুলেদেন স্থানীয়রা।

শুধু মিরপুর পল্লবী এলাকায় ডাকাতি করতে গিয়ে আটক হয়েছেন ১৭ জন। আটক হওয়া কয়েকজন ডাকাত এলাকাবাসীর মারধরের সময় জানিয়েছেন, নাহিদ নামে এক যুবক তাদেরকে টাকা পয়সা দিয়ে নামিয়েছে এবং সেই সাথে বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩০০ যুবক সংগ্রহ করে এ কাজে লাগাচ্ছে নাহিদ। নাহিদও একজন ছিনতাইকারী এবং সন্ত্রাসী। এছাড়াও আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের এ কাজে নামিয়েছে বলে জানায় তারা। মোহাম্মাদপুর ও বসিলায় ডাকাতিকালে নয় জনকে আটক করা হয়েছে। উত্তরায় ডাকাতিকালে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।

মোহাম্মাদপুরের বাসিন্দা তৌফিক রহমান জানান, বসিলা মেট্রো হাউজিং, সিটি হাউজিংয়ে ডাকাত ঢুকেছিল। এ সময় তারা মেট্রোর কয়েকটা বাসা থেকে অস্ত্র ধরে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায় ডাকাতরা। এরপর সেনা সদস্যরা চলে আসায় আবার সিটি হাউজিংয়ে ঢুকে পড়ে। তবে সিটি হাউজিংয়ের কারো বাসায় ঢুকতে পারেনি। এর আগেই দু’জনকে এলাকা বাসিরা আটক করেন। বাকিরা পালিয়ে যায়। গত বুধবার রাতে এলাকাবাসী সবাই নিজ নিজ বাড়ি পাহারা দেয়। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ‘৪০-৫০ জন যুবক হাতে দেশীও অস্ত্র নিয়ে মোহাম্মাদপুর এলাকার বিভিন্ন সড়কে মহড়া দিচ্ছে। তারা ১০-১২ জন করে প্রতিটি অলিগলিতে ঢুকছে।’

মিরপুর, উত্তরা, যাত্রাবাড়ীর কয়েকজন স্থানীয়রা জানান, এলাকায় ডাকাতি হচ্ছে খবর পেয়ে মসজিদের মাইকে সতর্ক করা হয়। পরে লোকজন লাঠিসোটা ও যার যা অস্ত্র ছিল তা নিয়েই রাস্তায় বেরিয়ে আসেন এবং তাদের ধাওয়া করেন। বিভিন্ন জায়গায় ডাকাত সদস্যরা আটকও হয়েছেন। তবে এই অবস্থা কতদিন ধরে চলবে তারা তা জানেন না। বিষয়টি নিয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাসি-তামাশাও করছেন। তবে কেউ কেউ ডাকাতির প্রমাণস্বরূপ এলাকায় ডাকাতদের ধাওয়া দেওয়া ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এলাকায় ডাকাতি রোধে সতর্ক আছেন তারা, অন্যদেরও নিজ নিজ এলাকায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করার আহ্বান জানান অনেকে। এমন ঘটনার পরও ফেসবুকে একটি গোষ্ঠী ডাকাতের এই ঘটনাকে মিথ্যা বলে চালিয়ে দিচ্ছেন।

এলাকাবাসী জানায়, তারা নিজ উদ্যোগে নিজ নিজ এলাকায় পাহারার কাজটি করছেন। যতক্ষণ না থানায় পুলিশ ফেরে ততক্ষণ তারা নিজেদের নিরাপদ মনে করছেন না। দেশে একটি নৈরাজ্যকর পরিবেশ তৈরি করে জনমনে অশান্তি তৈরির জন্যই একটি চক্র এমন করছে বলে মনে করেন তারা।

সময়ের আলো/জেডআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close