ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

কারফিউ শিথিলে কর্মব্যস্ত ঢাকা
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, ২০২৪, ৭:৪৪ এএম  (ভিজিট : ৩৩৪)
‘মাত্র কয়েক দিন আগে চোখের সামনে যে অরাজকতা দেখেছি, তাতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। তিন দিন ঘরের বাইরে ঠিকমতো উঁকিও দিতে পারিনি। এখন প্রায় সবকিছু স্বাভাবিক লাগছে। ঘুরছি-ফিরছি, অফিস করছি, বাজারে যাচ্ছি প্রায় সবকিছু স্বাভাবিক। বিশেষ করে কারফিউ জারির পর সেনাবাহিনী মাঠে নামলে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি শান্ত-স্বাভাবিক হতে থাকে। এখন পথেঘাটে চলাচল করলেও এক ধরনের সাহস ও স্বস্তি ফিরে পেয়েছি। বর্তমানে কারফিউ শিথিলের সময়ে সার্বিক পরিস্থিতিও আগের সেই স্বাভাবিক অবস্থার মতো হয়ে আসছে।’

রাজধানীর মেরুল বাড্ডার পরিস্থিতি এবং নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে এমনই মন্তব্য করেন ওই এলাকার বাসিন্দা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নিপু বড়ুয়া। কেবল নিপু বড়ুয়া নন, রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা, কাকরাইল, ফার্মগেট, মিরপুর, উত্তরা ও যাত্রাবাড়ী এলাকা ঘুরে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপকালে সবার কাছ থেকেই প্রায় অভিন্ন মন্তব্য পাওয়া যায়।

সরেজমিন ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোমবার কারফিউ শিখিলের সময় ছিল সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। দিনের গুরুত্বপূর্ণ পুরো অংশজুড়েই কারফিউ শিথিল থাকায় রাজধানীর প্রায় সব এলাকা ছিল জনসমাগমপূর্ণ ও কর্মচঞ্চল। রাজধানীর অধিকাংশ সড়কে দিনভর ব্যাপক যানবাহনের চাপ ছিল। বিজয় সরণি, কারওয়ান বাজার, পল্টনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের সিগন্যালে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যায়।

এদিকে ব্যাংক-বীমা থেকে শুরু করে শিল্প-কারখানা, সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, শপিংমল, রেস্তোরাঁ, ফুটপাথে সব ধরনের দোকানপাট সোমবার ওই সময় খোলা ছিল। ফুটপাথের খাবারের দোকান থেকে শুরু করে পোশাকসহ বিভিন্ন পসরা নিয়ে বসেছিলেন বিক্রেতারা। এ ছাড়া টানা ৯ দিন বন্ধ থাকার পর সোমবার দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা।

সোমবার মতিঝিল-দিলকুশা ও সচিবালয় এলাকা ঘুরে আসা জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম ওইসব এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক মন্তব্য করে সময়ের আলোকে বলেন, ব্যাংকপাড়া খ্যাত মতিঝিল-দিলকুশা এলাকার জনজীবন প্রায় স্বাভাবিক। মানুষের মধ্যে ব্যাপক কর্মচঞ্চলতা দেখা যায়। ভীতি বা আতঙ্ক সে অর্থে কোথাও বোঝা যায়নি। ব্যাংকিং লেনদেন থেকে শুরু করে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয় ছিল কর্মমুখর। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় সরকারি-বেসরকারি অফিসে স্বাভাবিক কার্যক্রম চলেছে। তিনি বলেন, সহিংস তাণ্ডবের প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনী মাঠে নামার পর ব্যাংকপাড়া বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়েছে। বর্তমানে নির্বিঘ্নে-নিরাপদে তাদের কার্যক্রম পূর্ণ উদ্যোমে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে কারফিউ জারির আগের দুই-তিন দিনে রাজধানীর যে কয়েকটি এলাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে- রামপুরা, মেরুল বাড্ডা, বনশ্রী, যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, মোহাম্মদপুর, বসিলা, সায়েন্সল্যাব, মালিবাগ, মিরপুর, উত্তরা, মহাখালী, বনানী অন্যতম। এসব এলাকার পরিস্থিতিও অনেকটা শান্ত-স্বাভাবিক। 

সোমবার বিচ্ছিন্নভাবে দুয়েকটি স্থানে কোটাবিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে ঝটিকা বিক্ষোভ মিছিল বের করা হলেও পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। আগের মতো বড় ধরনের কোনো সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি। বর্তমানে দিনের বেলায় কারফিউ শিথিলের সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা রেখেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত-স্বাভাবিক হয়ে আসায় সোমবার থেকে রাজধানী ঢাকার কয়েকটি সিনেমা হলও চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্স, মতিঝিলের মধুমিতা, বিডিআর হল, মিরপুরের সনি স্কয়ার অন্যতম। এগুলোতে আপাতত প্রতিদিন দুপুরে একটি করে শো চালু রাখা হচ্ছে বলে জানা যায়।

কারফিউ চলাকালে বিগত কয়েক রাতে প্রতিবেদনের কাজে বা জরুরি প্রয়োজনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা একাধিক সাংবাদিক এ প্রতিবেদককে বলেন, কারফিউ আইন বা পরিস্থিতি সম্পর্কে তরুণরা বা অনেক সাধারণ মানুষ তেমন একটা জ্ঞান রাখেন না কিংবা জানার স্বল্পতা আছে। ফলে অনেকে না বুঝে কারফিউ চলাকালেও স্বাভাবিক বা শিথিল সময়ের মতো করে চলাচল করছেন। এ ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী কিন্তু কোথাও অমানবিক আচরণ করছে না। কাউকে হয়রানি করছে না। এ জাতীয় কোনো অভিযোগও পাওয়া যায়নি। 

চেকপোস্টেও সেনাবাহিনী অত্যন্ত পেশাদার ও শৃঙ্খলভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এর বাইরেও বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার ভিডিপির সদস্যরা তৎপর থাকায় সার্বিক পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে বলে মন্তব্য করেন তারা।

জানা যায়, কারফিউ চলাকালে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সেনাবাহিনী তল্লাশি চৌকি (চেকপোস্ট) কার্যকর রেখেছে। প্রয়োজন অনুসারে টহল এবং ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’র আওতায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী।

গত রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, জনগণের স্বার্থে ও রাষ্ট্রের যেকোনো প্রয়োজনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময় জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সংবিধান সমুন্নত রেখে প্রচলিত আইনের আওতায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, দেশবাসীর জানমালের নিরাপত্তা ও জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক বিভিন্ন বিদেশি গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। স্বার্থান্বেষী মহলের এসব বিভ্রান্তিকর তথ্য ও সংবাদে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করছে।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close