প্রতি বছরের এপ্রিলে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু করোনার ধাক্কা সামাল দিয়ে শিক্ষাসূচি এখনও ঠিক হয়নি। মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য ছিল চলতি বছরের এপ্রিলে পরীক্ষা নেওয়ার। এদিকে কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রভাব পড়েছে দেশের শিক্ষা কার্যক্রমের ওপর। অনির্ধারিত বন্ধের প্রভাব পড়েছে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষা স্তরে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে একপর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর প্রেক্ষিতে গত ১৬ জুলাই রাতেই সারা দেশে স্কুল, কলেজ, পলিটেকনিকসহ সব বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৮ জুলাইয়ের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়। এরপর ১১ আগস্ট থেকে নতুন সূচিতে পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। স্থগিত পরীক্ষাগুলোর নতুন সময়সূচিও প্রকাশ করা হয়।
মঙ্গলবার সময়ের আলো থেকে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার মধ্যে স্থগিত হয়ে যাওয়া পরীক্ষাগুলো ১১ আগস্ট থেকে শুরু করার কথা থাকলেও সেটি হচ্ছে না। সহিংসতায় বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রশ্নপত্র পুড়ে যাওয়ায় পরীক্ষা শুরু করা সম্ভব না-ও হতে পারে বলে জানিয়েছেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। বুধবার পরীক্ষার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে বলে তিনি জানান। ফলে আবার দুশ্চিন্তায় পড়ে ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।
শিক্ষার্থীরা জানায়, যে পরীক্ষাগুলো স্থগিত করা হয়েছে, সেগুলোর জন্য এখন আবার নতুন করে প্রস্তুতি নিতে হবে। পরীক্ষা পেছানোয় এইচএসসি পরীক্ষা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে সময় কম পাবে তারা। বারবার পরীক্ষাসূচি পরিবর্তনে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরাও। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাস বন্ধের মধ্য দিয়েই যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে চান না তারা। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে আবার কোনো সমস্যা হয় কি না, সেটিই তাদের ভাবনার বিষয়।
এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষায় পদার্পণে প্রাথমিক ধাপ। পরীক্ষার সময়সূচি বারবার পরিবর্তন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। তারা কিছুটা অমনোযোগী হয়ে পড়ে। পড়ায় একনিষ্ঠতা ধরে রাখতে পারে না। এ কারণে পরীক্ষা প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটে। এ সময় তাদের মন-মানসিকতায় স্থিতিশীলতা দরকার, যাতে তারা পাঠমনস্কতা ধরে রাখতে পারে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দফায় দফায় পরীক্ষা পেছানোর ফলে শিক্ষার্থীদের ওপর যে মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে সেটার দ্রুত উপশম দরকার। শিক্ষাঙ্গনে দ্রুত স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর পদক্ষেপ নেবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
সময়ের আলো/আরএস/