ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

জামালপুর রেলওয়ে জংশন স্টেশন
মুখর স্টেশনে সুনসান নীরবতা, বিপর্যস্ত নিম্নআয়ের মানুষ
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, ২০২৪, ২:২১ এএম  (ভিজিট : ২৫৮)
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে গত ১৮ জুলাই থেকে বন্ধ রয়েছে ঢাকা-জামালপুর ও চট্টগ্রাম-জামালপুর রেলপথে ট্রেন চলাচল। ফলে কর্মব্যস্ত ও প্রাণচঞ্চল জামালপুর রেলওয়ে স্টেশন জংশনের মূল ফটকটি এখন তালাবদ্ধ। যাত্রীদের হইচই আর কোলাহলমুখর স্টেশন এলাকাটিতে এখন বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। এই স্টেশন এলাকাকে ঘিরে নিম্নআয়ের মানুষের আয়-রোজগারও পুরোপুরি বন্ধ। ফলে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জামালপুর রেলওয়ে জংশন স্টেশন এলাকায় ছোট-বড় সব মিলিয়ে ১৭টি দোকান আর বেশ কয়েকটি খাওয়ার হোটেল, আবাসিক হোটেল, বুকস্টল ও চায়ের দোকান রয়েছে। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় এখন এসব দোকান, হোটেল, আবাসিক হোটেলসহ সবকিছুই বন্ধ হয়ে আছে। ফলে এসব দোকান আর হোটেলে কর্মজীবী মানুষগুলো বেকার হয়ে বসে আছেন। অপরদিকে স্টেশনে কুলির কাজে নিয়োজিতরাও ট্রেন বন্ধের কারণে কর্মহীন হয়ে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর দিনযাপন করছেন। 

সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, রেলওয়ে স্টেশনের মূল ফটক বন্ধ। পুরো স্টেশনে  সুনসান নীরবতা। ফটকের পাশে ছিন্নমূল কয়েকজন নারী-পুরুষ ঘুমিয়ে আছে। পাশেই কয়েকটি শিশুরা ঘোরাঘুরি করছে। নিরাপত্তায় রয়েছে ফটকের পাশেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে রেলওয়ে পুলিশ। স্টেশন বন্ধ থাকলেও রেলওয়ে কর্মীদের নিয়মিত হাজিরা দিতে হচ্ছে। 

প্ল্যাটফর্মে অলস বসে থাকা মুচি শামছুল বলেন, স্টেশন বন্ধ, লোকজনও নেই। এখন দুপুর ১২টা বাজে ১০ টাকাও কামাই করতে পারিনি। তাই অলস বইসা আছি। প্ল্যাটফর্মেও পুলিশ বইসা থাকতে দেয় না। 

স্টেশনে কর্মরত কুলি মো. বাদল মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নিদারুণ কষ্টে দিন পার করছি। ট্রেন চলাচল সচল থাকলে প্রতিদিন যৎ সামান্য কিছু আয়-রোজগার করলেও এখন পুরো বেকার বসে আছি। 

জামালপুর রেলওয়ে স্টেশন প্ল্যাটফর্মে ফল বিক্রেতা ফরহাদ, রাসেল, ফারুক, রুবেল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। আগে ট্রেনযাত্রীদের কাছে প্রতিদিন ৪-৫ হাজার টাকার ফল বিক্রি করতাম কিন্তু গত ১৮ জুলাই থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বর্তমানে আমরা ব্যবসা গুটিয়ে বসে আছি। বাবা-মা আর বউ পোলাপান নিয়ে খেয়ে না খেয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। 

চা বিক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আগে চায়ের দোকান থেকে আমি প্রতিদিন গড়ে ৪০০-৫০০ টাকা আয় করতাম। কিন্তু বর্তমানে প্ল্যাটফর্ম বন্ধ থাকায় আমার চায়ের দোকানটিও বন্ধ। 

নিম্ন আয়ের এসব মানুষের প্রত্যাশা দ্রুতই স্বাভাবিক হবে দেশের পরিস্থিতি, আবারও ফিরে আসবে স্টেশনে যাত্রীদের আনাগোনা ও প্রাণচাঞ্চল্য। 

জামালপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী মো. গোলাম মোর্তজা বলেন, জামালপুর থেকে চট্টগ্রামগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনসহ আরও ৫ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন জামালপুর-ঢাকা রুটে নিয়মিতভাবে চলাচল করে থাকে। এ ছাড়াও একজোড়া লোকাল ও দুই জোড়া মেইল ট্রেনও এ স্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়মিতভাবে যাতায়াত করে। এসব ট্রেনের যাত্রীদের কাছে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকার টিকেট বিক্রি করা হতো। বর্তমানে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় স্টেশনের টিকেট কাউন্টারগুলোও বন্ধ রয়েছে।

জামালপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার শেখ উজ্জল মাহমুদ বলেন, ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকলেও আমাদের স্টেশনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়মিত স্টেশনে উপস্থিত থাকছেন। কবে নাগাদ ট্রেন চলাচল শুরু হবে তার সঠিক উত্তর দিতে না পারলেও ট্রেন চালানোর জন্য তারা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান।

জামালপুর রেলওয়ে থানার ওসি মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকলেও ফাঁকা স্টেশনগুলোতে আমাদের পুলিশ সদস্যদের নিয়মিত টহল অব্যাহত রয়েছে।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close