শিক্ষার্থীদের দাবির কাঙ্ক্ষিত সমাধান হওয়ায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পথ পরিহার করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে ভূমিকা রাখার রাষ্ট্রদ্রোহী মহলের ষড়যন্ত্রের ক্রীড়নকে পরিণত না হওয়ার ব্যাপারে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল।
এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ চার দফা দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে আয়োজিত ‘দেশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে’ এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এই দাবি জানান সংগঠনটি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড মো. নিজামুল হক ভূইয়া, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবদুর রহিম, বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুল বাছির,টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিউল আলম ভূঁইয়া প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্য প্রদানকালে সংগঠনটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এম আমজাদ আলী বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং জনজীবনে অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। সারাদেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অনভিপ্রেত ঘটনায় নীলদল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে অপ্রত্যাশিতভাবে শিক্ষার্থীসহ অনেকেই নিহত এবং আহত হয়েছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রাণহানির ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নীলদল গভীরভাবে শোকাহত এবং নিহতদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছে।
তিনি বলেন, ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে যেকোনো নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার সম্পর্কিত যৌক্তিক দাবিসমূহের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নীলদল বরাবরই ইতিবাচক অবস্থানে থেকেছে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই আন্দোলন শুরুতে শান্তিপূর্ণ থাকলেও পরবর্তীকালে সহিংস হয়ে ওঠে, যা গভীর উদ্বেগের। এই আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে কেউ কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও রাজপথে স্বাধীনতা বিরোধী শ্লোগান উচ্চারণ করেছে, যা নিন্দনীয়।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি বিবেচনায় নিয়ে মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের গত ২১ জুলাইয়ের রায় কোটা সংস্কার দাবিকারী শিক্ষার্থীদের অনুকূলে হওয়ায় নীলদল সন্তুষ্টি প্রকাশ করছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার এই রায়কে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করায় নীলদল সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে।
বক্তব্য প্রদানকালে তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে দেশজুড়ে সহিংসতা, নৈরাজ্য, হত্যাযজ্ঞ, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ধ্বংস, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে কক্ষ ভাংচুর ও সম্পদের প্রভূত ক্ষতি সাধন এবং কারাগার আক্রমণের মতো রাষ্ট্রদ্রোহী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়েছে স্বার্থান্বেষী একটি মহল। কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্তরালে নাশকতাকারীরা মেট্রোরেল, বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন, সেতু ভবন, বিআরটিএ, এক্সপ্রেসওয়েসহ বিভিন্ন ভবনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে। আমরা এই ঘৃণিত চক্রান্তকে আমরা নিন্দা জানাই।
নিরাপরাধ ব্যক্তিদের গ্রেফতার এবং হয়রানি না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, যেকোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে যথাযথ সম্মান দেখিয়ে সুবিবেচনা এবং বিচক্ষণতার সঙ্গে সমাধানের পথ নির্ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি সরকার এই আন্দোলনে নিহত এবং আহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতার যে দ্বার উন্মোচন করেছে তা অব্যাহত রাখতে হবে।
নীল দলের চার দফা দাবিসমূহ-
আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত সকল ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের অবিলম্বে শান্তির আওতায় আনা; দ্রুততম সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা; আবাসিক হলসমূহে বৈধ ও নিয়মিত শিক্ষার্থীদের অবস্থান নিশ্চিত করা এবং ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
সময়ের আলো/জেডআই