টানা চার দিনের থেমে থেমে ভারী ও হালকা মাঝারি বৃষ্টিপাতে কারণে বান্দরবানে লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি দুই উপজেলা নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সেখানে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শতাধিক দোকান ও ঘরবাড়ি। এতে পানিবন্দি হওয়া পরিবারগুলোর চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়িতে টানা কয়েকদিন বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ে। তারমধ্যে নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তের ঘুমধুম ১ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিমকূল, ক্যাম্প পাড়া, ঘোনার পাড়া, হিন্দু পাড়া, বাজার পাড়া, ২নং ওয়ার্ডের কোনার পাড়া, মধ্যম পাড়াসহ অন্তত ২৫০ পরিবার পানি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অনেকেই বাড়ির চালা পর্যন্ত পানি উঠে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ১৫০ পরিবার বলে খবর পাওয়া গেছে।
অপরদিকে বান্দরবানে লামায় মাতামুহুরি নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার উপরে। এতে উপজেলার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি পৌর এলাকার ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আংশিক এলাকা প্লাবিত হয়ে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় একশত পরিবার।
নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম এলাকার বাসিন্দা মো. নরুল আবছার জানান, গত চার-পাঁচ দিন টানা ভারী বর্ষণে তংব্রু খালের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে শতাধিক দোকান ও ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। এতে ২০-৩০ পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।
ঘুমধুম ইউপির সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, টানা বৃষ্টিতে ইউনিয়নের শতাধিক দোকান ও ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। গতকাল রাত থেকে বুক সমান পানি ছিল। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পানি আরও বাড়তে পারে।
ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে আড়াইশ পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। কিছু পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে তাদেরকে খাদ্য সামগ্রী দিয়ে সহযোগীতা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল বলেন, টানা বৃষ্টিতে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি বিশেষ করে পৌর এলাকার ১,২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ১০০ পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাইক্ষ্যংছড়ি নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান, ঘুমধুম এলাকায় শতাধিক দোকান ও ঘরবাড়ি বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। তাদেরকে ত্রাণ দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দিয়েছি। দুর্যোগ মোকাবেলায় সবধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এদিকে কয়েকদিন টানা বর্ষণে ফলে সাঙ্গুনদী পানি বাড়তে শুরু করেছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যা দেখা দিতে পারে। এতে নিম্নাঞ্চালে বসবাসরত বাসিন্দাদের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাছাড়া বিভিন্ন এলাকায় আবারও পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই আজ বৃহস্পতিবার সকালে থেকে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারীদের সেখান থেকে সরে গিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন পাশাপাশি পৌরসভার পক্ষ থেকে মাইকিং করে প্রচার চালানো হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সকালে কয়েকদিন টানা বর্ষণে ফলে বান্দরবানে থানচি সড়কের জীবন নগর এলাকায় মাটি নরম হয়ে পাহাড়ের বিশাল একটি অংশ সড়কের উপর ধসে পড়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে রাস্তা থেকে ধসে পড়া মাটি অপসারণের কাজ করলে প্রায় দুই ঘণ্টা পর সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।
বান্দরবান আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সনাতন কুমার মন্ডল জানান, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত থাকার কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে। যা আরও কয়েকদিন হতে পারে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া মাতামুহুরি নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে ৪৩.৬ প্রবাহিত হচ্ছে এবং সাঙ্গু নদীর পানি এখনো পর্যন্ত বিপৎসীমার নিচে (৯.৬) রয়েছে বলে জানান তিনি।
সময়ের আলো/আরআই