ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

স্মৃতি নিয়েই সাব্বির-রাকিবের স্বজনদের বুক ফাটা আর্তনাদ
প্রকাশ: রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০২৪, ৯:৪২ পিএম  (ভিজিট : ২৮২)
নিহত ঝিনাইদহের সাব্বির ও প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান। ছবি: সংগৃহীত

নিহত ঝিনাইদহের সাব্বির ও প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান। ছবি: সংগৃহীত

সাব্বির হোসেন (২৩) ও প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান (২৯) এর মায়েদের কান্না যেন থামছেই না। কোটা আন্দোলনের সময় ঢাকায় পৃথক স্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তারা। পেশায় দুজনাই বেসরকারি চাকরিজীবী ছিলেন। ছেলে হারানোর শোকে তাদের চোখে নিদ্রা নেই। প্রতিটা রাত যেন দুই পরিবারের কাছে অবসাদহীন অপেক্ষার প্রতিচ্ছবি। সারাক্ষণ তারা নিহত ছেলেদের স্মৃতি নিয়ে আহাজারি করছেন। ঝিনাইদহের দুই ছেলের মৃত্যুতে দুই পরিবারের স্বপ্ন ভঙ্গ।

এরমধ্যে শৈলকুপা উপজেলার মীর্জাপুর গ্রামের আমোদ আলীর ছেলে সাব্বির হোসেন গত ১৮ জুলাই ঢাকার উত্তরায় ঔষধ কিনতে বের হয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পরদিন ১৯ জুলাই সাব্বিরের লাশ সকাল ১০টার দিকে মীর্জাপুর গ্রামে দাফন করা হয়। পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে সাব্বির সংসারের হাল ধরেছিলেন। সাব্বিরের মৃত্যুতে গোটা পরিবার এখন অসহায়। সাব্বিরের চাচাতো ভাই তরিকুল জানান, উত্তরার ১৩ নং সেক্টরে অর্গান লিমিটেড কেয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন সাব্বির। ঘটনার সময় তিনি ঔষধ কিনতে বের হয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। 

তিনি আরও জানান, সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ২৩ বছরের যুবক সাব্বিরকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ তাদের পরিবার। একমাত্র বোন সুমাইয়া খাতুন জানান, তার ভাই তো কোন দল করতেন না। তিনি চাকরি করে তাদের সংসার চালাতেন। তাহলে কেন এই নিরীহ ছেলেটিকে মারা হলো? এখন কে তাদের সংসার চালাবেন? কার কাছে বিচার চাইবেন তারা? 
নিহত সাব্বিরের বাড়িতে শোকের মাতম। ছবি: সংগৃহীত

নিহত সাব্বিরের বাড়িতে শোকের মাতম। ছবি: সংগৃহীত


বাবা আমোদ আলী বলেন, আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করতেন না। বাঁচার জন্য ঢাকায় গিয়েছিলেন চাকরি করতে। সেখানেও সাব্বির কোনো মিছিল-মিটিংয়ে যায়নি। জ্বর হওয়ায় অসুস্থ শরীরে ওষুধ কিনতে বাইরে যান। সে তো আন্দোলনে ছিলেন না কেন তাকে মারা হলো? 

অপরদিকে ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়ার সাবেক বিমান বাহিনীর মাষ্টার ওয়ারেন্ট অফিসার আবু বকর সিদ্দিকীর ছেলে প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান ১৯ জুলাই শুক্রবার রাতে গুলিতে নিহত হন। রোববার ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়ায় প্রকৌশলী রাকিবুল হাসানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। রাকিব লন্ডন ভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি টাইগার রিস্ক ম্যানেজমেন্টে চাকরি করতেন। ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে মিরপুর ১০নং সেক্টর এলাকায় পথচারী এক নারীকে বাঁচাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। মিরপুর-৬ এলাকায় ডা. আজমল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

রাকিবুলের ব্যবহারীক জিনিসপত্র নিয়ে ক্যান্সার আক্রান্ত মা হাফিজা খাতুন ক্রন্দন করছেন। বাবা বিমান বাহিনীর সাবেক মাষ্টার ওয়ারেন্ট অফিসার আবু বকর সিদ্দিক বাকরুদ্ধ। বড় ভাইয়ের ছেলে ছোট শিশু রাফসান “ছোট বাবা” “ছোট বাবা” বলে সারা ঘর খুঁজে বেড়াচ্ছেন চাচাকে। মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে রাকিবের সঙ্গে ছোট ভাতিজা রাফসানেরও কথা হয়েছিল।

নিহত হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে প্রকৌশলী রাকিবুল হাসানের সঙ্গে কথা হয় মা হাফিজার। বলেছিলেন তিনি একটি গ্যারেজের মধ্যে বসে আছেন। রাত সাড়ে ৯টার মধ্যে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরও তার ছেলে চিরঘুমে শায়িত হন। 

শুক্রবার এশার নামাজ পড়ে ফোন দেন বাবা আবু বকর। কিন্তু ফোন বাজলেও আর কেউ ধরেনি। রাত ১১টার দিকে ছেলের ফোন থেকে ফোন করে কেউ একজন মৃত্যুর খবর জানান। ভোর রাতে রাকিবের বন্ধু ফয়সাল ও পিয়াস লাশ ঝিনাইদহ শহরের পৌঁছে দেন। 

মা হাফিজা বেগম জানান, তার ছোট ছেলেকে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল। মা-বাবাকে কাছে রাখার জন্য ঢাকায় বড় ফ্ল্যাট নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। 

প্রতিবেশী তাছলিম উদ্দীন জানান, নিহত রাকিব এলাকায় খুবই ভদ্র হিসেবে পরিচিত। মৃত্যুর ১০দিন পরও সরকারি ভাবে পরিবারটির কেউ খোঁজ নেননি। ছেলেটি জীবনে কোন সংগঠন করেছেন কিনা তা মহল্লাবাসীর জানা নেই। একটি ভদ্র পরিবারের সন্তান হিসেবে সবাই রাকিবকে চিনতেন। 

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  কোটা সংস্কার আন্দোলন   সহিংসতা-হতাহত-নিহত   ঝিনাইদহ   




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close