ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

একগুচ্ছ প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জেন্ডার বাজেট শুরু
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট, ২০২৪, ৫:০২ এএম  (ভিজিট : ২৫৪)
প্রচলিত নিয়মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ প্রতি অর্থবছরে জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদন তৈরি করে। কিন্তু এর কার্যক্রম সম্পর্কে তেমন কোনো উৎসাহ দেখা যায় না। এমনকি সমতার পথে অগ্রযাত্রার কথা বলা হলেও তা অনেক ক্ষেত্রে কার্যকর হয় না। এবার চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জেন্ডার বাজেটের বাস্তবায়ন নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। অর্থ বিভাগের দায়িত্বশীল এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সময়ের আলাকে এই তথ্য জানান। 

জানা গেছে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে বাজেটের সঙ্গে প্রথম নারীর অগ্রগতি ও অধিকার শিরোনামে প্রথম জেন্ডার বাজেট উপস্থাপন করা হয়। এরপর থেকে প্রতি অর্থবছরে একেক নামে জেন্ডার বাজেট তৈরি করা হলেও তা বাস্তবায়ন ক্ষেত্রে তেমন কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তবে এবার জেন্ডার বাজেট বাস্তবায়নের জন্য গুরুত্ব পাচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত ২০০৫-০৬ সালের বাজেটে জেন্ডার বাজেট চালু করে। এখন পর্যন্ত মোট ইইউভুক্ত ১২টি দেশ তাদের বার্ষিক বাজেটে জেন্ডার পদ্ধতি প্রবর্তন করেছে। 

চলতি অর্থবছরে উন্নয়ন ও পরিচালনা উভয় খাতে জেন্ডার সংশ্লিষ্ট বরাদ্দ গত অর্থবছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিচালনা বাজেটের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। আর উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট বাজেটের ৩৪ দশমিক ১১ শতাংশ। অর্থাৎ মোট বাজেটের পরিমাণ ২ লাখ ৭১ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। ২০০৯-১০ অর্থবছরে জেন্ডার বাজেটের জন্য বরাদ্দ ছিল ২৭ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা।

জানা গেছে, জেন্ডার বাজেটের জন্য বেশ কয়েকটি থিমেটিক এরিয়া রাখা হয়েছে। আর সে অনুযায়ী বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রথমত, নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য ৬৪০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ ও সমতা। এই ক্ষেত্রে বরাদ্দের পরিমাণ ৭৬৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা। তৃতীয়ত, কার্যকর সরকারি সেবা প্রাপ্তিতে নারীর সুযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ৪৪০ কোটি ৯ লাখ টাকা। সবশেষে রয়েছে নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কল্যাণের ক্ষেত্রে ৮৬৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফোরামে নারীদের অংশগ্রহণের জন বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৭৪ কোটি টাকা। এই খাতে বরাদ্দ আলাদা কোনো খাত থেকে ব্যয় হবে না। এটি নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক বৃদ্ধির খাত থেকে বরাদ্দ করা হবে। এই খাতের আরও অংশ হচ্ছে নারীর জনসংখ্যার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রবণতা ও দারিদ্র্য দূর করতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় চলে আসবে। 

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ খাত থেকে বরাদ্দ চলে যাবে পরিশীলিত কর্মপরিবেশ ও
নিরাপত্ত নিশ্চিত করার জন্য। এই খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। এর পাশাপাশি দুর্গম এলাকা বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারীদের জন্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

কার্যকর সরকারি সেবা প্রাপ্তিতে নারীর সুযোগ বৃদ্ধির খাত থেকে বরাদ্দ করা হবে নারীদের চলাফেরার নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে নারীর আইন ও বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা পাবে। এর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯২১ কোটি টাকা। নারীর উন্নয়নের খাত থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে দক্ষতা উন্নয়ন ও পুষ্টিমান নিশ্চিত করার কার্যক্রমে। যেখানে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১২৮ কোটি টাকা। 

জানা গেছে, জেন্ডার বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দের ক্ষেত্রে যে ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-

কৃষি, যুব ও ক্রীড়া, তথ্য ও যোগাযোগ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। 

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জেন্ডার সম্পর্কিত বাজেট ধারাবাহিকভাবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৯৩.৫ শতাংশ থাকলেও, চলতি অর্থবছরে অর্থাৎ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সামান্য কমে ৮৯.৯ শতাংশ হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬৯.৭ শতাংশ থেকে কিছুটা কমে চলতি অর্থবছরে ৬৪.১ শতাংশ হয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ধারাবাহিকভাবে ৫২ থেকে ৫৪ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগে বরাদ্দ কিছুটা কমে আবার বৃদ্ধি পাওয়ার মধ্যে রয়েছে। তবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বরাদ্দ চলতি অর্থবছরে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ৪৬.৬ শতাংশ হয়েছে।

এদিকে অর্থ বিভাগের অপর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, নারী উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এর মধ্যে ধর্মীয় কুসংস্কার, ধর্মের অপব্যবহার, মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলোতে নিজস্ব ভবন না থাকা। এ ছাড়াও ছাত্রীরা ইভটিজিংয়ের কারণে বিদ্যালয়ে আসার আগ্রহ হারিয়ে যাওয়া, পর্যাপ্ত শিক্ষা উপকরণ সরবরাহে ঘাটতি, নিয়োগকালে মফস্বল এলাকায় সবসময় যোগ্যতাসম্পন্ন নারী প্রার্থী না পাওয়া, আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসক, নাসের ঘাটতি, ইন্টারনেটের ধীরগতি ব্রডব্যান্ড স্পিড নারীদের পক্ষে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কঠিন হবে। নারীর জন্য অবমাননাকর বিষয়গুলো দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়া, মাতৃমৃত্যুর হার কমানো, সমাজে বাল্যবিয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া, কৃষি কাজে স্বল্পসুদে ঋণ পাওয়া স্বল্পতা।


সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close