ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

কাঁসা-পিতলের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন বিপুল
প্রকাশ: বুধবার, ৩১ জুলাই, ২০২৪, ১:৩৮ এএম  (ভিজিট : ১০৫৬)
এক সময়ের গ্রামবাংলার ঐতিহ্য পিতল-কাঁসা শিল্প আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ বিলুপ্তির পথে। নিত্যনতুন স্টিল, সিরামিক, মেলামাইন ও কাচ ইত্যাদি সামগ্রী সহজলভ্য হওয়ায় মানুষ পিতল-কাঁসার ব্যবহার একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে। এখন শুধু স্কুল-কলেজের ঘণ্টা হিসেবে ব্যবহার হয় কাঁসা।

কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার বিলশুকা গ্রামের মৃত বিনয় পালের ছেলে বিপুল কুমার পালের পৌর শহরের মধ্যবাজারে একটি তামা-কাঁসা ও পিতলের দোকান আছে। দোকানের নাম সুপর্ণা বাসনালয়। ভেড়ামারা শহরে কিছুদিন আগেও এ ধরনের একাধিক দোকান ছিল। বর্তমানে সুপর্ণা বাসনালয়ই একমাত্র দোকান। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি সময়ের আলোকে বলেন, ‘আমি ছোটকাল থেকেই কাঁসা-পিতলের দোকানে থেকেছি এবং আগে পলিশের কাজ করতাম। প্রায় ২০-২২ বছর আগে নিজেই দোকান দিয়েছি। আগের তুলনায় বর্তমানে বেচাকেনা কম হয়, তারপরও পুরোনো ঐতিহ্য এই ব্যবসা ছাড়তে পারি না।’
বিদেশি পর্যটকরা এক সময় কাঁসা-পিতলে বিভিন্ন দেবদেবী ও জীবজন্তুর প্রতিকৃতি এবং কারুকাজখচিত জিনিসপত্রগুলো নিয়ে যেতেন। কিন্তু এই পিতল-কাঁসা শিল্পের ঐতিহ্য আজ নানা সমস্যার কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে। এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পের সঙ্গে জড়িত শিল্পী ও ব্যবসায়ীরা বর্তমানে অভাব অনটনে দিন কাটাচ্ছেন। তাদের দেখারও কেউ নেই।

পিতল-কাঁসা শিল্পে জড়িত শিল্পীরা পৈতৃক পেশা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। কাঁসার তৈজসপত্র আমাদের ঐতিহ্য ও বাঙালি সামাজিক জীবনের অন্যতম কালচারের অংশ। বাঙালির গৃহস্থালি ও কৃষ্টির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে তামা, কাঁসা ও পিতলশিল্প। একসময় বিয়ে, খতনা, জন্মদিন, আকিকা ইত্যাদি অনুষ্ঠানে প্রধান উপহার সামগ্রী ছিল কাঁসার গ্লাস, বাটি, ফুলদানি, চামচ, রেকাব শানকে, গামলা, বেলিবগি, পানদানি, থালা, পিতলের টব, কলসি, বালতি, কড়াই, পানের থালা, ধূপদানি, তামার কলস, হাঁড়ি-পাতিল, পুষ্পপাত্র ইত্যাদি।

তামা-কাঁসার জিনিসপত্রের মধ্যে কাস্তেশ্বরী, রাজভোগী, রাধাকান্তি, বংগী, বেতমুড়ি, রাজেশ্বরী, রত্নবিলাস, ঘুটা ও কলতুলা নামে রয়েছে থালা ও গ্লাস। কৃষ্ণচূড়া, ময়ূরকণ্ঠি, ময়ূর আঁধার, মলিকা ইত্যাদি নামে পাওয়া যায় জগ। রাজভোগী, জলতরঙ্গ, রামভোগী, গোলবাটি, কাজলবাটি, ঝিনাইবাটি, ফুলতুলি বাটি ইত্যাদি নামে রয়েছে বাটি। বোয়ালমুখী, চন্দ্রমুখী, চাপিলামুখী, পঞ্চমুখী, ঝিনাইমুখী নামে রয়েছে চামচ। এ ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুই তামা কাঁসা ও পিতলের পাওয়া যায়। পূজা-অর্চনায় মঙ্গলপ্রদীপ, কোসাকুর্ষি, মঙ্গলঘট, ইত্যাদি কাঁসার বাদ্যযন্ত্র উল্লেখযোগ্য।

এক সময় ভেড়ামারায় কাঁসা ও পিতলের তৈরি তৈজসপত্রের ব্যাপক চাহিদা ছিল। কাঁসা ও পিতলের অপূর্ব শিল্পকর্মের জন্য ব্রিটিশ সরকার কাঁসাশিল্পীদের মধ্যে নাম করা অনেককেই প্রশংসা ও পদকে ভূষিত করেছেন। এদের মধ্যে প্রয়াত মধুসূদন কর্মকার, গণেশ কর্মকার, বসন্ত কর্মকার, যোগেশ কর্মকার, হারান কর্মকার উল্লেখযোগ্য।

এ শিল্পটিও কি মসলিন শিল্পের মতো বিলীন হয়ে যাবে কালের গর্ভে? নাকি পরবর্তী প্রজন্মকে আমরাও দিতে পারব একটি একান্ত আপন অনুভূতি? জন্মদিনে প্রিয়জন একটি কাঁসার গ্লাস কিংবা ফুলদানিতে নাম খোদাই করা উপহার দিলে সেটি সে আনকোরা আবেগে সযত্নে রাখবে নিজের কাছে। ব্যবহারের সময় মনে পড়বে সেই উপহারের কথা। আনমনে, আপনমনে কেউ কেউ তাকিয়ে ভাববে খোদাই করা নিজের নামে।

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close