ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

হুমকির মুখে মৎস্য উৎপাদন
সিংড়ায় চায়না জালে পোনা মাছ নিধন
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, ২০২৪, ২:৩০ এএম  (ভিজিট : ৩৫০)
এখন বর্ষাকাল। মৎস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়া উপজেলায় নতুন বানের পানিতে ঝাঁকবেঁধে বিচরণ করছে অসংখ্য দেশীয় প্রজাতির মাছের পোনা। মৎস্য আইনে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মাছ ধরা নিষেধ থাকলেও এক শ্রেণির মানুষ তা মানছে না। 

নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জালে নিধন করছে নানা রকম দেশি প্রজাতির মাছের পোনা। এতে একদিকে ধ্বংস হচ্ছে মৎস্যসম্পদ ও জলজপ্রাণী, অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। এসব বন্ধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এদিকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বন্যার পানি থাকলে মাছের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে উপজেলা মৎস্য বিভাগ।

এ বিষয়ে সিংড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহাদত হোসেন বলেন, চলতি অর্থবছরের শুরুতেই স্থানীয় বাজারগুলোতে ৮টি অভিযান ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। এতে ৭৫০ মিটার চায়না দুয়ারি ও প্রায় দেড় লাখ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে পোড়ানো হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় মাছের বাজারগুলোতে প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিলে বন্যার পানি থাকলে মাছের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আমরা আশা করছি।

সিংড়া পরিবেশ ও প্রকৃতি আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু জাফর সিদ্দিকী বলেন, আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি সামাজিকভাবে জনসচেতনতা সৃষ্টি করে মাছ শিকারের সব ধরনের অবৈধ ফাঁদ বন্ধ করতে পারলে মাছ নিধন ও অন্যান্য জলজপ্রাণী ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।

মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, দেশের বৃহত্তম মিঠা পানির মাছের প্রধান উৎস চলনবিলে এখনও প্রায় ৪৪ প্রজাতির দেশি মাছ পাওয়া যায়, যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে পাশের দেশ ভারতেও রফতানি করা হয়। উপজেলা মৎস্য বিভাগ বলছে, প্রতিবছর এ উপজেলা থেকে প্রায় ২১ হাজার টন মাছ উৎপাদন করা হয়। এর মধ্যে শুধু উন্মুক্ত জলাশয় থেকে বর্ষাকালসহ বছরে মাছ আহরণ করা হয় প্রায় সাড়ে ৮ হাজার টন। বাকি মাছ পুকুর ও অন্যান্য জলাশয়ে চাষ করা হয়। উন্মুক্ত জলাশয় থেকে আহরিত মাছের শুঁটকি ও চাষকৃত সাদা পাবদা মাছ পাশের দেশ ভারতে রফতানি করা হয়, যা বৈদেশিক আয়ের একটি অন্যতম উৎস।

চলনবিলে সাধারণত শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি সময়টা দেশি প্রজাতির মাছের প্রজননকাল। আষাঢ় মাসের শুরুতেই এ বছর বিলে পানি আসায় এবং পানি বেশি থাকায় পোনা মাছের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। মৎস্য প্রজননের এই সময়ে মাছ ধরা নিষেধ থাকলেও মানছে না অনেকেই। এসব পোনা মাছ ধরার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে কিছু অসাধু মৎস্যজীবী। বানা, কারেন্ট জাল, চায়না জালসহ বিভিন্ন অবৈধ ফাঁদ পেতে অবাধে নিধন করা হচ্ছে মা ও পোনা মাছ। মাছ শিকারের এসব ফাঁদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হলো- চায়না দুয়ারি জাল। মাছের পাশাপাশি চায়না দুয়ারি জালের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না কাঁকড়া, ব্যাঙ, কুইচা, সাপসহ অধিকাংশ জলজপ্রাণী। এতে ধ্বংস হচ্ছে মৎস্য সম্পদ ও জলজপ্রাণী, হুমকিতে পড়েছে জীববৈচিত্র্য।

সরেজমিন সিংড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দেখা যায়, পৌর এলাকার উত্তর দমদমা, দক্ষিণ দমদমা, ফলিয়া, হিয়ালা বিল ও কয়া, চৌগ্রাম, ছাতারদীঘি, ডাহিয়া, কলম, তাজপুর ও শেরকোল ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় চায়না দুয়ারিসহ অবৈধ ফাঁদ পেতে পোনা মাছ নিধনের উৎসব চলছে। এসব মাছ প্রকাশ্যে বিক্রয় করছেন স্থানীয় বাজারে। 

উপজেলার ডাহিয়া বাজারের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন সকালে মাছের বাজারে চায়না দুয়ারি জালে আটকা পড়া টাকি, শোল, কৈ, বোয়াল, ভেদা, শিং, মাগুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছের পোনা বিক্রয় করছেন এক শ্রেণির অসাধু জেলে। উৎসুক হয়ে এসব মাছ কিনছেন কেউ কেউ। তারা প্রশাসনের কাছে এসব বন্ধের দাবি জানান। পৌর শহরের আশরাফুল ইসলাম নাইচ বলেন, চায়না জালে সব প্রকার মাছ ও অন্যান্য জলজপ্রাণী আটকা পড়ে যা জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close