ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

এতিমের পাশে দাঁড়ালে যে প্রাপ্তি মেলে
প্রকাশ: শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০২৪, ১২:২৮ এএম  (ভিজিট : ২৭০)
পৃথিবী মৃত্যুর জগৎ। এখানে কোনো মানুষের জীবনের নিশ্চয়তা নেই। ক্ষণস্থায়ী এ জগৎ ছেড়ে যে কেউ চলে যেতে পারে যেকোনো সময়। কখন কার ডাক আসবে কেউ জানে না। কেউ আগে আর কেউ পরে; সবাইকে যেতে হবে। মা-বাবা ছেড়ে হয়তো সন্তান আগে দুনিয়া ছেড়ে চলে যান। অথবা সন্তান ছেড়ে মা-বাবা চলে যান। কখন কে এতিম হবে কেউ জানে না, আল্লাহ ছাড়া। আরবি এতিম শব্দটির অর্থ হলো নিঃস্ব বা নিঃসঙ্গ। 

কোনো শিশুর পিতা ইন্তেকাল করলে তাকে এতিম বলা হয়। পিতা উপস্থিত থাকা অবস্থায় মাতাবিহীন শিশুকে ইসলামে এতিম বলা হয় না। কেননা সন্তানের লালন-পালন, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব পিতার। তাই শিশুকে তখনই নিঃস্ব ও নিঃসঙ্গ ধরা হবে, যখন পিতা থাকবে না। মাতার অবর্তমানেও এই দায়িত্বভার পিতার ওপর অর্পিত। তাই মাতাবিহীন শিশু নিঃস্ব ও নিঃসঙ্গ নয়। আর সন্তান যখন বালেগ ও প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যায়, তখন তাকে এতিম বলা হয় না। কেননা সে তখন স্বনির্ভর। ইসলামে সবকিছুর পূর্ণ অধিকার দেওয়া হয়েছে, তাই এতিমেরও রয়েছে পূর্ণ অধিকার। কোনো শিশু এতিম হয়ে পড়লে তার অধিকার রক্ষা করা সবার দায়িত্ব।

ইসলামের দৃষ্টিতে এতিমের প্রতিপালন জান্নাতে যাওয়ার উপায়। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো এতিমকে আপন মাতা-পিতার সঙ্গে নিজেদের (পারিবারিক) খাবারের আয়োজনে বসায় এবং (তাকে এই পরিমাণ আহার্য দান করে যে) সে পরিতৃপ্ত হয়ে আহার করে, তা হলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে’ (মুসনাদে আহমাদ : ১৮২৫২)। অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি ও এতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকব (তিনি তর্জনী ও মধ্য অঙ্গুলি দিয়ে ইঙ্গিত করেন এবং এ দুটির মধ্যে তিনি সামান্য ফাঁক করেন)’ (বুখারি : ৫৩০৪)। আমাদের প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও ‘এতিম’ ছিলেন। শিশুকাল থেকেই এতিম ছিলেন। তিনি দুনিয়ায় পদার্পণ করার আগেই পিতাকে হারান। অসহায়, এতিমদের জন্য নবী করিম (সা.) জীবনভর কাজ করে গেছেন। 

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তারা তোমাকে এতিম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, তাদের ইসলাহ তথা সুব্যবস্থা (পুনর্বাসন) করা উত্তম’ (সুরা বাকারা : ২২০)। আরও বলেন, ‘তারা আহার্যের প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও (আল্লাহর ভালোবাসায়) অভাবী, এতিম ও বন্দিকে আহার্য দান করে। (এবং তারা বলে) শুধু আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তোমাদের আহার্য দান করি। বিনিময়ে তোমাদের থেকে কোনো প্রতিদান চাই না।’ (সুরা দাহর : ৮-৯)

ইসলামে এতিমকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। এতিম মানেই অবহেলিত নয়। এতিমকে যে সম্মান দেবে, প্রতিপালন করবে সে পরকালে অনেক বড় পুরস্কার পাবে। এতিমের প্রতিপালনকারী পরকালে আল্লাহর রাসুলের সঙ্গে থাকবে। হজরত সাহল বিন সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমি ও এতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকব (তিনি তর্জনী ও মধ্য অঙ্গুলি দিয়ে ইঙ্গিত করেন এবং এ দুটির মধ্যে তিনি সামান্য ফাঁক করেন)’ (বুখারি : ৫৩০৪)। এতিমের মর্যাদা সম্পর্কে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, বিধবা, এতিম ও গরিবের সাহায্যকারী ব্যক্তি আল্লাহর পথে মুজাহিদের সমতুল্য। অথবা তার মর্যাদা সেই (নামাজের জন্য) রাত জাগরণকারীর মতো, যে কখনো ক্লান্ত হয় না।

অথবা তার মর্যাদা সেই রোজাদারের মতো, যে কখনো ইফতার (রোজা ভঙ্গ) করে না। (মুসলিম : ৫২৯৫)
কিন্তু দুঃখজনকভাবে সমাজে অনেক সময় দেখা যায়, এতিমের প্রতি অবহেলা ও তুচ্ছতা প্রদর্শন করা হয়। বাবা না থাকায় স্বাভাবিক মানবিক স্নেহবাৎসল্য থেকেও অনেক ক্ষেত্রেই বঞ্চিত হয় তারা। ফলে এসব এতিম ও অনাথ শিশুরা এক ধরনের প্রতিহিংসা নিয়ে বেড়ে ওঠে। মানুষ খাবার খাচ্ছে, কিন্তু সে পাচ্ছে নাÑএই চিন্তা হিংসার জন্ম দেয়। অন্যদের জন্য বস্ত্র আছে, শীত নিবারণের উপকরণ আছে, কিন্তু তার নেইÑএই চিন্তা প্রতিশোধপরায়ণ করে তোলে। এতে এসব শিশুর আচরণ বিকৃত হয়ে যায়। ফলে তারা কাউকে সহজে বিশ্বাস করে না। তাদের মধ্যে ধ্বংসাত্মক কাজে আগ্রহ জন্মে। তাই এদের পক্ষে খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই ও মমতাহীন কাজ করা খুবই সহজ হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি এদের বেশিরভাগই কোনো না কোনোভাবে মাদকের সঙ্গে পরিচিত হয়ে পড়ে। এসব শিশু মাদকাসক্তির কারণে সুন্দর ভবিষ্যৎ বিসর্জন দেয়।

এ জন্য এতিমের প্রতি বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে। নিকটাত্মীয়দের মধ্য থেকে কেউ এগিয়ে আসা উচিত। এ ক্ষেত্রেও লক্ষণীয়, যেন কোনো হক নষ্ট না হয়। এতিমের অধিকার রক্ষায় ও অন্যায়ভাবে অধিকার হরণ না করতে বর্ণিত হয়েছে অনেক আয়াত ও হাদিস। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ পরিহার করো। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! সেগুলো কী? রাসুল বললেন, আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা, জাদু, অন্যায়ভাবে কোনো প্রাণ সংহার করা, সুদ খাওয়া, এতিমের সম্পদ গ্রাস করা, যুদ্ধের মাঠ থেকে পলায়ন করা এবং মুমিন ও পবিত্র নারীকে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া। (বুখারি : ২৭৬৬)

মিরাসসহ সব ক্ষেত্রে এতিমের অধিকার রয়েছে। বৈবাহিক ক্ষেত্রেও রয়েছে পূর্ণ অধিকার। জাহেলি যুগে এতিম মেয়েদের কোনো অধিকার ছিল না। যদি কোনো সম্পদশালী মেয়ে এতিম থাকত, তা হলে তাদের নামমাত্র মোহর দিয়ে সব সম্পত্তি আত্মসাৎ করত। এ নিয়ে রাসুল (সা.)-এর যুগে একটি ঘটনা ঘটেছিল। হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে একটি এতিম মেয়ে ছিল। সে ব্যক্তির একটি বাগান ছিল, যার মধ্যে মেয়েটিরও অংশ ছিল। সে ব্যক্তি মেয়েটিকে বিয়ে করে নিল এবং নিজের পক্ষ থেকে দেনমোহর আদায় করলই না, বরং বাগানে মেয়েটির অংশ আত্মসাৎ করল। (বুখারি : ৪৫৭৩)

অভিভাবকরা এতিমদের বিয়ে দিতে পারবে। তবে যিনি বিয়ে করবেন তার উচিত এতিমের হক যথাযথ আদায় করা। কেননা এ মর্মে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘যদি তোমরা আশঙ্কা করো যে, এতিমদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তা হলে নারীদের মধ্য থেকে তোমাদের পছন্দমতো দুটি, তিনটি কিংবা চারটি বিয়ে করে নাও; কিন্তু যদি তোমরা আশঙ্কা করো যে, তাদের সঙ্গে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করতে পারবে না তা হলে মাত্র একটি অথবা তোমাদের ডান হাত যার অধিকারী; এটা আরও উত্তম; এটা অবিচার না করার নিকটবর্তী’ (সুরা নিসা : ৩)। তাই আমাদের সবার উচিত এতিমদের অবহেলা না করা, তাদের যথাযথ প্রাপ্য তাদের ফিরিয়ে দেওয়া। আল্লাহ আমাদের তওফিক দান করুন।


সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close