ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে ফের উত্তাল দেশ
সংঘাত সহিংসতা গুলি : নিহত ১, আহত শতাধিক
প্রকাশ: রবিবার, ৪ আগস্ট, ২০২৪, ১:৪৪ এএম আপডেট: ০৪.০৮.২০২৪ ৭:৪৯ এএম  (ভিজিট : ৩২৯)
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। গতকাল বিক্ষোভ চলাকালে দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে গাজীপুরের শ্রীপুরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে মো. জাকির হোসেন (৪৫) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। সাধারণ ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন, পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন শতাধিক।

কুমিল্লায় ছাত্রদের মিছিলে ছাত্রলীগের হামলায় এবং পুলিশের গুলিতে ১০ জনসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। এ ছাড়াও গাজীপুরের মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে তুমুল লড়াইয়ের সৃষ্টি হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধরা পুলিশের গাড়ি, ব্যাংকের শাখা ও পুলিশ কার্যালয়ে ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। বিক্ষোভ মিছিল থেকে সহিংসতায় গাজীপুর, কুমিল্লা, বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। তবে গতকাল শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ-সমাবেশে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে রাজধানীতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সায়েন্সল্যাবে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের হট্টগোল বাধলে পুলিশকে নিরাপত্তা দিয়ে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।

অপরদিকে বিক্ষোভকারীদের আন্দোলনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয় পাশে বাস ও ট্রাক দিয়ে সম্পূর্ণ যানচলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে ওই সড়কে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। 

গাজীপুর (শ্রীপুর) প্রতিনিধি : গাজীপুরের শ্রীপুরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে মো. জাকির হোসেন (৪৫) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। শনিবার দুপুরে উপজেলার চন্নাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শ্রীপুর থানার ওসি আকবর আলী খান জাকিরের মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

নিহত জাকির হোসেনের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়। তিনি চন্নাপাড়া গ্রামের মো. কাজল মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থেকে ওই গ্রামের মক্কা-মদিনা স্পিনিং কারখানার সামনে লেপতোশক তৈরির কাজ করতেন।

সকাল থেকে গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা হাইওয়ে থানায় হামলা চালিয়ে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে পুলিশের তিনটি গাড়ি ও বক্সে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ পুলিশের গুলিতে তাদের কয়েকজন আহত হয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শনিবার বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষে বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহসড়কের যান চলাচল। আন্দোলনকারীরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দেন। আটকেপড়া যাত্রীরা পড়েছেন ভোগান্তিতে। বেলা ১১টা থেকে শ্রীপুরে মাওনা চৌরাস্তায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উড়াল সড়কের পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেয়। এ সময় পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাওনা চৌরাস্তার উড়াল সড়কের নিচে অবস্থান নিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন।

পুলিশ প্রথম থেকেই পিছু হটলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেওয়ার চেষ্টা করে এগিয়ে যান। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে আন্দোলনকারীরা ধাওয়া দিলে পিছু হটে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশ। এক পর্যায়ে পুলিশকে ধাওয়া দিয়ে মাওনা চৌরাস্তা ভাই ভাই সিটি মার্কেটে অবরুদ্ধ করে ইটপাটকেল ছোড়ে। একপর্যায়ে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। পরে বিক্ষুব্ধরা পুলিশের ৩টি গাড়িতে ও ৩টি পুলিশ বক্সে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং মার্কেটে পার্কিং থাকা চারটি গাড়ি ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের তোপের মুখে পুলিশও পিছু হটে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোভন রাংসা বলেন, নিরাপত্তায় সকাল থেকেই পুলিশের সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছিলেন তিনি। 

এদিকে মাওনা চৌরাস্তায় বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে জরুরি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাদের এখানে প্রায় ২৪ জন আহত রোগী এসেছিল, তাদের অধিকাংশই রাবার বুলেটে আহত। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম বলেন, পুলিশ প্রথম থেকেই তাদের দায়িত্বপালন করে গেছে। তারা কারও ওপর চড়াও হয়নি। এরপর আন্দোলনকারীরা তাদের ধাওয়া করে পুলিশের গাড়িতে ও পুলিশ বক্সে আগুন দেয়। পুলিশও আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেন। তবে এ ঘটনায় কতজন আহত হয়েছে তা জানা যায়নি।

কুমিল্লা সংবাদদাতা : শনিবার সকাল ১০টায় শুরু হওয়া আন্দোলনকারীদের কর্মসূচিতে একই সময়ে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা স্টেডিয়ামের সামনে অবস্থান নেয়। ফলে উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেওয়ায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে সংঘাত-সহিংসতা শুরু হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনায় উপজেলা ভূমি কর্মকর্তার (এসিল্যান্ড) গাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধরা। 

রিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও গুলি করে। দুপুর ১২টায় দিকে আন্দোলনগত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে কুমিল্লা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয় নগরীর পুলিশ লাইনে এলাকায় এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিলে তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় বেশ কয়েকজন নারী শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাদের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়।

একই স্থানে পরে শিক্ষার্থীদের হটিয়ে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন অবস্থান নেন। দুপুর ১টায় কুমিল্লা জেলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা পুনরায় পুলিশ লাইন এলাকায় অবস্থা নিলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে ফের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই সময় শিক্ষার্থীরা সড়কের পাশে বিভিন্ন বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় কুমিল্লা পুলিশ লাইন এলাকায় এ ঘটনা ঘটলেও পুলিশ এবং বিজিবির উপস্থিতি থাকলেও তারা তাদের নীরব ভূমিকায় দেখা গেছে। এ ছাড়া সকাল থেকেই কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

সংঘর্ষের বিষয়ে কুমিল্লা পুলিশ সুপার সাইদুর ইসলাম বলেন, দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছে আমরা শুনেছি। এ ঘটনায় কেউ মারা যায়নি। ঘটনার স্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এখন পরিবেশ শান্ত রয়েছে।

গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থীরা হলেন আরফান মজুমদার (১৬), সৌরভ (২৫), মারুফ (১৬), আসিফ (১১), মৃদুল (১২), সুজন (১৩) ও সানি (১৮)। তাদের মধ্যে সৌরভকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আর অন্যদের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আহত ব্যক্তিদের অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

এ ছাড়াও সংবাদ সংগ্রহ করার সময় হামলার শিকার হয়ে আহত হন চার সাংবাদিক। তারা হলেন, সময়ের আলোর কুমিল্লা সংবাদদাতা রুবেল মজুমদার, যমুনা টিভির ব্যুরোপ্রধান মো. খোকন চৌধুরী, দেশ টিভির কুমিল্লা প্রতিনিধি সুমন কবির ও চ্যানেল আইয়ের ক্যামেরা পারসন মো. সজিব। তারা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আহতদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমেক হাসপাতালের পরিচালক শেখ ফজলে রাব্বি। তিনি বলেন, সৌরভের চোখের আঘাত গুরুতর। তাকে ঢাকায় চক্ষু ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম নগরীর নিউমার্কেট মোড়ের পুরো অংশজুড়ে দুই ঘণ্টা ধরে মিছিল করেছে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা। শনিবার পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে নিউমার্কেট মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে হাজারো শিক্ষার্থী। তাদের সঙ্গে নানা বয়সি পেশার মানুষও যোগ দেন। লোকজনের অংশগ্রহণ বেশি হওয়ায় নিউমার্কেটের আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় তারা নানা স্লোগান দেন। পরে বিকাল ৫টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। সন্ধ্যা ৬টায় তারা জিইসি মোড় ও দুই নম্বর গেটের দিকে যেতে থাকেন। মিছিলটি টাইগার পাস মোড় অতিক্রমের সময় ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে। এরপর ওয়াসা মোড়ে এসে স্থানীয় সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুর অফিসে আগুন দেওয়া হয়। পরে সাড়ে ৬টার দিকে নগরীর ২ নম্বর গেটের কাছে শিক্ষামন্ত্রীর মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি কোথাও তেমন দেখা যায়নি।

সিএমপির এডিসি (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে চট্টগ্রামে আন্দোলনের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করে রোববারের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান। এরপর শিক্ষার্থীরা যার যার গন্তব্যের দিকে চলে যায়।

বগুড়া প্রতিনিধি : বগুড়ায় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে বেশ কয়েক শিক্ষার্থী আহত হন। শনিবার বিকাল ৪টার দিকে শহরের সাতমাথা থেকে মিছিল নিয়ে শহর প্রদক্ষিণ করার সময় এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়াও শহরের সাতমাথা, সার্কিট হাউস মোড়, জেলা জজ আদালতের সামনের সড়ক, কালীবাড়ী মোড়সহ শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মিছিলের একাংশ সার্কিট হাউস মোড় অতিক্রম করার সময় পুলিশ প্লাজার সামনে পুলিশের সাঁজোয়া যান লক্ষ্য করে বিক্ষোভকারীরা ইটপাটকেল ছোড়েন। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে মুহুর্মুহু কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা উত্তেজিত হয়ে সার্কিট হাউসের অভ্যর্থনা কক্ষের কাচ ভাঙচুর করেন।

দুই পক্ষের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন বলে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার বলেন, বিক্ষোভকারীরা জেলা স্কুলের সামনে ও পুলিশ প্লাজার সামনে পুলিশকে লক্ষ্য করে বিনা উসকানিতে ইটপাটকেল ছুড়লে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার বিষয়টি তার জানা নেই।

নিজস্ব প্রতিবেদক সিলেট : সিলেটে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। শনিবার সোয়া ৫টার দিকে সিলেট নগরীর চৌহাট্টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি টিয়ার শেল ছুড়লে আন্দোলনকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। দফায় দফায় সংঘর্ষে চৌহাট্টা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে চৌহাট্টা, জিন্দাবাজারসহ পুরো এলাকায়। বন্ধ হয়ে পড়ে যান চলাচল। এর আগে বিকাল ৫টায় আন্দোলনকারীরা সড়কে আসরের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে ফের স্লোগান শুরু হলে হঠাৎ করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন।

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : হবিগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করেছে। এ সময় রাস্তার দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যাত্রীবাহী ও প্রাইভেট গাড়িতে যানজটের সৃষ্টি হয়। শনিবার বেলা ১১টা থেকে মহাসড়কের পানিউমদা বাজারে এ অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় আন্দোলনকারীরা মহাসড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। তারা বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে রাস্তায় মিছিল করে। অবরোধ চলাকালে সড়কে অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া অন্য কোনো ধরনের যান চলাচল করেনি। বিক্ষোভে স্থানীয় স্কুল-কলেজের কয়েকশ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। প্রায় তিন ঘণ্টা অবরোধ শেষে দুপুর ২টার দিকে অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শহরে শান্তি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রাজশাহী ব্যুরো : রাজশাহীতে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে তিনটি পুলিশ বক্সসহ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের তিনটি ওয়ার্ড কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই তারা নগরীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।

শনিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত এ হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি থাকলেও আন্দোলনকারীদের ওপর কোনো ধরনের অ্যাকশন বা মিছিলে বাধা দিতে দেখা যায়নি। এ সময় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) উপ-পরিদর্শক সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এরপর মহানগরীর শহিদ কামারুজ্জামান চত্বরে গিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘বিতর্কিত’ সমন্বয়ক রাফিন হাসান অর্ণবকেও পিটিয়ে আহত করাসহ সংবাদকর্মীকেও লাঞ্ছিত করা হয়।

ফরিদপুর প্রতিনিধি : ফরিদপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, শ্রমিক লীগ, যুবলীগ, স্বেছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও গুলি ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। পুলিশ এ সময় বেশ কয়েক রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছুড়ে। এতে ডিবি পুলিশের এক নারী সদস্যসহ কয়েক শিক্ষার্থী গুলিবদ্ধ হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সালাউদ্দিন জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছুড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

বরিশাল ব্যুরো : শনিবার সকাল থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল সহকারে প্রথমে সরকারি বিএম কলেজ ও পরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। বেলা ৩টার দিকে আন্দোলনকারীরা মিছিল সহকারে নগরীর চৌমাথা এলাকায় অবস্থান নেয়। সেখানে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ শেষে প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হলে কর্মসূচির শেষের দিকে হঠাৎ পুলিশের ওপর চড়াও হয়। এ সময় পুলিশ সদস্যদের খাবার বহনকারী একটি পিকআপ ভাঙচুর করে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, বৃষ্টির মধ্যে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যদের খাবারের গাড়িটি চৌমাথা এলাকা অতিক্রমকালে দ্রুতগতি থাকায় কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। এ সময় আন্দোলনকারীরা গাড়িটি ঘিরে ধরলে অতি উৎসাহীরা ভাঙচুর শুরু করে এবংট্রাফিক পুলিশেরও একটি বক্স ভাঙচুর করে। গাড়িতে থাকা পুলিশ সদস্যরা দৌড়ে মারকাজ মসজিদে আশ্রয় নিলেও ৪ এপিবিএন সদস্য আটকা পরে। পরে তাদের মারধর করে পোশাক খুলে রাখা হয় এবং তাদের পোশাক সড়কের ওপরে বিদ্যুতের লাইনে ঝুলিয়ে রাখা হয়। আহত এপিবিএন সদস্যরা হচ্ছেন এসআই নেয়ামত খান, কনস্টেবল সিফাত, হাসনাত ও রিয়াজ। এদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় সিফাতকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে।

জামালপুর প্রতিনিধি : বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ১০ জন শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজন পথচারী আহত হয়। শনিবার বেলা ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা শহরের বাইপাস মোড়ে জড়ো হয়। পরে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা মির্জা আজম চত্বরে গিয়ে অবস্থান নেন। এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) সোহেল রানা খান জানান, শিক্ষার্থীদের আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করার কথা বললেও তারা আমাদের কথা শুনেননি। পরে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে আন্দোলনকারীরা মিছিল বের করে।

নোয়াখালী : কোটা আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ মিছিল থেকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। তবে এ সময় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। শনিবার বিকাল ৫টার দিকে এই অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানায়, শনিবার বেলা ৩টার দিকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও তাদের সমর্থকরা জেলা শহর মাইজদী বাজার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। বিক্ষোভ মিছিলে তারা বিভিন্ন সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারী ও তাদের সমর্থকরা নোয়াখালী জিলা স্কুলের সামনে প্রধান সড়কে অবস্থান নেয়। মিছিলের একটি অংশ জেলা শহরের টাউন হল মোড়ে অবস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সামনে অবস্থান নেয়। পরে তারা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এরপর হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে কার্যালয়ে থাকা আসবাবপত্রে অগ্নিসংযোগ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এ সময় তারা সেখানে কোনো বাধা ছাড়া ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান করে তাণ্ডব চালায়।

সুধারাম মডেল থানার ওসি মীর জাহেদুল হক রনি আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তবে এ নিয়ে তিনি আর কোনো মন্তব্য করেননি।

সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসেবে টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। শনিবার বেলা ১১টায় পৌর শহরের মুখতার ফোয়ারা চত্বরে আন্দোলনকারীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনকালে ছাত্রলীগ তাদের ওপর হামলা করলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দুই রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ সময় কালিয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ও শহর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিজার শিকদার, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী নদী আক্তারসহ প্রায় ১০ জন আহত হয়েছে। আহতদের সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ অন্যান্য হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।

জাবি প্রতিনিধি : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেল ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থী লিওনসহ সব শিক্ষার্থীকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি এবং ৯ দফা দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলে দেওয়ার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

শনিবার দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক (ডেইরি গেট) সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ শুরু করেন তারা। পরে দুপুর ২টায় অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারীর। অবরোধ কর্মসূচিতে সাভার-আশুলিয়ার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এ ছাড়াও ঝিনাইদহ, নরসিংদী, গাইবান্ধা, রাজবাড়ী, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও, মৌলভীবাজারের জুড়ী, হবিগঞ্জের মাধবপুর, কুষ্টিয়া, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ, ফেনী, চাঁদপুর এবং কুমিল্লার হোমনাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে আন্দোলন করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় শহিদ ছাত্রদের হত্যার বিচার দাবিসহ বৈষম্যবিরোধী স্লোগানে স্লোগানে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে শিক্ষক থেকে শুরু করে অভিভাবক, শিল্পী, সাহিত্যিক এবং সাধারণ মানুষসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই আন্দোলনে শরিক হতে দেখা গেছে।

রাজধানীতে বিক্ষোভ
সায়েন্স ল্যাব মোড়ে স্লোগান ও গ্রাফিতি এঁকেছে শিক্ষার্থীরা : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড়ে অবস্থান করেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুর থেকে শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাব মোড়ে জড়ো হতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও বাড়তে থাকে। ফলে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে নিউমার্কেটের দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে। তবে সাইন্স ল্যাব মোড় ও তার আশপাশে আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের কাউকে অবস্থান করতে দেখা যায়নি। সরকারবিরোধী স্লোগানের সঙ্গে গ্রাফিতি এঁকে প্রতিবাদ জানায় তারা।

শনির আখড়া ও কাজলা এলাকায় সড়ক অবরোধ : রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া-কাজলা এলাকায় সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১টার পর থেকে শনির আখড়া-কাজলা এলাকায় আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা চানখাঁরপুল থেকে শনির আখড়ার দিকে কোনো যানবাহন যেতে দেয়নি। ফলে ওই সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে এই কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা।

রামপুরায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে যান চলাচল বন্ধ : রাজধানীর আফতাবনগরে ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে সকাল থেকে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। সেখান থেকে দুপুর পৌনে ২টার দিকে থেকে রামপুরা ব্রিজে এসে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সামনের রাস্তা দখলে নিয়েছেন তারা। শিক্ষার্থীরা সবাই ইস্টওয়েস্ট ছেড়ে মূল সড়কে অবস্থান নেন। এতে করে সড়কের সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

শান্তিনগর মোড়ে শিক্ষার্থীদের অবস্থানে যান চলাচল বন্ধ : রাজধানীর বেইলি রোড থেকে শান্তিনগর মোড়ে অবস্থান নিয়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বেইলি রোডে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ ছাড়াও আশপাশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছেন।

মিরপুরে শিক্ষার্থী-জনতার বিক্ষোভ : রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার বেলা ১১টার পরে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস ও মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) শিক্ষার্থীরা ১০ নম্বরে আসতে শুরু করেন। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। সেখানে ব্যাপক পুলিশ সদস্যের অবস্থানও লক্ষ্য করা গেছে সেখানে।

প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ : কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিককে হত্যা, সাগর-রুনির হত্যার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সাংবাদিকদের একটি অংশ। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন সাংবাদিকরা।

ইস্টওয়েস্টের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আদায়ে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী রাজধানীর আফতাবনগরে ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তার পাশেই আফতাবনগর গেট থেকে প্রধান সড়কের মুখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবস্থান নিতে দেখা যায়। সকাল ১০টা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করেন। এ সময় তাদের হত্যাকারীদের বিচার ও সরকারের পদত্যাগ চেয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্র্যাক, আইইউবিএটি, আইডিয়াল স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়তে শুরু করে সেখানে। বিপুলসংখ্যক পুলিশ সতর্ক অবস্থানে থাকেন।

খিলগাঁওয়ে রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা : বেলা পৌনে ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা খিলগাঁও রেলগেট এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন। সেখানে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিয়েছেন তারা।

উত্তরায় বিক্ষোভের পাশে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের অবস্থান : রাজধানীর উত্তরায় বিএনএস সেন্টারের পাশের রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। সেখানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবকরাও রয়েছেন। দেখা যায়, বিএনএস সেন্টারের সামনে অবস্থান নিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সেখানে ছাউনি বানিয়ে অবস্থান করেন তারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুটি দল বিএনএস সেন্টারের নিচে অবস্থান করেন। উত্তরা ও এর আশপাশের এলাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্ল্যাকার্ড হাতে ফুটপাথে অবস্থান নেন। এসব প্ল্যাকার্ডে ‘আমার ভাই কবরে, খুনি তুই কেন বাইরে’, ‘পুলিশ তুমি কার, জনগণের নাকি শেখ হাসিনার!’ এ রকম নানা স্লোগান লেখা ছিল। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক-সংলগ্ন বিএনএস সেন্টারের সামনে ও জসীমউদ্দীন এলাকার মূল সড়কে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ।

প্রগতি সরণিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : রাজধানীর প্রগতি সরণি, বসুন্ধরা গেটের সামনে মূল সড়কে অবস্থান নিয়েছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বৃষ্টি উপেক্ষা করে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত ছিল পুরো এলাকা। কর্মসূচিতে যোগ দিতে সকাল থেকেই দলে দলে শিক্ষার্থীরা রাজধানীর প্রগতি সরণি এলাকার যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে জড়ো হতে থাকেন। এক পর্যায়ে দুপুর ১টার দিকে হঠাৎ তারা প্রধান সড়কে নেমে আসেন। তাদের উপস্থিতিতে বন্ধ হয়ে যায় প্রগতি সরণির যান চলাচল।

মিছিল নিয়ে শাহবাগে আন্দোলনকারীরা : কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভার পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করে রাজধানীর শাহবাগে আসে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ এময় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়। এতে করে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠনটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সরকার পদত্যাগের এক দফা ঘোষণা করেন।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে জাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : ছাত্রসমাজের ৯ দফা দাবি আদায়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ঘণ্টাব্যাপী অবরোধ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ শুরু করেন তারা। এ সময় মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি পরিষেবার যানগুলো অবরোধের আওতামুক্ত থাকে।

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close